বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব: ১২৬

বৈদিক মহাব্রু যজ্ঞ ছিল ছাত্রদের শিক্ষা শেষে গণিকা গমনের উৎসব।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : অথর্ব বেদে কৌশিক সূত্রে বেশ্যাবৃত্তির উল্লেখ আছে। ঋগ্বেদে ও অথর্ব বেদে দাসদাসীদের উল্লেখ আছে। ঘরোয়া কাজ ছাড়াও খাদ্যশস্যের ঝাড়াই বাছাই করতে এই দাসদাসীরা। মহাব্রু নামে এক যজ্ঞ হতো। সেই যজ্ঞ হতো গুরুগৃহে পাঠ শেষ করার পর। তখন পুরষ্কার হিসেবে ছাত্রদের গণিকা গমনের ব্যবস্থা ছিল। তার আগে এক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে ছাত্ররা গণিকাদের সঙ্গে নাচ গান ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগের প্রতিযোগিতা চালাত। প্রতীক হিসেবে একটি ষাঁড়ের সঙ্গে কয়েকটি গরুর সঙ্গম ঘটানো হত। স্ত্রীদের বহু বিবাহের অনুমতি ছিল। আর্য পুরুষ শুদ্রনারীদের রক্ষিতা রাখতেন। শতপথ ব্রাহ্মণে, ঐতরেয় ও পঞ্চবিংশতি ব্রাহ্মণে পিতার কন্যা গমনের কথা মেলে।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে অনিচ্ছুক নারীদের ভোগের অধিকার ছিল উচ্চবর্ণের।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে পুরুষ অনিচ্ছুক নারীদের যৌন সম্ভোগে বাধ্য করা যেত। কোনো অন্যায় ছিল না। আবার বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র শাস্ত্রে গণিকা গৃহে অন্ন গ্রহণে নিষেধ ছিল। তবে তা ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু কন্যাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হত। যারা খুব ঘুমোতে ভালোবাসে, খেলাধুলায় আগ্রহ থাকলে, যে চিৎকার করে, যাদের চোখ টেরা, যে নারীর বহু বান্ধবী আছে এবং যে নারীর ছোট বোন সুন্দরী ও পাড়া ঘুরে বেড়ায়।পতঞ্জলি আখ্যানে গণিকারা গাণিক্য নামের দল বেঁধে বাস করতে। রঙ্গমঞ্চে নাটক পরিবেশন করতনট পুরুষেরা। তাদের স্ত্রীরাও ছিল নটী। এই নটীরা দর্শকদের যৌন মনোরঞ্জনও করত। মহাভাষ্য গ্রন্থে বলা হয়েছে নটরা যত্রতত্র নারী সম্ভোগের করত। কুমারীর গর্ভোৎপত্তি ও ভ্রূণনাশও করত।

অযোধ্যায় রামচন্দ্রের প্রত্যাবর্তনে স্বাগত জানায় প্রথমে অযোধ্যার গণিকারা।

বৈদিক যুগের এক সময়ে আধুনিক যুগের মত ক্লাব কালচারও ছিল। সেখানে গান গাইতেন ও নৃত্য পরিবেশন করতেন তারা রাজা ও উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারীদেরও যৌন আনন্দ দিত। রামায়ণে গণিকাবৃত্তি শুধু নয়, সে যুগের রাজারা এই গণিকাদের ভোগ করতেন। রামের রাজ্য অভিষেকেও গণিকাদের অংশগ্রহণ ছিল। অযোধ্যার সেনাদলের মনোরঞ্জনের জন্য দশরথ গণিকা নিয়োগ করেছিলেন। (চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ৪ জুলাই,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *