পর্ব: ৩৩
প্রাচীন যুগের লিঙ্গ পুজো।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: পুরোহিত ও সমাজের কেষ্ট বিষ্টুদের ভগবানের নামে নারী সম্ভোগ প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসে ভুরিভুরি। মনন মুখোপাধ্যায় স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকার আদিরস সেকাল -একাল শারদ সংখ্যা২০১৬ তে প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ও সমাজে যৌনতা শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন,,,,,,,,,, প্রাক বৈদিক যুগে ধর্ম ব্যবস্থায় লিঙ্গ – যোনির ব্যাপক উপাসনা চলত। যৌন দ্বৈতের ধারনা ছিলপ্রবল। ভূমিকর্ষণের সঙ্গে কৃষি বিকাশের সাথে সাথে মানুষ বাধ্য হয় স্থায়ী বসবাসে। ভূমি শস্য উৎপাদন করে, সেই কারণে তাঁকে মাতৃরূপে কল্পনা করা হত। পুরুষ যদি নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে সন্তান সৃষ্টি করতে পারে _ তবে মাতৃরূপী ভূমিকে কর্ষণ করে শস্য উৎপাদন করাও সম্ভব। সেই কারণে নারীরাই পুরুষের লিঙ্গ সমরূপ যষ্ঠি নিয়ে ভূমি কর্ষণ করতে থাকে। লিঙ্গ_ লাঙ্গুল _লাঙ্গল এই তিনটি শব্দ একই ধাতুরূপ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এখানে লিঙ্গ প্যাসিফ আর ভূমি অ্যাকটিভ। এই ধারণা থেকেই কৃষিভিত্তিক সভ্যতার জন্মনিল লিঙ্গ ও ভূমিরূপী যোনীর উপাসনা।
উর্বশী ও পুরূরবা।
লেখক লিখেছেন ,,,,,,,, ঋগবেদে উর্বশী ও পুরূরবার কথোপকথ থেকে জানতে পারা যায় একটি যজ্ঞে পুরূরবার সঙ্গে উর্বশীর যৌন সংসর্গের পর পুরূরবাকে যজ্ঞে বলি দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যে একটি দৃষ্টান্ত মেলে যে প্রজাপতি নিজ কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। ঐতেরেয় ব্রাহ্মণে দেখা যায় যে প্রজাপতি ঋষ্যের রূপ ধারণ করে নিজ কন্যার সঙ্গে যৌনাচারে লিপ্ত হন। ঋগবেদে পিতা রুদ্র এবং কন্যা উষার যৌনাচারের কথা উল্লেখ আছে।,,,,,,,, বাজ সেনেয়ী সংহিতায় বলা হয়েছে অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রাচীনতম পর্যায়ে রাজমহিষীকে পুরোহিতদের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে হত। পরে পুরোহিতদের বদলে অশ্ব নিয়োগ করা হয়। সামবেদের স্তবকগুলিতে যোনি বলা হত। আবার যজ্ঞবেদিকেও যোনি বলা হয়েছে। যজ্ঞের অগ্নি উৎপাদনকে যৌনক্রিয়া বলা হত।
ঈশ্বরের নামে যৌনদাসী প্রথা বাংলায় ছিল না।
বৈদিক যজ্ঞকার্যের সঙ্গে যৌনতার ছিল প্রগাঢ় সম্পর্ক। ছান্দগ্য উপনিষদে কোনও নারীকে আহ্বান করাকে উদগীথ ও নারীর ওপর শয়ন করাকে প্রতিহার বলা হত। মৈথুন সম্পাদনকে বলা হত নিধান।( পৃষ্ঠা ২১৯)। কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী , প্রাচীন ভারত গ্রন্থে লিখেছেন ,,,,,,, প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় শ্রেণীর হাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত অর্থ- সম্পদ জমেছিল। তাদের কাছে গণিকা সম্ভোগ আভিজাত্যের প্রতীক রূপে মর্যাদা পেত। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় প্রাচীন ভারতে রাজদরবারে বারাঙ্গনা পোষণ ছিল অতি সাধারণ রীতি। এইসব বারাঙ্গনাদের রাজবেশ্যা বলা হয়েছে অর্থ শাস্ত্রে। বারাঙ্গনাদের রূপ যৌবন ও সংখ্যা নিয়েরাজায় রাজায় প্রতিযোগিতা পর্যন্ত ছিল।( পৃষ্ঠা৮০, প্রকাশক, র্যাডিক্যাল ইমপ্রেশন) ।আজ পর্যন্ত যত গণিকাদের প্রসঙ্গে আলোচনা হল, কোথাও কিন্তু বাংলার প্রসঙ্গ আসেনি তবে কি বাংলায় দেবদাসী প্রথা ছিল না? বেশ কিছু বছর আগে দেশ পত্রিকায় বাংলায় দেবদাসী প্রথা কেন নেই এইশীর্ষক নিবন্ধে অ্যান্থ্রোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রধান আধিকারিক অজিত কুমার দত্ত লিখেছেন ,,,, বাংলাদেশে দেবদাসী প্রথা , মানে তথাকথিত দেবদাসী প্রথা যেটা উড়িষ্যা, তামিল নাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ বা কর্ণাটকে যেভাবে ছিল বা এখনও কিছুটা আছে , সেভাবে কখনও ছিল বলে আমার জানা নেই।( পৃষ্ঠা ২৯)
( চলবে)
পরবর্তী পর্ব : ৮ আগস্ট ,, শুক্রবার