দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: গত ৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মানসুখ মান্ডাভিয়া লোকসভায় জানান , ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ ন্যাশনাল ক্যান্সার রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশে নথিভুক্ত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৯৭২ জন।২০২২ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৪২৭ জন। চলতি ২০২৪ e যা আরও বাড়ছ। বিশেষজ্ঞদেরঅনুমান আমাদের দেশে প্রতি ন জনে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে চলেছেন। আগামী ২০১৫ সালে ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়বে ১২.৮ শতাংশ।২০৪০ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষে।
বিজ্ঞাপন
বয়স বাড়ার সঙ্গে দেহের জটিলতা বাড়তে থাকে।একাকিত্ব ও বিষন্নতাও বেশি বয়সে গ্রাস করে। সেক্ষেত্রে ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এবং আক্রান্তদের নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়া চিকিৎসকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। কিন্তু ক্যান্সারের নেয় অ্যান্সার এই প্রবাদবাক্যটিকে মিথ বলে প্রমাণ করছেন কলকাতার অগ্রণী বেসরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল মেডিকা। ৬’ এপ্রিল ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এদিন মেডিকা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসায় সুস্থ বয়স্ক ক্যান্সারজয়ী কয়েকজনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন নতুন জীবনে ফিরে আসার জন্য। এই উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনেও আয়োজন করা হয়। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্যান্সারজয়ী রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক সুবীর গাঙ্গুলি, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের উপদেষ্টা, মেডিকা হাসপাতালের হেড ও নেক অনকোলজি সার্জন সৌরভ দত্ত ও অন্যান্য বিভাগের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসক সুবীর গাঙ্গুলি বলেন, বয়স বাড়ার ক্ষেত্রে কিছু ক্যান্সার প্রবণতা দেখা দেয়। যেমন ফুসফুস, প্রস্ট্রেট, ব্লাডার, প্যানক্রিয়াটিক, ব্রেস্ট , কলোরেকট্রাল ক্যান্সার। বয়সজনিত অন্যান্য রোগের জটিলতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে আক্রান্তের সার্বিক স্বাস্থ্যের দিকটি দেখতে হয়। রোগ নিরাময়ের সঙ্গে বাকি জীবন সুস্থ যেন থাকতে পারেন রোগীর সেদিকে নজর দিতে হয়। চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, গড় আয়ু এখন অনেক বেড়েছে। বেড়েছে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। মানুষের এক বড় অংশের ভু ধারণা বয়স্ক ব্যক্তির ক্যান্সার নিরাময় হয় না।৬০/৬৫ বছর বয়সে আক্রান্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসায় এক দশকেরও বেশি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৭৭ বছর বয়সী ক্যান্সারজয়ী তৃপ্তি চক্রবর্তী বলেন,২০২৩ আমি জানি ক্যান্সারে তৃতীয় পর্বে আছি। সি ও পি ডির রোগী। পেটে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। তিন রাউন্ডের কেমো দেওয়া হয়। ডিসেম্বর মাসে আল্ট্রা রেডিক্যাল অস্ত্রোপচার হয়। পুরো ক্যান্সার কোষ বাদ দেওয়া পরে অ্যানাসটমোসিস হয়। পেটে কেমো দেওয়া হয় যার চিকিৎসা ভাষায় হাইপেক অস্ত্রোপচার বলে। তিনমাস অন্তর চেকাপ চলে।৮০ বছর বয়সীরোগী এস কে গুপ্তা বলেন ৭২ বছর বয়সে আমার প্রস্ট্রেট স্টেজ থ্রি অ্যাডিনোকার্সিনোমা ধরা পড়ে। বুঝেছিলাম বিদায় আসন্ন। কিন্তু ডা: সুবীর গাঙ্গুলির তত্ত্বাবধানে আমার হরমোন থেরাপি শুরু।২০১৭ সালে অক্টোবরে চিকিৎসা শেষ হয়। এখন আমি পারিবারিক জীবনে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি।
কোভিডের সময় আমি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। বুকে সাহস নিয়ে মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ।৮২ বছর বয়সে আমি নতুন জীবউপভোগ করছি। বলেন সদ্য ক্যান্সার জয়ী মনোরঞ্জন মিশ্র।মেডিকা গ্রুপ অব হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অয়নাভ দেব গুপ্ত বলেন, ক্যান্সার হলে রোগীকে প্রথমে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। শরীরে সন্দেহজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা মাত্র চিকিৎসকের কাছে গেলে দ্রুত চিকিৎসায় রোগীর নিরাময়ের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। আমাদের হাসপাতালে অন্যায় বিভাগ থাকায় ক্যান্সার আক্রান্ত প্রবীণদের চিকিৎসায় বাড়তি সুবিধে আছে। আমাদের চিকিৎসায় ক্যান্সারজয়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে সব বিভাগের চিকিৎসক চিকিৎসা কর্মীদের যৌথ প্রয়াস আছে।