১৫ নভেম্বর যমালয়ে জীবন্ত ভানু মর্ত্যে ফিরছেন

*

ছবিতে সুচিত্রা সেনের ভূমিকায় আছেন দর্শনা বণিক।

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: এই প্রতিবেদকের সাংবাদিকতা শুরু উল্টোরথ মাসিক পত্রিকায় ১৯৭৯ সালে। আমার অগ্রজ সাংবাদিক রবি বসুর কাছে সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছিলেন তাঁর কয়েকটি দোষের কথা। প্রথমত কাউকে টাকা ধার দিলে ফেরৎ চাইতে লজ্জা পেতেন। কোথাও নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু চাইতেন না কারও কাছে। তিন স্পষ্ট কথা বলতেন। প্রথম বয়সে ছিলেন সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহযোগী। নিজের জীবনকে বাজি রেখে রিভলবার পৌঁছে দিতেন বিপ্লবীদের কাছে। শুরু বলে মানতেন বিপ্লবী অনন্ত সিংহকে।বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছিলেন প্রিয় ছাত্র। জীবনের কোন গতিপথে এই মানুষটি হয়ে গেলেন অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায়।

যেদিন তাঁর নিথর দেহ দুপুরে পৌঁছল কেওড়াতলা শ্মশানে, পৌঁছে গিয়েছিলাম শেষ শ্রদ্ধা জানাতে । ওয়েলিংটনের অফিস থেকে সম্মোহনে যেন পৌঁছে গিয়েছিলাম। মহাশূন্যে তাঁর নশ্বর দেহ বিলীন হতেই ধীরপায়ে বেরিয়ে এসেছিলাম শ্মশান থেকে।কানে ভাসছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট ছবির গানটি। তোমাদের নতুন কুঁড়ির নতুন মেলায় রং ছড়াবে তোমরা , তখন আর গান শোনাতে আসবে না তো এই যে বুড়ো ভোমরা। এরপর কেটেছে কয়েক যুগ। ভানু ব্যানার্জির বয়স বেড়ে হয়েছে ১০২।

পরিচালক চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ আমাদের মত পুরানো বুড়ো ভোমরাদের নস্টালজিক করে তোলার জন্য। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দেওয়া কৌতুক অভিনেতা মানে ভাঁড়ামি নয়, ক্ষয়িষ্ণু সমাজ রাজনীতিতেকে তীক্ষ্ণ শ্লেষের হুল ফুটিয়ে হাস্যরসের ছদ্মবেশে যে মানুষটি সমাজসেবা করে গেছেন তাঁকে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে বর্তমানে হাজির করার জন্য। ভানু অভিনীত যমালয়ে জীবন্ত মানুষ হিট ছবিকে সামনে রেখে যমালয়ে জীবন্ত ভানু ছবিটি নির্মাণের জন্য।

বাজির জগতের সুপার স্টার বুড়িমা বাজি নির্মাতাদের প্রযোজনা সংস্থা বুড়ি মা চিত্রমের কর্ণধার সুমন কুমার দাসকে ধন্যবাদ ছবিটি সৃষ্টি করার জন্য। বাড়তি ধন্যবাদ খাঁটি বাঙালির প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিত্রম শব্দটি ব্যবহার করার জন্য।ধন্যবাদ প্রাপ্য রূপসজ্জা শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুকে। খ্যাতিমান প্রয়াত অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র বলিউড, টলিউডের শক্তিমান অভিনেতা শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়কে হুবহু ভানু বন্দোপাধ্যায়ের রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য।

রবিবার দমদম নাগেরবাজার সংলগ্ন ডায়মন্ড প্লাজা মলে সন্ধ্যায় মুক্তি পেল ছবির অনবদ্য দুটি গান। ছবিটি যেহেতু ভানু ব্যনার্জির আধারে নির্মিত তাই তাঁর অভিনীত অনবদ্য একটি গানের সিচুয়েশন ৮০ তে আসিও না ছবির গানটির অনুকরণের একটি স্বার্থক রূপ দেওয়া হয়েছে। সেই ছবিটিতে গানটির চিত্রায়িত হয়েছিল ভানু বন্দোপাধ্যায় ও রুমা গুহঠাকুরতাকে নিয়ে। এই ছবিতে শ্বাশত এবং ও অভিনেত্রী বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় বিশ্বাস। বাড়তি সংযোজন অম্বরীশ মুখোপাধ্যায়। ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনীর কথা ছিল ভানু বন্দোপাধ্যায়ের জন্মদিন ২৬ আগষ্ট। কিন্তু আর জি কর পরিস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠান বাতিল হয়। এমনকি ৩০ আগষ্ট ছিল মুক্তির দিন সেটিওর বাতিল হয়।

এই ছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিগারেট খাওয়ায় স্টাইল।

যমালয়ে জীবন্ত ভানু শেষপর্যন্ত মর্ত্যে ফিরছেন ১৫ নভেম্বর। ডায়মন্ড প্লাজায় সঙ্গীত প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, মূল চরিত্রের অভিনেতা শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন ছবির দুটি গানের শিল্পী অন্বেষা ও রাঘব চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই প্রয়াত ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধার জানিয়ে বলেন, বাংলা ছবির চিরভাস্কর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণে রাখার এর চেয়ে ভালো প্রচেষ্টার আর কিছু হতে পারে না। একই মন্তব্য করেছেন প্রয়াত ভানুর পুত্র ও কন্যা। আমাদের এখন প্রতীক্ষার দিন গোনা।

***********

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *