পর্ব ৭৯

ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যে নারীর স্তন বর্ণনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কয়েকটি পর্ব আগে জানিয়েছিলাম, বৈদিক যুগে গণিকারা নগরের প্রান্তে থাকতেন। রাস্তায় স্ট্রিট গার্ল হিসেবে খদ্দেরদের আকর্ষণ করতে বক্ষ উন্মোচন করে থাকতেন। যুগে যুগে মেয়েদের বক্ষ সৌন্দর্যকে কিভাবে ব্যবহার হত সেটাই বলব। সাহায্য নেব রামকৃষ্ণরায়ের স্তন বিচিত্রা প্রবন্ধের। লেখক এই প্রবন্ধ লিখেছেন স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকার শারদ ২০১৬ সংখ্যায়। তিনি স্তন পুজোর কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন,,, শিবলিঙ্গ পূজার পিছনে যে বিশ্বস্ত, যুক্তি আর ভূমিকা রয়েছে _ স্তন পূজার পিছনেও সেরূপ কতকগুলি ভূমিকা আছে। স্তনের প্রথম ভূমিকা প্রেমের ক্ষেত্রে নারী সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধিতে অথবা যৌনকাম চরিতার্থ করতে। ইহুদিদের ভাষায় কাব্বালাহ্ শব্দটি নারী স্তন সৌন্দর্যের চরমপরাকাষ্ঠ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।যুগ হতে যুগু, কাল হতে কালে মানুষ ( আসলে পুরুষ ) নারী স্তনের পূজা করে আসছে এদুটির রুপবর্ণনায় , স্তুতিতে রূপমুগ্ধ প্রেমিক স্তন- মহিমা ঘোষণা করেছে , বন্দনা জানিয়েছেন আর ভক্তির মাত্রা চরমসীমায় পৌঁছে থেমেছে স্তনপূজায়।

কবি কালিদাস তাঁর শকুন্তলা মহাকাব্যে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন শকুন্তলার দেহ সৌষ্ঠব।
কবি কালিদাস তো কবেই অভিজ্ঞানম শকুন্তলম মহাকাব্যে ২৫ তম শ্লোকে শকুন্তলার উরুকে তুলনা করেছেন করাভোরুর সঙ্গে। অর্থ হাতির শুঁড়ের মত ক্ষীণ উড়ুযুক্ত মহিলা।২৬ নম্বর শ্লোকে শকুন্তলাকে নলিনীদলকল্পিতস্তানবরণ দিয়ে সম্বোধন করা হয়েছে উই। অর্থ, এমন এক নারী জারের স্তন পদ্মের পাপড়ি দিয়ে আবৃতে। তার শারীরিক চেহারা বর্ণনা করার সময় ভারতে শব্দটি ব্যবহার করা হলে এটি সম্ভবত উপেক্ষযোগ্য হবে। কিন্তু এই শ্লোকে তাকে এমন শব্দেই বর্ণনার করা হয়েছে।৪০ তম শ্লোকে দুষ্মন্ত বলছেন একান্তে পেটের চাই। অর্থাৎ শকুন্তলার প্রেমে নয়, দুষ্মন্ত কামকাতর হয়েছিলেন শকুন্তলার দেহসৌষ্ঠব দেখে। রামকৃষ্ণ রায় শুধু দেশের কথাই লেখেননি, বিদেশেরও উল্লেখ করেছেন। লেখক লিখেছেন,,,,, সালজবার্গ ও অস্ট্রিয়ার ধর্মান্ধ মানুষদের বিশ্বাস যে নবজাতক কন্যাকে ধোয়ান পৌঁছানোরজন্যে যাত্রী যে জলপাত্রটি নিয়ে আসে সেটির আকৃতির ওপর নির্ভর করে নবজাতকের স্তনাকৃতি। ছোট আকারের পাত্র হলে ভবিষ্যতে মেয়েটির স্তন দুটিও হবে ছোটো। এছাড়াও অনেক আধিভৌতিক কাহিনী এই সংস্কারগুলির সঙ্গে আছে জড়িত। ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব ১৬ জানুয়ারি, শুক্রবার

*****