বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব:১১৯

শিবলিঙ্গ

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : পৌরাণিক যুগে ব্রাহ্মণ ঋষিরাও ছিলেন দেবতুল্য। ফলে তাঁদের অভিশাপে শিবের অগ্নিতুল্য লিঙ্গ ধরায় পতিত হয়ে সৃষ্টি লয় করে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল সর্বত্র ঘুরতে লাগল। সব কিছু ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। ব্রহ্মা পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে সব দেবতাদের সভা ডাকলেন। জানালেন যতক্ষণ না লিঙ্গ স্থির হচ্ছে ততক্ষন ত্রিলোক বিপদে। ঋষিদের উপদেশ দেওয়া হলো গিরিজাদেবীর আরাধনা করতে। গিরিজদেবী যদি এই শিবের লিঙ্গ নিজের যোনীতেধারণ করেন তবে শিবলিঙ্গ শান্ত হবে। তাই হলো। ত্রিলোক ধ্বংস থেকে রক্ষা পেল।

ইতিহাসে বেশ্যা পেশাগত ভাবে একটি সর্বপ্রাচীন ব্যবসা বলা হয়। আর পৌরাণিক কাহিনীতে অপ্সরাদের চিহ্নিত করা হয়েছে বেশ্যা হিসেবে। বলা হয়েছে স্ববেশ্যা। শব্দটির অবমূল্যায়ন করলে হীনার্থ বোঝায়। আসলে বেশ্যা শব্দের পৌরাণিক অর্থ সর্বগুণাত্ত্বক। আবার ঘনরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যে বেশ্যারা শ্মশান কুসুমসম বর্জনীয় বলা হয়েছে। অর্থাৎ শ্মশানের গাছে যে ফুল ফোটে সেই ফুল পূজোয় নিষিদ্ধ। কিন্তু অপ্সরাদের নামগুলি দেখলে বোঝা যায় প্রতিটি নামে যৌন ইঙ্গিত আছে। রম্ভা, অর্থাৎ কলাগাছের কাণ্ডের মত যাঁর ঊরু। মেনকা শব্দের অর্থ অদ্বিতীয়া। অলম্বুষা অর্থ লজ্জিত লতা। সরসা।

দেবতা, ঋষি ও মর্ত্যের রাজাদের যৌন আনন্দ দেওয়া ছিল অপ্সরাদের কাজ।

অপ্সরাদের প্রকৃত পেশা বলা হয়েছে দেবতাদের নাচ গান পরিবেশন করা। যেমন বাইজিদের ক্ষেত্রে বলা হয়। তবে কি বাইজিদের সঙ্গে নাচ গানের অনুরাগী খদ্দেরদের শারীরিক সম্পর্ক হতো না ? একই কথা খাটে অপ্সরাদের ক্ষেত্রে। পুরাণ কাহিনীতে আমরা এও দেখেছি দেবতা বা অসুর কিম্বা ঋষিদের তপভঙ্গ করতে এই অপ্সরাদের যৌন আবেদনময় নৃত্যগীতের আদেশ করতেন দেবরাজ ইন্দ্র। তিনিও ছিলেন অতিরিক্ত সুরাপ্রেমী। আবার কামাসক্তও। অতিরিক্ত নারীলিপ্সার জন্য তাঁর নামও হয়েছিল সহস্রযোনি। অভিশাপে শরীরে ফুটে উঠেছিল সহস্র যোনির চিহ্ন। প্রয়োজনে অপ্সরাদের প্রেমিককে সন্তানও উপহার দিতে হতো। এমনকি এরজন্য স্বর্গ থেকে মর্ত্যে মানুষের সমাজেও জন্ম নিতে হলহত।এমন কথাই তো উল্লেখ আছে পুরাণে। (চলবে)

আগামী পর্ব সোমবার ৯ জুন,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *