*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস এর প্রথম অনুচ্ছেদে লেখা আছে অল হিউম্যান বিইংশ্ আর বর্ন ফ্রি অ্যান্ড ইকুয়াল ইন ডিগনিটি অ্যান্ড রাইটস। অর্থাৎ জন্মগত ভাবে সকল মানুষই স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু আজও মানবাধিকারের সংজ্ঞা কি হবে তাই নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত।সবলের ওপর দুর্বলের অধিকার অত্যাচার যেন বিবর্তনের শর্ত । অথচ সেই ৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস যিনি বীরত্বে পরিচিত ছিলেন সাইরাস দ্য গ্রেট নামে, তিনি ব্যাবিলন দখল করতে অত্যাচারিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে নিজের নিজেরদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি একটি সিলিন্ডার তৈরি করেন। যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা সহিষ্ণুতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা। সে অর্থে এটাই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ। সময়ের চাকা যত ঘুরেছে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার বিষয়টি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
ভারতের সংবিধানে ১২ থেকে ৩৫ অনুচ্ছেদে মানুষের মৌলিক অধিকারের তালিকা লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু একটা গান শুনেছিলাম কাঁচা পিরিত পাকতে দিল না। তেমনই মিষ্টি মিষ্টি করে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বললেও এদেশে গনতন্ত্রকে পাকতে দেওয়া হয়নি।১৯২১ এ মার্কিন দেশের এক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস এক বার্ষিক রিপোর্টে ভারতকে মুক্ত গণতন্ত্রের তালিকা থেকে নামিয়ে আংশিক মুক্ত গিন্টিন্ত্রের তালিকায় রাখা হয়েছে। সেই বছরই সুইডেন ভিত্তিক ভি ডেম ইনস্টিটিউট তাঁদেররিপোর্টে ভারতকে একটি নির্বাচন ভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রের মডেল। যিনি সংবিধানের অন্যতম স্রষ্টা আম্বেদকর বলে গেছেন, ভারতের গণতন্ত্র হল ভারতের মাটিতে শুধুমাত্র একটি টপ ড্রেসিং, যা মূলত অগণতান্ত্রিক। রবীন্দ্রনাথ ৮০ বছর বয়সে রবিবার ছোট গল্পে বলেছেন ধর্মই মানুষকে মানুষের সঙ্গে মিশতে দেয় না। এই মুহুর্তে দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ! মানবাধিকার সংগঠন হয়েছে তেমন বেসরকারি উদ্যোগেও মানবাধিকার সংগঠন গড়ে উঠছে। যদিও প্রবাদ আছে, অধিকন্তু না দোষায়। কিন্তু বাস্তবে মানবাধিকার সংগঠন নামের আড়ালে শহুরে সুবিধাভোগীরা করে কম্মে খাচ্ছেন। প্রশাসনের মদতে দিব্যি চলছে।
আসলি সোনা চাঁদি কে দুকান চেনার মত সঠিক বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন চিনে নেওয়ায় দায় বর্তায় জনগণেরই। তবে দেশের অন্যতম বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বহুদিন ধরে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে ।সংগঠনের প্রাণপুরুষ অভিজিৎ রায় যিনি জাতীয় পরিচালক এবং সংগঠনের মহিলা বিভাগের জাতীয় পরিচালক সায়নি ব্যানার্জি শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার শরৎ সদনে আয়োজন করেন একটি মহা পুরষ্কার অনুষ্ঠান,২০২৪। মোট ৮৭ জন ব্যক্তিত্বকে সমাজে বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক ভূমিকার জন্য পুরষ্কৃত করা হয়। পুরষ্কার বিভাগে ছিল- সেরা প্রভাবশালী পুরষ্কার, নারী গর্ব পুরষ্কার, বেঙ্গল অ্যাচিভমেন্টঅ্যাওয়ার্ড ও সমাজসাথী পুরষ্কার। প্রাপকদের মধ্যে ছিলেন ডা,: শান্তুনু রায়, ডা: প্রশান্ত চৌধুরী, ডা,: বাপ্পাদিত্য মণ্ডল, বিনোদন জগতের অনসূয়া মজুমদার , জোজো মুখার্জি, ইন্দ্রনীল মুখার্জি, বিভান ঘোষ প্রমুখ। এছাড়াও সংগঠনের বিভিন্ন রাজ্য কমিটির পক্ষে যাঁরা সঠিক দিশা স্থাপন করেছেন তাঁদেরও পুরষ্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্যোগকে সম্মান জানিয়েই বলা, নিছক কোনো বিনোদনমূলক সংগঠনের অনুষ্ঠান নয়, সেক্ষেত্রে সঞ্চালক চয়নে একটু যত্নবান হওয়া দরকার। একজন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অনুধাবন না করে সারাক্ষণ অপরিণত বাক্য প্রয়োগ করলেন। আর এক সঞ্চালক আবেগে জর্জরিত হয়ে ব্যর্থ রাবীন্দ্রিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে কৃত্রিম উপায়ে উপস্থাপনা করলেন। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় চূড়ান্ত অপেশাদারীত্ব নজরে এল। সংগঠন কর্তাদের কাছে পরামর্শ, এই ধরণের পুরষ্কার প্রদানের পাশাপাশি নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ব্রাত্য গ্রামাঞ্চলের যেসব মানুষ সাহসের সঙ্গে কাজ করছেন তাঁদের নিয়ে আসুন। এখনও দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ মানবাধিকারের প্রাথমিক সূত্রগুলি জানেন না, তাঁদের জন্য বিষয়টি নিয়ে সেমিনার বা আলোচনা ও তথ্যচিত্র পরিবেশন করার প্রয়াস রাখার ব্যবস্থা করা অনেক বেশি কার্যকর। এই সংগঠন অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় ,কিন্তু সংগঠনের প্রসার বাড়াতে সঠিক প্রচারেরও প্রয়োজন আছে বৈকি। পুরষ্কৃত কয়েকজনকে বাদ দিয়ে সমাজের ওপরতলার ফ্যাশন দুরস্ত সুখী সুখী মানুষদের এক অংশের মানবাধিকার সংগঠনের মঞ্চে পদচারণা কতটা প্রাসঙ্গিক সেটা সংগঠন কর্তারাই বলতে পারবেন।