*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রে ৬৪ রকমের শৃঙ্গার কলা আর ৬৪ রকমের যৌন কলার বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও ২২৪ রকমের কামকৌশল,২০ রকমের ছলাকলা ,১৬ রকমের শয়নকক্ষের বর্ণনা ওর ৪ রকমের উত্তর কলার বর্ণনা দিয়ে গেছেন সেই কোন যুগে। এরপর মধ্যযুগেরমোঘলের হারেম আর হিন্দু রাজাদের অন্তঃপুর পেরিয়ে বারাঙ্গনা যখন ১৮ শতকে এসে ধনী বাবুদের খেলার পুতুল হলো তখন থেকেই বাঙালির নব্যবাবুদের বাঁধা মেয়েমানুষ সমাজের প্রতিপত্তি বাড়াল।
কালীপ্রসন্ন সিংহ হুতুম প্যাঁচার নকশাতে দুর্গাপুজোর বর্ণনায় লেখেন,বাই নাচের মজলিস চুড়োন্ত সাজানো হয়েচে, গোপাল মল্লিকের ছেলের ও রাজা বেজেন্দরের কুকুরের বের মজলিসে আর্ট কাছে কোথায় লাগে? চক্বাজারের প্যালানাথ বাবু বাই মহলের ডাইরেক্টরী সুতরাং বাই ও খ্যামটা নাচের সমুদায় ভারত তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল। সহরের নন্নি, নুন্নি, মুন্নি, খন্নি ও সন্নি প্রভৃতি ডিগ্রি মেডেল ও সার্টিফিকেটওয়ালা বড় বড় বাইয়েরা ও গোলাপ, শ্যাম, বিদু, খুদু, মণি ও চুনি প্রভৃতি খ্যামটাওয়ালীরা নিজ নিজ তোবড়া তুবড়ি সঙ্গে করে আসতে লাগলেন ,,,,,,,
নারী দেহের ব্যবসাটা ভালই বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। সেযুগে নাকি ইংরেজরা ভারতীয় অল্পবয়সী বিধবাদের ধরে এনে পত্তন করে কলকাতার দর্জিপাড়া অঞ্চলে নিষিদ্ধপল্লী। সেখানেই দ্বারকানাথ ঠাকুর কয়েকটি বাড়িতে মেয়েমানুষের ব্যবসা শুরুতে করেন। কাছেই ছিল সোনা গাজীর দরগা। এলাকা সোনা গাজী থেকে লোকমুখে হয়ে ওঠে সোনাগাছি।
১৮৫৩ সালের রিপোর্ট বলছে , শহরের ৪৪৯ টি ঠেকে আছে ১২ হাজার ৫০০ মেয়ে। বিলেত থেকে আসা ইষ্ট ইন্ডিয়ার কর্মী ও বাবুদের যৌন সুখের দায সামলাতো যে মেয়েরা তাঁরা সমাজের চোখে বারাঙ্গনা। আবার যাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে দেহের বেচে ঘরে ফিরে যেত তাঁদের পরিচয় হতো হাফ গেরস্থ। যাঁরা সোনারগাছির বাসিন্দা সেই সব মেয়েদের মা হওয়ার ইচ্ছে পূরণ করত স্বামী নামক এক পুরুষ। কিম্বা যে বাবুকে মনে ধরত তার কাছে থেকে চেয়ে নিত সন্তান। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। সমাজে ব্রাত্য সেই সব মেয়েদের ও তাঁদের বেসন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে গড়ে ওঠে সামাজিক সংগঠন দুর্বার। বছরভর দুর্বার সাইট মেয়েদের ও তাঁদের পরিবারের পাশে থেকেছে বন্ধুর মত
এবার প্রাক পুজো পর্বে বারাঙ্গনাদের শিশুদের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকারকে আর একবার সম্মান দেখালো জগন্নাথ গুপ্ত ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সাইন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল। সোমবার এই প্রান্তিকে শিশুদের নিয়ে পুজো পরিক্রমার ব্যবস্থার করেন হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা তাঁদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণকুমার গুপ্তের নেতৃত্বে পার্ক সার্কাসের উদ্দীপনী ক্লাবে থেকে দক্ষিণে কলকাতার বিখ্যাত মণ্ডপগুলি পরিদর্শন করানোর হয়। দক্ষিণ কলকাতার এক ঐতিহ্যের বারোয়ারি পুজো সমাজসেবী সংগঠনের। সেখানে প্রতিমা দর্শন করে প্রায় ১৫০ শিশু। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুপুরের খাবার সঙ্গে পুজোর উপহার।
সাংবাদিকদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কৃষ্ণকুমার গুপ্তা জানান, আগামীকাল আমার মেয়েকে নিয়ে পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরোব। তাই আজ উৎসবের সূচনা করলাম এই প্রান্তিক ব্রাত্য শিশুদের নিয়ে পুজো পরিক্রমায় বেরিয়ে বাচ্ছাদের মুখে একটু হাসি একটু তৃপ্তি আমাদের প্রেরণার যোগায়। বাংলার প্রতিটি নাগরিকের কাছে আমার অনুরোধ সাধ্যমত এই শিশুদের পাশে দাঁড়ান।এদের মধ্য থেকেই যে আগামীদিনে দেশের গৌরব প্রতিষ্ঠিত হবে না কি বলতে পারে? জগন্নাথ গুপ্তা ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল ইতিমধ্যেই দুর্বার সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রান্তিক ব্রাত্য শিশুদের স্বাস্হ্য রক্ষা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যুক্ত হতে চায়।