শ্রীজিৎ চট্টরাজ : ঐ এল বৈশাখ, ঐ নামে গ্রীষ্ম, খাই খাই রবে যেন ভয়ে কাঁপে বিশ্ব। আম পাকে , জাম পাকে, ফল পাকে কত যে, বুদ্ধি যে পাকে কত ছেলেদের মগজে। কবি সুকুমার রায় ছেলেদের বুদ্ধি পাকা নিয়ে পক্ষপাতিত্ব কেন করেছেন সেটা জানা নেই। কিন্তু নারী পুরুষের খিদে যে নববর্ষে একটু বেশিই পাকে তাতে দ্বিমত থাকা উচিত নয়। বাংলার রাজা শশাঙ্ক না সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখের হালখাতা নববর্ষের সূচনা কে করেছিলেন সেই বিতর্কে না গিয়েও আম বাঙালি শহর কলকাতায় প্রথম কবে বাংলা নববর্ষ উৎসব হিসেবে পালন করতে শুরু করল সেসম্পর্কে ইতিহাস বলছে,উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালী বাড়ির কাছে বিখ্যাত টেনিদার পাড়ায় থাকতেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দের পয়লা বৈশাখ সংবাদ প্রবাহ কাগজের সম্পাদক, প্রকাশক ঈশ্বর গুপ্ত বাড়ির লাগোয়া নিজস্ব প্রভাকর প্রেসে প্রথম নিমন্ত্রণ জানান শহরের গণ্যমান্য বাঙালিদের। একদিকে হাটখোলা দত্ত বাড়ির বাবুরা, রাসমণির জামাই মথুরা বাবু , প্রসন্ন ঠাকুর ব্রজমোহন সিংহ, অন্যদিকে প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশ , জয়গোপাল তর্কালঙ্কার জমালেন কবির লড়াই। আপ্যায়নে ঈশ্বর গুপ্তের ভাই রাম গুপ্ত। বিবাদমান দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর আর রাধাকান্ত দেবের কোলাকুলি দিয়ে মৈত্রী। সবই ঈশ্বর গুপ্তের অবদান। শ পাঁচেক নিমন্ত্রিতদেরনিয়ে নব্য বাঙালি বাবুদের খানাপিনার সেই প্রথম আয়োজন। সময়টা ছিল বাংলার ১২৫৭।
বাবু কালচারের সেই রসে বশে থাকার উৎসব পরবর্তী সময়ে জমিদার , বুদ্ধিজীবীর উঠোন পেরিয়ে মধ্যবিত্তের বাড়িতে পৌঁছে যায়। এখন কর্পোরেট কালচারের যুগে হোটেল রেস্তোরাঁয় নববর্ষের খানাপিনার সংস্কৃতির নতুন ধারা। বাঙালি সর্বভুখ। সে উৎসবে সামিল সল্টলেকের গোল্ডেন টিউলিপ রেস্তোরাঁ।২০১৬ তে ১১ মে চারতারা এই হোটেলের উদ্বোধনে ছিলেন মহিমা চৌধুরী , স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমা ঘোষ, সাহেব ভট্টাচার্য। ইতিমধ্যেই ল্যুভর গ্রুপের এই হোটেলের রেস্তোরাঁয় বাঙালির উৎসব পার্বণে রসনাতৃপ্তির বিশেষ আয়োজন করে চলেছেন আধিকারিক সুমন্ত মাইতি।
আগামী বাংলা নববর্ষে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ উৎসবে আয়োজন হয়েছে পয়লার আড্ডা। নববর্ষের মহাভোজের এই আয়োজন অ্যান্টিপাস্টি রেস্তোরাঁয়। এছাড়াও নৈর রেস্তোরাঁয় থাকছে পয়লার টুকিটাকি। অর্থাৎ বাঙালি স্টাটারের আয়োজন। মূল আয়োজন নববর্ষের মহাভোজ ব্যুফেতে থাকছে কাঁচা আম পোড়া শরবত, ঘোল , গন্ধরাজ লেবুর বরফ চা। ভোজের শুরুয়াৎ মিলিমিশি ভাজা এঁচোরের চপ, কুমড়ো ফুলের বড়া, আলুর চপ দিয়ে। যাঁরা নিরামিষ অরুচি তাঁদের জন্য তোপসে ফ্রাই, মাছের ডিমের বড়া , সঙ্গে মোঘল খানা লাসুনি চিকেন টিক্কা, চিকেন মোমো। নিতে পারেন ভেজ মাঞ্চাউ স্যুপ। প্রধান খাবারের তালিকায় থাকছে মোচা চিংড়ি পাতুরি, স্বাদে ঠাসা ভেটকি ভাজা,আম রসে ভরা কষা মুরগি, ক্লাসিক মাটন রোগান জোস, হংকং স্ট্রিট সি ফুড বলস , ট্যাংরার হাক্কা নুডলস, পনির ইন হট গার্লিক,শুক্তনি, ভাজা মশলার আলুর দম, ধোঁকার ডালনার বাহার, গাছ পাঁঠার ঝোল ( এঁচোরের কালিয়া ), ডাল রায় বাহাদুর, মুচমুচে আলু ভাজা, ফুলকো লুচি, কড়াইশুঁটির কচুরি, বাসন্তী পোলাও। শেষ পাতে কাঁচা আমের চাটনি,আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনি, মিক্সড ফ্রুট চাটনি, দইবড়া, সেঁকা পাঁপড়, সাবু দানার পাঁপড়, আচার। এসবের প্রতি জন বাবদ মাত্র ১৪২৫ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
৯৫৫ টাকায় থাকছে প্রায় একই পদের আয়োজন। এছাড়াও থাকছে নিরামিষ আমিষ থালি। মধু রেণ সমাপয়েৎ বেকড রসগোল্লা আর মিষ্টি দই দিয়ে। যদ স্বাদের কথা বলেন এককথায় লাজবাব। বরাবরই খাদ্যের গুণমান বজায় রাখার ব্যাপারে গোল্ডেন টিউলিপের এক আলাদা সুখ্যাতি আছে। নিজে চেখে না দেখলে বোঝা সম্ভব নয় বাঙালিয়ানার শেষ কথা কাকে বলে। পরিবেশনার আন্তরিকতা আর রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জা খিদের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে হলফ করে বলা যায়।