পর্ব: ১২৯

বৈদিক যুগে গণিকা কন্যা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই তার যত্ন শুরু হয় সেরা গণিকা তৈরির জন্য। এই সামাজিক প্রথা মধ্যযুগেও ছিল।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বেশ কয়েকটি পর্ব ধরে এই ধারাবাহিক নিবন্ধে আমরা তথ্য সাহায্য নিচ্ছি সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী লিখিত ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী ,,,, গ্রন্থ থেকে। আগের পর্বে জানিয়েছিলাম বৈদিক ও উত্তর বৈদিক সমাজে গণিকাদের রীতিমত অনুশীলন করতে হতো নাচ ,গান , যৌন কলা -কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে। গণিকারা নিজেদের গর্ভজাত বা দত্তক কন্যা সন্তানের যেমন শিক্ষা দিতেন তেমনই পেশাদার শিক্ষকও নিয়োগ হতো।

মধ্যযুগের নাটক মৃচ্ছকটিক অবলম্বনে উৎসব ছবিতে গণিকা বসন্তসেনার ভূমিকায় রেখা।
লেখকদ্বয় লিখেছেন, বৌদ্ধ যুগের মৃচ্ছকটিক নাটকে দেখার যায়গণিকা কন্যাদের সশৃঙ্গার নাট্য শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কুট্টনীমতে দেখা যায়, বৃদ্ধা কুট্টনী তরুণী গণিকাকে তার ব্যবসা সম্পর্কেও উপদেশ দান করছে। দশকুমার চরিতে ( উচ্ছ্বাস ২) আছে যে, গণিকার মাতা তাকে এইভাবে যত্ন করবেন ও শিক্ষা দেবেন। ভাবী গণিকা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই তার দেহসৌন্দর্য্য রক্ষা, স্বাদু ভোজ্যদ্রব্য দিয়ে তার দেহ লালন করবে, যাতে গণিকার কান্তি বল ও বুদ্ধির বৃদ্ধি হয়। ভাবী গণিকাকে উপযুক্ত ভাবে সজ্জিত না করে কোন লোককে , এমনকি পিতাকেও না দেখান; কন্যার জন্মদিন এবং উৎসবাদি জাঁকজমক ভাবে পালন। তাকে কামশাস্ত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান , নৃত্যগীত_বাদ্যে দীক্ষাদান এবং অভিনয় , চিত্রবিদ্যা, রন্ধনকার্য, গন্ধদ্রব্য তৈরী করা,মালাগান্থাই, লেখাপড়া, মার্জিত ভাষায় কথা বলা,মনোভাব প্রকাশ করা, রসিকতা করা, ব্যাকরণ , ন্যায় ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে জ্ঞান ইত্যাদি বাধ্যতামূলক ছিল।

গণিকালয়ে ছোট থেকেই পুরুষ মনোরঞ্জনের পাথু চলে ভাবী গণিকা কন্যাদের পাঠ।
ঐতিহাসিক তথ্য বলে, গণিকা যুবকদের আকাঙ্ক্ষিত হলে বহু অর্থের বিনিময়ে গণিকা কন্যাকে বিয়ে দিতে হবে, অথবা এমন লোকের কাছে তাকে দিতে হবে, যে স্বাধীন , সুন্দর, কলাবিৎ, উচ্চকূলজাত, ধনবান এবং উক্ত গণিকার কামব্যঞ্জক ক্রিয়াকলাপে যুবকটি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা এই যে, তাকে এমন লোকের হাতে সমর্পণ করতে হবে যে পরাধীন হলেও উচ্চগুণসম্পন্ন ও অতীব বুদ্ধিমান। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব, আগামী সোমবার ১৪ জুলাই,২০২৫
