বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব: ১৬১

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বিষকন্যা নির্মাণের পদ্ধতি উল্লেখ আছে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্বে জানিয়েছি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে গণিকাদের বিষকন্যায় রূপান্তরেরপ্রণালী বর্ণিত আছে। ড: গৌরীশঙ্কর দে স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকার ২০১৬ শারদরসংখ্যায় বিষকন্যা শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন,,, নগরজীবনের নানা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি নগরজীবনে এক শ্রেণীর পরিত্যক্ত নারীর সৃষ্টি , যাঁরা অনেকসময় গণিকাবৃত্তি গ্রহণ করে। এদের সম্পর্কে বুদ্ধের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মানবিক।তিনি রাজার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে বারবণিতাদের অন্যতম আম্রপালির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। জাতক গ্রন্থে গণিকাদের নগরের অলংকারশ্বরূপা ( নগরশোভিনী) বলা হয়েছে।

মেগাস্থিনিস তাঁর বিবরণে মৌর্য সাম্রাজ্যে বিষকন্যা প্রথার উল্লেখ করেছেন।

লেখক লিখেছেন, পর্যটনসূত্রে যেসব বিদেশি পর্যটক প্রাচীন ভারতের এসেছিলেন তাঁদের বিবরণীতে গণিকাদের যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা গুরুত্ত্বপূর্ণ। মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে পাটলিপুত্রের মৌর্য রাজসভায় আগত গ্রিক রাজদূত মেগাস্থিনিসের বিবরণীতে রাজ্যশাসনের ব্যাপারে গণিকাদের গুরুত্ব বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। মেগাস্হিনিসের বিবরণ থেকে জানা যায়,রাজার পক্ষে রাজ্যের সকল বিভাগের উপর; বিশেষ করে সেনাবাহিনী উপর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল এবং এই উদ্দেশ্যে তাঁকে সকল বিভাগের উপর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হতো। এই নজরদারির কাজে,বিশেষত সেনাবাহিনীর উপরের নজরদারির কাজের গণিকাবা বিশেষভাবে সহায়তা করতে। অত্যন্ত দক্ষ এবং বিশ্বস্ত গণিকাদেরই এমন কাজে নিয়োগ করা হতো।

দূর্বল, নারীসঙ্গে আসক্ত রাজাদের বধ করতে শক্তিশালী রাজারা বিষকন্যা নিয়োগ করতেন।

বিষকন্যা প্রসঙ্গে লেখক লিখেছেন, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থখানির দ্বাদশ অধিকরণ ( আবলীয়স বা দুর্বল রাজার করণীয়) অধ্যায়ে শত্রু রাজাকে ধ্বংস করার জন্য সুন্দরী যুবতী ও নারী গুপ্তচরদের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। নারী গুপ্তচরদের অধিকাংশই হতো রূপবতী যৌবনবতী গণিকা। কামাসক্ত, ইন্দ্রিয়পরায়ণ শত্রু রাজাকে বধ করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একশ্রেণীর গণিকাকে পাঠানো হতো। এরা ছিল রূপসীর বেশে মৃত্যুদূতী।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব ,৩ নভেম্বর, সোমবার,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *