পর্ব: ৫৫
রাম বনবাস পর্ব সেরে অযোধ্যায় ফিরলে প্রথম গণিকারা স্বাগত জানায়।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গত পর্বেই জানিয়েছিলাম, এই পর্বে থাকবে রামায়ণ , মহাভারতের কাহিনীতে গণিকা অস্তিত্বের কথা। ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থে সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী রামায়ণের যুগ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,,,,,,( আনুমানিক খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতক) রামায়ণের সমাজে কন্যাকে পিতামাতার দুঃখের কারণ বলে মনে করা হ’ত। সীতা I বিবাহযোগ্য হলে তাঁর পিতার তখন চিন্তা হ’ল, যেমন হয় দীন ব্যক্তির বিত্তনাশে। বলা হয়েছে যে, কন্যার পিতা দেবরাজতুল্য পদাধিকারী হলেও সদৃশাচ্চাপকৃষ্টাচ্চ প্রধর্ষণমাপ্নোতি, সমপর্যায়ের এমন কি নিম্নতর পর্যায়ের লোককর্তৃকও অপমানিত হন।
রাজা দশরথের প্রধান তিন স্ত্রী ছাড়াও ছিল ৩৫০ জন উপপত্নী।
লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন, কুমারী কন্যার কিন্তু খুব সম্মান ছিল। আসন্ন অভিষেকের জন্য রামচন্দ্র পুণ্যস্নান করেছিলেন প্রথমে কুমারীদের হাত দিয়ে ( ৬/১৩১/৩৮,৬১)। রামায়ণে ( ১/১০৫) গণিকার উল্লেখ আছে , পানভূমিরও উল্লেখ ( ৪/২৮/৩৪,৫/১১) আছে; এখানে নানারকম ব্যভিচার ও অবৈধ যৌনসম্ভোগাদি চলত। স্ত্রীলোকের অলঙ্কারের মধ্যে উল্লেখ আছে এইগুলির _ স্বদংষ্ট্রো ( ৫/১৫/৪২); এটি বোধ হয় কানের পরার জন্য কুকুরের দাঁতের মত দেখতে ছিল। নিষ্ক নামে সোনার মুদ্রা গেঁথে হারের মত পরা হ’ত। হারকেও নিষ্ক বলা হ’ত। অঙ্গদ, কেয়ূর, বলয় প্রভৃতি নানাবিধ অলঙ্কার ছিল।২/৩২/৫,১/১৫/১৭,৫/১/২৮,২/৩২/৫)। কোমরে পরবার বেষ্টনীকে বলা হ’ত দাম ( ২/৭৮/৭), কান্ধী (৩/৫২/২৩), মেথলা (১৭৮/৭), রশনা (১/৩২/৭)। মেয়েরা ঘুঙুর লাগান নূপুর পরত(৩/৫২/২৯), মালা পরত এবং পুষ্পসজ্জা প্রচলিত ছিল। রীতিমত মাল্যাপণ(২/৭১/৪১) বা মালার দোকান ছিল। উদ্বতন, প্রতিকর্ম, চূর্ণকাষায়, অঙ্গরাগ প্রভৃতি শব্দ থেকে গায়ে সুগন্ধিদ্রব্য প্রভৃতি মাখার রীতি অনুমেয় ( ২/৩৭/৩৫,২/৯১/৫৩,৬/১২১/২। অগুরু ও চন্দনের ব্যবহার ছিল। চোখে কাজল লাগান, পত্রলেখা ( ৪/৩০৫৫) বা গালে আঁকা চিত্র, বিশেষক (৭/২৬/১৭) বা রংবেরঙের টিপ, তিলক প্রভৃতি সৌন্দর্যের সহায়ক বলে গণ্য হত। পায়ে আলতা পরার রীতি ছিল ( ২/৬০১৮)।
রাবণের অপ্সরা প্রীতি কি রাবণের দুর্বলতা?
লেখকদ্বয় লিখেছেন,,, রামায়ণের সমাজে, বিশেষত আর্যেতর সম্প্রদায়ে অসংযত যৌন- সম্ভোগ প্রচলিত ছিল। রাবণের অন্দরমহলে এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে। রাবণের সীতাহরণও এই জঘন্য মনোবৃত্তির পরিচায়ক। এই সমাজে প্রমাদোদ্যানে আদিরসাত্মক ক্রীড়াও চলত। নাচ গানে স্ত্রীলোকেরা চিত্ত বিনোদন করতেন।( ৫/২০/৯-১০)। লেখকদ্বয় জানিয়েছেন আজকের যুগের মত ক্লাব কালচার তখনও ছিল। সেখানে ধনী পরিবারের নারীরা এবং পেশাগত গণিকারা রাজা- রাজড়ার আনন্দবিধান করত। বধূনাটক সংঘ(১/৫/১২) বলতে শুধু মেয়েদের জন্য থিয়েটারকে বোঝাত।
( চলবে)
আগামী পর্ব , শুক্রবার ২৫ অক্টোবর,২০২৪
*******