******
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : মানুষ যবে থেকে প্রায় মানব থেকে পূর্ণ মানব হয়ে উঠল, আগুনের ব্যবহার শিখে খাদ্য পুড়িয়ে খেতে শিখল , সেদিন থেকেই শুরু রন্ধন শিল্পের পথচলা। শুধু যে উদর তৃপ্তির জন্যই রন্ধন শিল্পের বিকাশ তা নয়। মনের চাহিদার স্ফূরণে রন্ধন শিল্প হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে বৈদিক যুগ থেকে পুরাণের যুগের দেখি রন্ধনকে শিল্পহিসেবে স্বীকৃতির সাক্ষর। বনবাসের রামের হাত পুড়িয়ে রান্নার কথা থাকলেও রক্ষনশীল বন্ধুরা রে রে করে তেড়ে আসবেন। মহাভারতে ভীমের দক্ষ পাচক হওয়ার কাহিনী তো বিরাট পর্বে আছে। বনবাসে দুর্বাসা মুনির দ্রৌপদীর কাছে শাকান্ন খাওয়ার গল্পও সবার জানা।
একটা সময বাণিজ্যের হাত ধরে বণিকেরা আদান প্রদান করেছেন মশলার সম্ভার। সর্ষে থেকে কাজু,করঞ্জ থেকে নারকেল তেলের ব্যবহারও ভারতীয় রন্ধন শিল্পকে করেছে উন্নত। স্থান কাল বেদের দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল , পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্ব অঞ্চলের রাঁধার সূত্র ভিন্ন ভিন্ন। ভারতের পাচক , মোগলাই ঘরানার বাবুর্চি থেকে পাশ্চাত্যের শেফ এখন স্ট্যাটাস সিম্বল। পূর্বাঞ্চলের শেফদের নিয়ে ২০২৪ এগড়ে উঠেছে সংগঠন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া কালিনারি এসোসিয়েশন। পূর্বাঞ্চলের রন্ধন সংস্কৃতির পেশাদারী উন্নয়ন সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা , নতুন নতুন রান্নার আবিষ্কার, প্রযুক্তিগত মান উন্নয়নের সঙ্গে পরিচিতি তৈরি, রান্নার স্বাস্থ্যকর উপাদান ব্যবহার ও স্বাস্থ্য সচেতনতা, নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানে সাহায্যের প্রতিশ্রুতির স্বার্থেই সংগঠনের উন্মেষ।
মঙ্গলবার সকালে সল্টলেকের উদয়াচল ব্যাঙ্কায়েটে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া কালিনারি এসোসিয়েশনের উদ্যোগে পালিত হল প্রথম কালিনারি কাইজেন্স ২০২৪। অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি ছিলেন রাজ্য সরকারী আধিকারিক নন্দিনী চক্রবর্তী ।স্পেশালিটি রেস্টুরেন্টস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা অঞ্জন চ্যাটার্জি। প্রধান প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন শেফ বিবেক সাগর, বিজয়া ভাষ্করণ, সীতারাম প্রসাদ দেবরাজ ভৌমিক সজ্জু জ্যকারিয়া সলিল ফাডনিস প্রমুখ। বিশেষ কয়েকজন খ্যাতিমান শেফদের সম্মানিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ওড়িশা, সিকিম ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের শেফ প্রতিনিধিরা। তালিকায় ছিলেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শেফেরাও। দ্রুত বিকশিত এই সংগঠন ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ কালিনারি এসোসিয়েশনের স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনের লক্ষ্য শেফ, হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খাদ্যশিল্পের নির্মাণে পেশাদার ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একটি সংযুক্তি ঘটিয়ে পূর্বাঞ্চলের খাদ্য সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটানো। সংগঠনের সভাপতি অভিরূপ বিশ্বাস, সহ সভাপতি সুমন্ত চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ কুমার পাণ্ডে, সহ সম্পাদক সুনয়ন প্রামাণিক, কোষাধ্যক্ষ রঙ্গনাথ মুখার্জি, সহযোগী কোষাধ্যক্ষ অরবিন্দ শেঠও কার্যকরী সদস্যদের তালিকায় আছেন সঞ্জয় কাক, ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, রামচন্দর, শান্তনু, কৃতিকা ও অমিত চৌহান। শুধু শহর নয়, পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক অঞ্চলের নতুন প্রজন্মকে এই পেশাদারী কর্মে উৎসাহিত করার প্রয়াসেও ভূমিকা পালন করবে। এব্যাপারে পর্যটন বিভাগ, দক্ষতা বিভাগ ও খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিভাগ, ফেসাই, ই আই সি এ সংস্থার সহযোগিতা থাকছে। অনুষ্ঠানে এভারেস্ট মশলা , কে এম ডব্লিউ রান্না সরঞ্জাম নির্মাতাদের স্টল এই অনুষ্ঠানের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ছবি: রাজেন বিশ্বাস