উত্তর পূর্ব ভারত বাংলা সাহিত্য সভার বার্ষিক সন্মেলনে ১৯ মে স্মরণ

*

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: স্প্যানিশ উপনিবেশবিরোধী ফিলিপিনো নায়ক জোশে রিজাল বলেছিলেন , যে ব্যক্তি নিজে ভাষা ভালোবাসে না , আমার কাছে সে পশু ও পচা মাছের চেয়েও নিকৃষ্ট। রবি কবি বলেছিলেন, পদ্মা নদীর তীরে বাস করে আমরা যদি টেমস নদীর স্নিগ্ধ জলরাশির অপার সৌন্দর্য অবগাহন করি তাহলে নদীবিধৌত বাংলার নদীই আমাদের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠবে। জাপান যাত্রী প্রবন্ধে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে লেখা এক পত্রে কবি লেখেন,,,,, কিছুদিন আগেও এখনকার সাধারণ জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজ থেকে অনেকখানি পিছিয়ে ছিল, অতি অল্প সময়ের মধ্যে কি করে তাঁরা তাঁদের সমস্ত কূপমন্ডুকতা , হীনম্মন্যতা , জড়ত এবং অশুভ সংস্কারকে জয় করে নিজেদের আজকের এতবড় অর্জন আর সম্মনের জায়গায় নিয়ে এসেছে। এসব দেশেও একসময় প্রকৃতির অন্ধ পূজা ছিল, বংশানুক্রমিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় অসাড়তা ছিল, শক্তিহীনতা, দৌর্বল্য ছিল। কিন্তু তাঁরা আত্মশক্তিতে জেগে ওঠে, মাতৃভাষার মাধ্যমে j জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করে নিজেদেরসহ পুরো দেশের মান্নোন্নয়ন ঘটিয়েছে।,,,,,,,,, তাই মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে নিজেকে চেনা, দেশকে ভাবা, উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা, বিজ্ঞানকে কর্মক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা, আর এর মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যায়, জনসাধারণের আর্থ সামাজিক মুক্তি আসে, সর্বোপরি ভিতরে ছাইচাপা আগুনের মত অন্তর্নিহিত শক্তি পুরোদমে জ্বলে ওঠে।

বাংলার বাইরে বাঙালি সুদুর সিংহলে পৌঁছে ছিল বিজয় সিংহের হাত ধরে। আসামের বরাক উপত্যকার শিলচরে বসবাসকারী বাঙালির কাছে যখন ভাষা সংকট প্রবল হলো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির। যেভাবে হোক নেটিভদের ভাষা সংকটে সংস্কৃতি ভুলিয়ে দাস বানাতে হবে। হাজার হাজার বাঙালি পথে নেমেছিল সেদিনও। দিনটা ছিল ১৯ মে ১৯৬১। পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন ১১ জন বাঙালি। সেই বাঙালিদের আত্মদানের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে উত্তর পূর্ব ভারত বাংলা সাহিত্য সভা দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মঞ্চ যোগেশ মাইমে আয়োজন করে বার্ষিক সম্মেলন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ত্রিপুরার আগরতলায়। কলকাতার ঠিকানা মধ্যমগ্রাম বঙ্কিম পল্লীতে। এদিনের অনুষ্ঠানে ১১ শহীদের স্মৃতিতেশ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে পরিবেশন হয় নৃত্য, গীত, আবৃত্তি। সংবর্ধনা জানানো হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের।অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সুদূর আসাম, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ থেকে আসেন মাতৃভাষাপ্রেমীরা। সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে অনুষ্ঠান চলতে থাকে দর্শক ও অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের আন্তরিকতার স্পর্শে। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়। গর্গ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ছিল আত্ম সমালোচনার সুর। সেই রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতিধ্বনি। রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।

বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত সুরকার আবৃত্তিকার, গীতিকার , শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, নেতাজির পৌত্রি তপতী ঘোষ, সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য , বরাকের বাংলা ভাষা আন্দোলনের একমাত্র নারী শহীদ কমলা ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্রী লেখিকা, মনস্তত্ত্ববিদ বর্ণালী ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ থেকে আগত সাংবাদিক ও নেতাজি গবেষক মোঃ আশরাফুল ইসলাম, চিত্র পরিচালক ও নির্মাতা মাসুদ করিম , বাংলা পক্ষের পুরোধা গর্গ চট্টোপাধ্যায় , কবি স্বপন কুমার দেবনাথ প্রমুখ। উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান সংগঠনের অনুষ্ঠান পরিকল্পক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা ও আহ্বায়ক সমিতির সম্পাদক মৃন্ময় ব্যানার্জি ও সুপ্রিয় মুখার্জি এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি বোধিসত্ত্ব তরফদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *