বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব ১৬৪

বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্র নির্ভর বিষ কন্যাদের কাসূত্র শেখানো হতো।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বিষকন্যা নির্মাণে কামশাস্ত্রের শিক্ষাদান হতো ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ চুম্বন ও দংশন, আলিঙ্গন , সঙ্গমের কৌশল। শেখানো হতো কিভাবে গোপনে অলঙ্কারের গোপন কোটরে নিতে হবে প্রাণঘাতী বিষ। বিষ মাখানো ছুরি। এমনকি বিষ তৈরির প্রণালীও। বিষকন্যাদের দৈনন্দিন খাবার ছিল কঠোর নিয়মে বাঁধা প্রতিটি খাবার ছিল লবণ বিহীন। খাদ্যের সঙ্গে পরিমাণমতো নির্দিষ্ট মাত্রায় পান করানো হতো বিষ। সময়ের সঙ্গে সেই বিষের পরিমাণ বাড়ানো হতো। বিষ তৈরি হতো ভল্লাতক, হেম বা ধুতরো, বিদায়ী প্রভৃতি গাছের ফল, ফুল বা পাতা থেকে। ধীরে ধীরে মেয়েরা পরিণত হত বিষকন্যায়। একাধারে সর্বগুণাসম্পন্না, সুন্দর স্বভাববিশিষ্টা, অসাধারণ রূপবতী হলেও সংসর্গে প্রাণবিয়োগে সিদ্ধহস্তা।

রিচার্ড এম ক্লেইন তাঁর দি গ্রীন ওয়ার্ল্ড গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন বিষকন্যাদের ধুতরো পাতার রস খাইয়ে নেশাগ্রস্থ করানোর সঙ্গে আগুনের তাপ সহনের ব্যবস্থা করা হতো। সতী দাহের বিধবাকেও খাওয়ানো হতো। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আগুনের তাপ উপলব্ধি হতো না।

ধুতরো ফল বা বীজ ব্যবহার সুপ্রাচীন। স্বামীর মৃত্যুর পর যে নারীদের সহমরণে যেতে হতো তারা যেন অবিচল চিত্তে চিতাগ্নিতে আত্মসমর্পণ করে তার জন্য ধুতরো পাতার রস পান করানো হতো। সেই রস পান করলে নাকি আগুনের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি হতো। এমনই লিখে গেছেন দি গ্রিন ওয়ার্ল্ড গ্রন্থে রিচার্ড এম ক্লেইন ১৭৯ পৃষ্ঠায়।

১৬৭৮ সালে ক্রিস্টোফার অ্যাগোস্টা ভারতে এসে বিবরণীতে লিখেছেন, এদেশে গণিকারা গ্রাহকদের যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ধুতরো ফলের বীজ বেটে খাওয়াতেন।

১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে এসেছিলেন ক্রিষ্টোভাল অ্যাকোষ্টা। তাঁর বিবরণে উল্লেখ রয়েছে ভারতের গণিকারা গ্রাহকদের যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ধুতরোর বীজ বেটে পরিমিতভাবে সেবন করাত। ইউরোপেও ক্রীতদাসদের বশীভূত করার জন্য ধুতরোর বীজ প্রয়োগ করা হতো। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো কোনো স্থানে কোনো যোদ্ধা মারা গেলে তার স্ত্রী বা পরিচারিকাদের ধুতরোর উপক্ষার প্রয়োগ করে বোকা বানিয়ে মৃত যোদ্ধার সঙ্গে সমাহিত করা হতো। এই তথ্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন ড: দুলালচন্দ্র পাল তাঁর লোকউদ্ভিদ বিদ্যা বইয়ের ৯৬/৯৭ পৃষ্ঠায়।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ১৫ নভেম্বর,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *