*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলাকুশলীদের নেতাদের উস্কানিতে শনিবার সিনেমা ও সিরিয়ালের শুটিংয়ে হাজির হলেন না টলিউডের কলাকুশলীদের সংগঠনভুক্ত সদস্যরা। এমন অভিযোগ পরিচালকদের। এই পরিচালকদের অন্যতম রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। সেকথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল শাসকদলের সাংসদ দেবের।ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে। কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশনের পক্ষে ডিরেক্টরস গিল্ডের কাছে অভিযোগ জানানো হয় পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় ফেডারেশনকে গোপন করে বাংলাদেশে ছবি করছেন। ডিরেক্টরস গিল্ড থেকে ফতোয়া জারি হয়ে গেল রাহুলকে পরিচালক রাখা যাবে না। সিদ্ধান্ত হয় রাহুল সৃজনশীল প্রযোজক হতে পারেন। টলিউডের পরিচালকরা এবার প্রমাদ গুনলেন। তাঁরা বুঝলেন অন্যায় আবদার মানলে আগামীদিনে পরিচালকদের অনেকেই হুমকির মুখে পড়বেন।
কঠোরভাবে পরিচালকরা রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট বললেন, এমন ফতোয়া জারি করলে সবাই ডিরেক্টরস গিল্ড ত্যাগ করবেন।চাপে পড়ে যান ডিরেক্টরস গিল্ডের কেষ্টবিষ্টুরা। মজার কথা কলাকুশলীদের সংগঠনের নেতা রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস। এই প্রতিবেদক দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা করার সুবাদে চলচ্চিত্র জগতে কোনো ভূমিকাতেই দেখেনি এই ব্যক্তিকে। অথচ টালিগঞ্জের রাজনৈতিক প্রভাবে এখন তিনিই সর্বেসর্বা। অন্যদিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের কর্তা ব্যক্তিরাও শাসকদলের পতাকাবাহী। অন্যদিকে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যায় ফতোয়ার বিরুদ্ধে যাঁরা রুখে দাঁড়ালেন তাঁদের কয়েকজন সরাসরি শাসকদলের বিধায়ক , সাংসদ। অনেকে শাসকদলের কাছের মানুষ।
ডিরেক্টরস গিল্ডের পক্ষে পরিচালক সুদেষ্ণা রায় সাংবাদিকদের জানান , তাঁদের ভূল তথ্য দেওয়ার ভিত্তিতে তাঁরা রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন। পরে ১৬০ ডিগ্রি ঘুরে রাহুলের বিরুদ্ধে ফতোয়া তুলে নেয়। কিন্তু কলাকুশলী সংগঠন বিষয়টিকে ক্ষমতার মোহে ইগো ইস্যু করে রাহুল বয়কটের সিদ্ধান্তে অচল রইলেন। কথা ছিল শনিবার ৯ টার কল টাইমে সবাই ফ্লোরে আসবেন। কিন্তু কর্মীরা আসেননি। বিষয়টি অপমানজনক হিসেবে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পরিচালকেরা। সাক্ষর প্রতিবাদে নাম দিয়েছেন প্রায় ৭৫ জন পরিচালক। এঁদের মধ্যে যেমন আছেন রাজ চক্রবর্তী তেমন অঞ্জন দত্ত . অরিন্দম শীল, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অপরাজিতা আঢ্য, মানসী রায়চৌধুরী প্রমুখ। প্রশ্ন ওঠে ডিরেক্টরস গিল্ডের নেতারা একপক্ষের কথা শুনেই ফতোয়া জারি করেন কি করে? যদিও ভুল শুধরে বিদ্রোহী পরিচালকদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে গেল সুদেষ্ণা রায়কে। রাজ চক্রবর্তী স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দেন, রবিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে । এরমধ্যে কলাকুশলীরা যদি বাংলার সম্মান রাখতে অসহযোগ ত্যাগ করে কাজে না আসেন তাহলে সোমবার থেকে পরিচালকেরাও কাজ বন্ধ রাখবেন। পরিচালক ছাড়া কাজ হবে তো?
মনে রাখা দরকার, ফিল্মকে বলা হয় ডিরেক্টরস মিডিয়া। বাংলার প্রতিভার কদর আছে।বিদেশী বহু প্রযোজক সংস্থা পশ্চিমবাংলায় কাজ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করছিলেন।এখন যদি এই জঙ্গিপনা বন্ধ না হয় তাঁরা পালিয়ে যাবেন অন্য রাজ্যে।কি বার্তা যাবে ? প্রসেনজিৎ বলেন, বাংলা ছবির খারাপ অবস্থা কেমন ছিল আজকের প্রজন্মের জানা নেই। সেখান থেকে আজ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলা ছবি ও সিরিয়াল ওটিটি তখন এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত কাম্য নয়। যথার্থই বলেছেন প্রসেনজিৎ। অন্যদিকে কর্মী সংগঠনের নেতা স্বরূপ বিশ্বাস দোষ চাপাচ্ছেন ডিরেক্টরদের ওপর। ওনাদের বক্তব্য কলাকুশলীদের বঞ্চনা করে কাজ করতে পারবেন না রাহুল মুখার্জি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন দেশে আইন আছে।একটা সংগঠনের একতরফা ফতোয়া জারি করার অধিকার নেই। রুটিরুজির প্রশ্নে একজন পরিচালক প্রযোজক জোগাড় করেন। আর্থিক সুরাহা হয় সবার। সেখানে এমন ফতোয়া জারি বেআইনি। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি অচল অবস্থা হতে চলেছে? তবে কি মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? বাংলার চলচ্চিত্র শিল্প কি দাদাগিরির শিকার হবে? এখন অপেক্ষা সোমবার পর্যন্ত।
কলাকুশলীদের সামনে রেখে ক্ষমতা পরখ করছেন কে? সর্ষের মধ্যেই কি ভূত?