****
শ্রীজিৎ চট্টরাজ: শনিবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে ও মৌলালি যুব কেন্দ্রে দেশের শীর্ষ আদালতের খ্যাতিমান আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ মোদী সরকারের বন্ডের আড়ালে ঘুষ নেওয়ার তথ্য সবিস্তারে ব্যাখ্যা করলেন। এদিনের দুটি সভার উদ্যোক্তা ছিল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ ও ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশন ফর পিপলস্ রাইট নামে দুটি সংগঠন। অনুষ্ঠানের নামকরণ হয় বিপন্ন গণতন্ত্র। প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে বক্তারা ছিলেন দুজন। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ। মঞ্চে বিভিন্ন সংগঠনের আড়ালে তৃণমূলপন্থীদের ৫০ জনের ভিড় করে বসে থাকার কারণ বোধগম্য হল না। নিন্দুকদের বক্তব্য, প্রচারের আলো পেতেই এই মঞ্চ দখল। মঞ্চে দেখা মিলল গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিজ্ঞ সাংবাদিক এই প্রতিবেদকের একসময়ের সহকর্মী রন্তিদেব সেনগুপ্তকে।সূত্রে খবর এখন তৃণমূল শিবিরে আছেন।
এদিনের প্রথম বক্তা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, নির্বাচনী বন্ডের নামে যে ঘুষ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংস্থা দিয়েছে প্রায় সিংহভাগ নিয়েছে বিজেপি। বাকি অর্থ নিয়েছে বাংলার শাসক দল, তৃণমূল কংগ্রেস সহ কংগ্রেস বিজেডি সহ এমন কিছু দল যাঁরা বিভিন্ন রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় আছে।
এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল, আপনি জানালেন, বিজেপি ছাড়াও অন্য দলের সরকার আছে এমন রাজনৈতিক দলও ঘুষ পেয়েছে। কেরলের বাম সরকার কত নিয়েছে? প্রশান্তভূষণ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানালেন, একমাএ সিপিএম সরকার বন্ডের নামে এই ঘুষ প্রত্যাখ্যান শুধু নয়, আমাদের সঙ্গে নির্বাচনী বন্ডের বিরূদ্ধে মামলাও করেছে। এদিন স্পষ্টতই তিনি নির্বাচনী বন্ডের টাকা বিজেপি সহ যে সব বিভিন্ন রাজ্যের শাসক দল ঘুষ হিসেবে পেয়েছে সেই টাকা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করার দাবি জানান। তিনি আরও বলেন , সি বি আই , ইডি এই দুর্নীতিতে যুক্ত । সুতরাং এদের হাতে তদন্ত নিরপেক্ষ হবে না। ব্যাবসায়ীরা যেমন বন্ডের নামে শাসক দলকে ঘুষ দিয়েছে তখন তার চার ডবল সরকারি টেন্ডার বেআইনি ভাবে হস্তগত করে মুনাফা করেছে। নির্বাচনী বন্ডের আইন তৈরির সময় প্রয়াত বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেছিলেন, দাতা যদি গোপনে নির্বাচনী তহবিলে টাকা পায়, সে সুবিধা বিরোধী দলগুলিও পাবে। সেটা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আমার অনুমান কেন্দ্রীয় সরকারের ৫ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি কৌশল করে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
শীর্ষ আদালতের রায়ে নির্বাচনী বন্ড বেআইনি
প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তোলেন, মোদী সাফাই দিয়েছেন, বন্ড বন্ধ হলে দেশে কালো টাকা বেড়ে যাবে। তাই যদি হয় কালো টাকা তো সরকার চাইলেই আটকাতে পারেন। আটকাননি কেন? নোটবন্দী করে সমাজকে নগদহীন করতে নেমে ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নগদহীন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেন?
কলকাতায় সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ বলেন, এখনও ৪ হাজার কোটি টাকার বন্ডের টাকার হিসেব মেলে নি।
অন্যতম বক্তা সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে সেই নির্দেশ ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের পরে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই তথ্যের নিরিখে । কিন্তু ২০১৮ মার্চ থেকে ২০১৯ এর এপ্রিল পর্যন্ত বন্ডের তথ্য নেই। হিসেবে মোট বন্ডের ২৫ শতাংশের তথ্য এখনও আড়ালে। তিনি আরও বলেন, মোদীজি দাবি করেন, দেশে দুর্নীতি মুক্ত তিনি করেছেন, অথচ যে সব সংস্থা টাকা দিয়েছে তাদের অনেকের বিরূদ্ধে দুর্নীতি ও জাল ওষুধ তৈরির মামলা ছিল সেগুলি তুলে নেওয়া হয়েছে। তাহলে সেই ওয়াশিং মেশিন কনসেপ্ট । নোট দাও। সুবিধা নাও। এখনও কালো টাকা পাছার হচ্ছে । বস্তা বস্তা নগদ টেম্পো ট্রাকে যাচ্ছে।কথায় যাচ্ছে? ২৫ শতাংশের যে তথ্য এখনও সামনে আসেনি তার সংখ্যা প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।