বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৪৮

পৌরাণিক সূত্র বলে কাশ্যপ ঋষি একটি হ্রদ থেকে খাল কেটে কাশ্মীর স্থলভূমি নির্মাণে বাসযোগ্য করে তোলেন। তাই তাঁর নাম থেকে অঞ্চলের নাম কাশ্মীর

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বৈদিক যুগ থেকে বেশ্যা কাহিনীর বর্ণনায় এই পর্বে ঘুরে আসি চলুন কাশ্মীরে। কাশ্মীরের ঐতিহাসিক তথ্য বলে , কাশ্মীরের পূর্বনাম কচ্ছমীর। পুরো অঞ্চলটিই ছিল একটি প্রকাণ্ড হ্রদ। এক বয়স্ক সাধু নাকি এই হ্রদ থেকে খাল কেটে জল ছড়িয়ে দেন পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তিনিই নাকি বারামুলার পর্বত কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন। তিনিই কাশ্যপ। এই তথ্যের সংক্ষিপ্ত রূপ বর্ণন আছে সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৬০৫-১৬২৭) এক কিতাবে। এই বক্তব্য পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বর্নিয়ের। তিনি লিখেছেন,,,, এই ঋষি বা পীরের নাম কাশ্যপ হয়েছে কাশ্যপমীর থেকে। আধুনিক নাম কাশ্মীর।

কুট্টনীমতম গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ।

গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডটাসের বিবরণে তাঁর নাম কস্পোপরাস্। কাশ্মীরের একটি অধিবাসী সাহিত্যিকের নাম দামোদর গুপ্ত । স্বদেশচর্চা লোক আদিরস একাল সেকাল শারদীয় ২০১৬ সংখ্যায় কাশ্মীর : তিন কবি ও বারাঙ্গনাবৃত্তি শীর্ষক প্রবন্ধে যুগ্ম লেখক শুভদীপ দে ও সুস্মিতা দে ( ভৌমিক) লিখেছেন,,,,,,, দামোদর গুপ্তের কুট্টনীমতম (৭৭৯-৮১৩ খ্রিস্টাব্দ) কারৎমালা প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দেশযুক্ত কাব্য যেখানে মালতী নামক একজন গণিকাকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, সে যেন ভালোবাসার ছলাকলায় এমনভাবে তার ধনী প্রেমিককে মোহিত করে যে তার প্রেমিক যেন বুঝতেই না পারে যে এসবই তার ধনসম্পত্তি হস্তগত করার জন্য। এই কাব্যে কিভাবে একজন ক্ষীণ মনোভাবাপন্ন প্রেমিককে দুর্বলতার মাধ্যমে বশ করা হয, তা অতি স্বাভাবিকতার সঙ্গে বলা হয়েছে। সমরভট্ট ও মঞ্জরী এটিও একটি প্রেমের বিবরণ যেখানে একজন নর্তকী সমরভট্টকে ধ্বংস করে দেয়।( পৃষ্ঠা ২১৩)

কথাসরিৎসাগর গ্রন্থের প্রচ্ছদ

লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন, তবে দামোদর গুপ্তের লেখায় একথা পরিষ্কার যে, ভালো গণিকার চাহিদা নবম শতকে ছিল। এর এক হাজার ও এক ষষ্ঠতম গদ্যাংশ অনুযায়ী মালতীর প্রেমিকের কাছে তার সংবাদবাহিকা শুধুমাত্র তার রূপের নয়, অঙ্কন শিল্পে, চিত্রশিল্পে এ চিকিৎসাশাস্ত্রে, রন্ধন শিল্পে, সূচি শিল্পে ও সঙ্গীত, নৃত্য ও খেলায় তার পারদর্শিতার এক বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছে। তাই অনেকে মনে না করা সত্ত্বেও একথা মনে হয় যে, কুট্টনীমতম কেবলমাত্র যৌন বিষয়ক গ্রন্থই নয়, সমাজের দর্পণও বটে।( পৃষ্ঠা ২১৩)

কাশ্মীরের লাগোয়া আফগানিস্থান। সেখানকার অন্যতম ভাষা পুস্তু।একাদশ শতকে কাশ্মীরের আর এক সাহিত্যিক ক্ষেমেন্দ্র ।তিনি পুস্ত ভাষা থেকে এক লাখ শ্লোকে বিরচিত কথাসরিৎসাগর গ্রন্থটি সর্বপ্রথম অনুবাদ করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দামোদর গুপ্তের কুট্টনীমতম নিশ্চয়ই তাঁর কোনও কোনও গ্রন্থের আদর্শ ছিল। ক্ষেমেন্দ্র’র সময়মাতৃকা একটি গণিকা সম্বধিত কাহিনী । যেখানে একজন শিক্ষিতা মায়ের কাছে গণিকারা শিক্ষালাভ করে থাকে।

(চলবে)


পরবর্তী পর্ব : আগামী সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *