নিঃশব্দে কাটল উত্তমকুমারের ৯৮ তম জন্মদিন। জানেন কি একরাত লকআপে কেন ছিলেন তিনি?

*

উত্তমকুমার হারানো সুর ছবিতে মোটরবাইক চালান নি।

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : আর জি কর কাণ্ডে দেশ উত্তাল। তাই বোধহয় হারিয়ে গেলেন উত্তমকুমার। আজ ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর ৯৮ তম জন্মদিন। দুবছর পর হবে শতবর্ষ।১৯২৬ এ জন্ম । মৃত্যুর পরও কেটে গেছে ৪৪ টা বছর। এক অজানা তথ্য জানিয়ে আমরা তাঁকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। সে ঘটনাটি ছিল নেহাতই অঘটন। একরাত উত্তমকুমারের থানার লকআপে কেটেছে । পরেরদিন সকালে এক বন্ধু আইনবিদ তাঁকে মুক্ত করে বাড়ি নিয়ে যান । তখনও অবশ্য তিনি মহানায়ক হননি। হলে হয়ত লকআপে সাধারণ দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রাত কাটাতে হত না ।কি সেই ঘটনা?

ভালো গাড়িচালক হিসেবে খুব একটা স্বীকৃতি তাঁর ছিল না। এমনকি প্রথম জীবনে যখন তিনি সপ্তপদী ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেনের বিপরীতে, তখন তিনি মোটরবাইক চালাতেও জানতেন না। অথচ এই পথ যদি না শেষ হয় ঐতিহাসিক হিট গানটি চিত্রায়িত করতে হবে। হাতিবাগানের জনৈক মোটর মেকানিক ব্যবসায়ী তারাপদ ( পদবীটা মনে পড়ছে না) ড্যামী হিসেবে বাইক চালালেন পিছনে সুচিত্রা সেনকে বসিয়ে। কিন্তু সিনেমায় ব্যাক প্রজেকশনে চলন্ত রাস্তার সিন রেখে সামনে পিছনে পাখা চালিয়ে স্টুডিওতে গানটি চিত্রায়িত হল। লং শটে শুধু তারাপদবাবু বাইক চালান। ক্লোজ শটে উত্তমকুমার স্ট্যান্ডে রাখা মোটরবাইক চালানোর অভিনয় করলেন। আজও সেই দৃশ্যগুলি বিশ্ববন্দিত। আজকের প্রজন্ম বাইক চালিয়ে এই গানটি গান।

উত্তমকুমারের পছন্দের শেষ গাড়ি সাদা অ্যাম্বাসাডর।

এহেন উত্তমকুমারের ছিল গাড়ির শখ। একটু স্বচ্ছল হতেই তিনি একটি গাড়ি কেনেন। সময়টা ১৯৫৪। ইংল্যান্ডের তৈরি অস্ট্রিন । দুই দরজার গাড়ির রং ছিল কালো। এরপর যেমন যেমন খ্যাতি বেড়েছে,তেমন তেমন রোজগারও বেড়েছে। ফলে এরপর গাড়ি কেনেন ডজ কিংস্ওয়ে। সেযুগের অভিজাত গাড়ি। গাড়ির ওপর অংশের রং ছিল ক্রিম কালারের। নিচের অংশটি গোলাপী। খুবই পছন্দের গাড়ি ছিল তাঁর। বহুবার স্ত্রী বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে লং ড্রাইভে যেতেন এই গাড়ি নিয়ে। নিজে খুব একটা গাড়ি চালাতেন না।

উত্তমকুমারের গাড়ির শখ ছিল প্রচণ্ড।

এরপর তিনি কেনেন ল্যাম্বনার গাড়ি। সেও ছিল বনেদি গাড়ি। সবুজ রঙের। এ সি কার। কলকাতার মানুষ জানতে পারেন গাড়িতে মিলছে এ সি। ষাটের দশকে এই গাড়ি হাতেগোনা কয়েকজনের ছিল। অল্পদিন পরেই কলকাতায় এল ইম্পালা। এরপর উত্তমকুমারের সংগ্রহে এল আইভরি ব্ল্যাক আমেরিকান এক গাড়ি। কিনেছিলেন মরিস অক্সফোর্ড। এরপর দেশের গাড়ি অ্যাম্বাসাডর। সেও কিনলেন । উত্তমপুত্র গৌতম জানিয়েছিলেন তিনি ক্লাচ আর ব্রেক সমন্বয় করতে পারতেন না। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হত। ব্যক্তি জীবনেও জীবনের গাড়ির ব্রেক আর্ট ক্লাচ সমন্বয় করতেও পারেননি বলে কষ্টও পেয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ থাক। তিনি লকআপে বন্দী হলেন কেন সেই প্রসঙ্গে যাই।

একবার নতুন গাড়ি কিনে সটান বাড়িতে। তারপর স্ত্রী গৌরীদেবীকে নিয়ে বেরোলেন বাবুঘাটে হাওয়া খেতে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছেন। গৌরীদেবীকে গাড়ি চালানো শেখাবার ইচ্ছে হল। ব্যাস! ধাক্কা মারলেন এক ফেরিওয়ালাকে। বরাত জোরে সামান্যই লেগেছিল ফেরিওয়ালার। কিন্তু পুলিশ ছাড়েনি। সটান থানার লকআপ। বাড়ির লোক খবর পেয়ে পরেরদিন সকালে পারিবারিক বন্ধু আইনবিদকে নিয়ে থানা থেকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এই ঘটনার পর অনেকদিন গাড়ি চালাননি উত্তমকুমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *