পর্ব ১৬৬

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আলোচনা করছি প্রাচীন যুগের বিষকন্যা সম্পর্কে। বিষকন্যারা কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তার যে মৃত্যু ঘটত তার বর্ণনা উল্লেখ আছে এক সংস্কৃত শ্লোকে। হন্তি স্পৃশ্যন্তি স্বেদেন গণ্যমানা চ মৈথুনে। পক্বং বৃন্তাদিব ফলং প্রশাতয়তি মেহনম। অর্থাৎ বিষকন্যা ঘর্মদ্বারা স্পর্শ করে তার সাথে মিলিত পুরুষকে নিহত করে এবং তার যৌনসঙ্গী পুরুষের জননেন্দ্রিয় ছেদন করে, যেমন পাকা ফল বৃন্তচ্যুত হয়ে পড়ে যায়। একথা উল্লেখ আছে ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী, গ্রন্থের ২৫৫ নং পৃষ্ঠায়।

চাণক্য ও রাজা ধননন্দ
স্বদেশচর্চা লোক শারদীয় ২০১৬ সংখ্যায় ড: গৌরীশঙ্কর দে বিষকন্যা নিবন্ধে আরও লিখেছেন , খ্রিস্টপূর্ব ৩২০-৩০০ অব্দের ঘটনা। মগধের সিংহাসনে আসীন নন্দবংশের শেষ রাজা ধননন্দ। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি ছিলেন – অহংকারী, লোভী, প্রজাপীড়ক, সুরা ও নারী আসক্ত। একদিন তক্ষশীলা থেকে এক মুণ্ডকেশ ব্রাহ্মণ মগধ দরবারে হাজির হন রাজ- অনুগ্রহপ্রার্থী হয়ে। কিন্তু অনুগ্রহ লাভের বদলে রাজার থেকে মিলল চরম অপমান। ব্রাহ্মণ প্রতিজ্ঞা করলেন নন্দরাজকে তিনি সমূলে ধ্বংস করবেন।সাইট ব্রাহ্মণ সুপ্রসিদ্ধ চাণক্য , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের্র গুরু ও প্রধানমন্ত্রী।
নারীলোলুপ কামুক প্রকৃতির মগধরাজ ধননন্দকে ধ্বংস করার জন্য এক পরমাসুন্দরী কন্যাকে তাঁর নিকট গোপনে পাঠিয়েছিলেন চাণক্য। মধুসদৃশ এই কন্যা ছিল আসলে এক বিষ কন্যা, যাকে ধীরে ধীরে তিনি তৈরি করেছিলেন। আগেই বলেছি, একজন অনূঢ়া বালিকাকে পর্যায়ক্রমে বিষ প্রয়োগ করে তাকে কিভাবে বিষকন্যা বানানো হত কামুক নরপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে অর্থশাস্ত্রে তার বিবরণ বর্ণনা আছে। বিষকন্যা অবশ্যই সেইসময়কার একশ্রেণীর বারাঙ্গনা। প্রভুর স্বার্থে সে বহু পুরুষকে দেহদান করতে। নারীকে গুপ্তচর বৃত্তির কাজে লাগানোর প্রধান কারণ একজন নারী তার মোহিনী জাল বিস্তার করে যত সহজে একজন পুরুষের মন হরণ করতে পারে একজন পুরুষেরই পক্ষে তা অসাধ্য। এই কারণে গুপ্ত ঘাতক রূপে পাঠানো হত নারীকে , বিশেষত বিষকন্যাকে। (চলবে)
আগামী পর্ব ২১ নভেম্বর, শুক্রবার ,২০২৫

