পর্ব: ৯১

বৌদ্ধ মহাপদ্ম জাতকে ১৬ হাজার রমণী রক্ষিতার উল্লেখ আছে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বৈদিক যুগে পুরুষের বহু নারী সম্ভোগের ইতিহাস থাকলেও বেদে কোথাও উল্লেখ নেই। প্রথা বিষয়টি বৃদ্ধি পায় বেদ -উত্তর কালে। ব্রাহ্মণ্য উপনিষদে (আনুমানিক ৫০০ পূর্বাব্দে) বিষয়টি আলোচিত হয়। বুদ্ধের জন্মের আগে পঞ্চম শতকে মহাপদ্মজাতক এ,১৬ হাজার রমণী অধ্যুষিত এক রাজকীয় সেরালিয়ো’র উল্লেখ মেলে। সংখ্যার হিসেবে অবিশ্বাস্য মনে হলেও প্রাকবৌদ্ধ যুগে ইথাগারার প্রমাণ আছে। অবন্তীর রাজা প্রদ্যোৎ মগধের রাজ্য বিম্বিসার ( আনুমানিক ৫৪৬৯৪ পূর্বাব্দ) বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু ( আনুমানিক ৪৬২-৯৪ পূর্বাব্দ) এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব ( আনুমানিক ৫৬৬৪৮৬ পূর্বাব্দ) -এর সমসাময়িক রাজা উদয়নের শাসনকালে হারেম ছিল এমন উল্লেখ আছে।

রাজা উদয়ন।
রাজা উদয়ন নাকি বনভোজনে যেতেন তাঁর হারেমকে সঙ্গে নিয়ে। একবার রাজা যখন শিবিরে ঘুমিয়েছিলেন তখন হারেমের রমণীরা জানু বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পিণ্ডলা ভরদ্বাজের মুখে ধর্মকথা শুনতে। ঘুম থেকে উঠে এই খবর পেয়ে রাজা উদয়ন এতটাই ক্রুদ্ধ হন যে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পিণ্ডলাকে বন্দী করে তাঁর দেহে ছেড়ে দেন বাদামি পিঁপড়ে। পরে রাজা নিজেই এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে দীক্ষিত হন বৌদ্ধ ধর্মে। একবার নাকি বনভোজনের সময় শিবিরে আগুন লেগে সহচরী সহ রাণী সমাবতীর মৃত্যু হয়।
হারেম তৈরি হতো প্রাকৃতিক দিক থেকে উপযুক্ত স্থানে। তৈরি হতো একটি কক্ষ। সেই কক্ষের ভিতরে আরও কিছু কক্ষ। চারিদিকে পরিখা।অর্থাৎ খাল কাটা হতো।। প্রাচীর ঘেরা সেই কক্ষে থাকত একটিমাত্র দরজা। অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা থাকত। সর্প নিরোধক কিছু গাছ ও লতাপাতা দিয়ে প্রাচীর ঘিরে রাখা হতো। সাপের উপদ্রব রুখতে বিড়াল, ময়ূর, বেজি ও চিত্রল হরিণ পোষা হতো।
হারেমের ভেতরে সাপের বিষ নির্ণয় করার জন্য পোষা হতো টিয়া, সারিকা ও ভৃঙ্গরাজ পাখি। সাপের বিষের গন্ধ পেলেই এই পাখিরা চঞ্চল হয়ে উঠত। খাদ্যে বিষক্রিয়ার সন্দেহ ছিল। তাই পোষা হতো ক্রৌঁঞ্চ, জীবঙ্গ- জীবক, মত্ত কোকিল ও চক্যের পাখি। এইসব পাখিরাও বিষের অনুভব পেলে কিছু পাখি অবসন্ন হয়ে পড়ত, কোকিল মারা পড়ত। রক্তবর্ণ চোখ হয়ে যেত চকোর চোখ। আসলে সে যুগে সাপের উপদ্রব ও বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্রের ভয়ে তটস্থ থাকতেন রাজারা। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব :২৮ ফেব্রুয়ারি,২০২৫

****