পর্ব ৮ বাংলায় সি এ এ

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : সি এ এ বলবৎ করার মুখ্য উদ্দেশ্য জানতে একটু বাঙ্গালির ইতিহাসটা জানা দরকার।বাংলায় আদি মুহূর্তে প্রথম কোন গোষ্ঠীর মানবের পদচিহ্ন পড়েছিল তার সঠিক তথ্য ঐতিহাসিকেরা আজও দিতে পারেননি। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিকরা সকলেই একমত যে, বাংলায় নিগ্রো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়,  অ্যালপীয় আর্য ও মঙ্গোলিয়ান গোষ্ঠী প্রথম বসতি গড়ে তোলে। মনে রাখা দরকার, এই বৃহত্তর বাংলা যা পূর্ব, পশ্চিম সীমা এখনকার বিহার ও ঝাড়খণ্ড জুড়েই ছিল। সেসময় এই অঞ্চলের আলাদা কোনো নামও ছিল না। ভারতের পূর্বপ্রান্তের প্রান্তিক অঞ্চলে মঙ্গোলিয়ানদের পর আরও কিছু গোষ্ঠী ভারত তথা বাংলায় আসে।

বিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকরা বলেন,এই সমুদ্রতীরবর্তী প্রান্তিক অঞ্চল প্রথম যুগে ছিল হিংস্র  শ্বাপদ ও সরীসৃপের জঙ্গল। এঁটেল মাটি,বেলে মাটি আর পাথুরে মাটির আস্তরণের স্থলভাগ আর অসংখ্য জলাভূমি ঘেরা গভীর বনাঞ্চল ছিল মানব বসতির পক্ষে কঠিন। পরবর্তী সময়ে মোঘল আমলেও বাংলার অনেক অঞ্চল ছিল জঙ্গল। মানববসতি বিহীন। সভ্যতার ইতিহাসে তাই বাংলায় বসতি গড়ে ওঠে অনেক ধীরে।স্থলভূমি ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় হিসেবে উচ্চতা ৩০০ মিটার। বাংলায় মানব বসতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকার একমাত্র ইতিবাচক দিক ছিল  বাংলার অসংখ্য নদনদী। যা  কৃষি বিকাশের জন্য উপযুক্ত।ফলে বাংলার আদি মানবেরা এসে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলে  ধীরে ধীরে।সৃষ্টি হলো নতুন নতুন উপত্যকা।তৈরি হলো  প্রাকৃতিক বাঁধ।যা জমিকে আরও উর্বর করলো।

ঐতিহাসিকদের অধিকাংশ বলেন, আফ্রিকার আদিম পর্যায়ের শেষভাগে সেখানকার মানব প্রজাতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ায় জন্মভূমি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে নতুন বসতির খোঁজে। পৃথিবীর চিরন্তন নিয়মে অপেক্ষাকৃত শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষদের গোষ্ঠী আজ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছর আগে ইথিওপিয়া সংলগ্ন সুদান ও মিশরে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় লোহিত সাগর পেরিয়ে এশিয়ায় ইয়েমেন অঞ্চলে আসে। এদের একাংশ পৌঁছে যায় আরব উপদ্বীপ ও পারস্যে। আর এক অংশ মঙ্গোলিয়া ও চিন পেরিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আসে। সেও আজ থেকে প্রায় ৬০ হাজার বছর আগের কথা। প্রস্তর যুগে বাংলায় এসে হাজির হয় সেই নিগ্রো বা নেফ্রিটো সম্প্রদায়। যাঁদের ঐতিহাসিকরা বলেন নিগ্রোবটু। নিগ্রো শব্দের অর্থ নিকৃষ্ট কালো চামড়ার বুনো মানুষ। অবশ্য এই নামকরণ ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষদের। প্রস্তরযুগে ভারতের এই পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক অঞ্চলে এই  নিগ্রো  মানুষরা জানত না প্রথমে আগুনের ব্যবহার। ছিল গুহা ও গাছের ডালে মাচা বেঁধে জীবনধারণ হিংস্র জন্তুর হাত থেকে বাঁচতে। এভাবেই lকেটেছে প্রায় চার হাজার বছর। ১৯৫৩ সালে বর্ধমানের দুর্গাপুর অঞ্চলে to, সাঁওতাল, মুন্ডারা।

বিজ্ঞাপন


এরপর ভারতে আসে প্রটোঅস্ট্রালয়েড গোষ্ঠী। অস্ট্রিকভাষী এই গোষ্ঠী আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। সময়টা হাজার দশেক বছর আগে। অস্ট্রেলিয়া পেরিয়ে এশিয়া মাইনর হয়ে ছোটনাগপুর মালভূমিতে এরা আসেন। সেখান থেকে এক গোষ্ঠী পূর্বদিকে আসেন। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে ,অস্ট্রিক বঙ্গা গোষ্ঠী থেকে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি। বঙ্গা শব্দের অর্থ সূর্য। এরা ছিলেন সূর্যদেবের পূজারী। এক্ষেত্রেও অধিক শক্তিশালী  স্বজাতিদের   হাত থেকে বাঁচতে আসা। এদের দৌলতে বাংলার  সভ্যতা এক ধাপ এগিয়ে যায়। অস্ট্রিকরা ছিলেন নৌ_ চালনায় দক্ষ। বাংলায় নৌকা শব্দ আজ লুপ্ত হয়ে যাওয়া অস্ট্রিক ভাষা থেকে সৃষ্টি। অস্ট্রিক ভাষায় নৌ শব্দের অর্থ ছিল এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এই অস্ট্রালয়েড গোষ্ঠীদের ঐতিহাসিকরা   অস্ট্রো_ এশীয় বলেন। এদের সভ্যতা ছিল কৃষিনির্ভর। কলা, লাউ, নারকেল, বেগুন, পান, সুপুরি, আদা, হলুদ এদেরই অবদান। হাতিকেও পোষ মানানোর কৃতিত্ব ও এদের। এরাই তুলো থেকে বস্ত্র, আঁখ থেকে খয়েরী চিনি তৈরি করেছে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার জনকও এরাই। এই অস্ট্রিক সভ্যতার বড় নিদর্শন মেলে কলকাতার কাছে দমদমে। অস্ট্রিক যুগে এই অঞ্চলে ছিল জলাভূমি। ছিল না কোনও নাম। বহুযুগ পরে এমনই এক স্থান। নাম হয় দমদমা।সেখান থেকে দমদম। দমদম নাগেরবাজার অঞ্চলে পুরনো মসজিদটি নাকি মোঘল আমলের। এই মন্দিরে এসেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা।

বিজ্ঞাপন

আগামী পর্ব ৯ ও ১০ ,২০ এপ্রিল শনিবার ও ২১ এপ্রিল রবিবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *