পর্ব :১৬০

বিষকন্যার চুম্বনে অপরাধীদের মেরে ফেলা হত পৌরাণিক কাহিনীর সূত্রে বলা হয়েছে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এই পর্বে যে বিস্ফোরক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেইটিট হলো বিষকন্যা স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকার ২০১৬ শারদ সংখ্যায় বিষকন্যা ভারতীয় কূটনীতি, ভাস্কর্য ও সাহিত্য শিরোনামে ড: গৌরীশঙ্কর দে একটি নিবন্ধে লিখেছেন,,,,,, কাম যেমন মানুষের আদিম প্রবৃত্তি, তেমনি গণিকাবৃত্তি পৃথিবীর আদিমতম জীবিকা। চতুর্বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, অষ্টাদশ পুরাণ, তন্ত্রশাস্ত্র থেকে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়।,,,,,, মহাভারতে বারবণিতা অর্থে ‘প্রকাশসর্বগণ্যা’ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এদের বেশভূষা ছিল রক্তবর্ণের। পরণে লাল মেখলা, মাথায় লাল ফুল, গলায় লাল পাথরের মালা, হাতে রক্তবালা, পায়ের নূপুর ও পরিধানের অন্যান্য অলঙ্করাদিও ছিল রক্তবর্ণের মিনা করা।

লেখকআরও লিখেছেন, মহাভারতের কালে মূলত ঘাতক ও বধ্যভূমিতে নিয়মানি মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে রক্তবর্ণ পোশাক পরানোর রীতি ছিল। অনুমান করা যায়, বিশেষ পোশাকের ( রক্তবর্ণের) অধিকারী ছিল একমাত্র ঘাতক বিষকন্যাগণ। যৌন সম্ভোগকালে ওষ্ঠ চুম্বনে অথবা দন্ত দংশনে এরা বিষ ঢেলে দিত হত্যার জন্য প্রেরিত নির্দিষ্ট ব্যক্তির শরীরের। তারপর সেই ব্যক্তি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করত, সেই সঙ্গে তার জননেন্দ্রিয়টিও কেটে ফেলত। সম্ভবত এইসব কারণে বিষকন্যাদের থেকে বিশেষত রাজপুত্র ও রাজপরিবারের অন্যদের দূরে রাখবার জন্য সাইট নির্দিষ্ট গণিকাদের লাল পোশাক পরিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
সম্ভবত ঘাতক ও বিষকন্যা নামক গণিকাদের সব থেকে বেশি আধিক্য দেখা যায় ভারতবর্ষে মৌর্য সম্রাটদের সময়ে ( খ্রি: পূ.২২০-৩০০ অব্দ)। প্রাচীন ভারতের পরাক্রান্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী কূটনীতিবিদ চাণক্য বা কৌটিল্য তাঁর সুবিখ্যাত ‘অর্থশাস্ত্র ‘ গ্রন্থের একটি বিশেষ অধ্যায়ে ‘বিষকন্যা ‘ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। বিষকন্যার একটি অধর চুম্বনে অথবা ওষ্ঠ দংশনে মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ত। কিভাবে সেই বিষবহনকারী বিষ কন্যাকে তৈরি করা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে তার আনুপার্বিক নির্দেশনা রয়েছে। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ৩১ অক্টোবর ২০২৫

