আন্তর্জাতিক সম্মান ইংরেজি কাব্যে, পেলেন কবি স্বপনকুমার নাথ

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, তুমি এখনকার ইংরেজ কবিদের যে সব নমুনা কপি করে পাঠাচ্ছ, পড়ে আমার খুব ভালো লাগচে, সংশয় ছিল আমি বুঝে দূরে পড়ে গেছি, আধুনিকদের নাগাল পাব না, এই কবিতাগুলিকে পড়ে বুঝতে পারলুম আমার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয় নি। বয়স বেড়েছে বয়সের। বিশ্ব যেমন প্রাজ্ঞ হচ্ছে তেমন বিশ্বটা এখন বিজ্ঞানের অবদানে হাতের মুঠোয় থাকা একটি গোলক। দেশ কাল স্থান পাত্র ভেদে কাব্য বা সাহিত্যচর্চার সুযোগ বেড়েছে। প্রবাদ আছে, প্রত্যেক পুরুষের সাফল্যের পিছনে স্ত্রীর ভূমিকা থাকে। সেই প্রবাদবাক্য স্বীকার করেই কবি স্বপন কুমার নাথ জানিয়েছেন, তাঁর সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ যুগিয়েছেন স্ত্রী রাখী নাথ ও পুত্র সৌরভ । পুত্রকে স্কুল থেকে করোনা বিষয়ে একটি ইংরেজি কবিতা লিখতে বলে। পুত্র সৌরভ শরণাপন্ন হয় পিতার। স্বপনবাবু লিখে দেন একটি কবিতা। কবিতাটি স্কুলে মনোনীত হয়। পুত্রের দাবি যখন লিখতে পারো তখন লেখা শুরু করো। আমার পরিচিত জন যেহেতু ইংরেজি আমার বিষয়, তাই তাঁদের প্রয়োজনে ইংরেজি চিঠি বা কোনো লেখা লেখান। স্ত্রী রাখি বললেন, অন্যের হয়ে যখন লিখছ, নিজের জন্যও লেখো। সেই লেখার শুরু। তবে লেখার অনুপ্রেরণায় আরও দুজনের ভূমিকা আছে। প্রিয় বন্ধু মনোজিত রায় ও প্রিয় বান্ধবী প্রীতি ঘোষ। ছাত্রজীবনে ইংরেজি ছিল স্বপনবাবুর বিষয় । কলেজে অধ্যাপক রণজিৎ সরকার ক্লাসে টমাস হার্ডির আই রিমেম্বার রিমেম্বার কবিতাটি সুন্দর করে পড়াতেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। কবি টমাস হার্ডি যদি শুনতেন তিনিও মুগ্ধ হয়ে যেতেন।

বেথুয়াডহরি জে সি এম স্কুল পেরিয়ে কলকাতায় সিটি কলেজ। রবীন্দ্রভারতীতে পরিচয় দুই অধ্যাপকের সঙ্গে। ধৃতিকান্ত রায়চৌধুরী ও মধুমন্তী মৈত্র। তাঁদের কাছেই অনুপ্রাণিত হয়ে ইংরেজি কবিতার প্রতি অনুরাগ। প্রথমে খেলার ছলে ফেসবুকের পাতায় কবিতা লেখা। প্রচুর প্রশংসা পেয়ে লেখায় উৎসাহ বাড়ে । স্বপনবাবুর উপলব্ধি কবিতা যেন সংগীত। কিটস্ বলেছিলেন, কবিতার মৃত্যু নেই। নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক সাহিত্যচর্চায় কবিতার এক আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে বলেই ভলতেয়ার বলেছিলেন, কাব্যের একটি গুন আছে, যা কম লোকই অস্বীকার করবে; কাব্য গদ্যের তুলনায় অনেক অল্প কথায় অনেক বেশি ভাব প্রকাশ করে থাকে। একদিকে দিল্লি থেকে পি এইচ ডি, আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে ডিলিট। অন্যদিকে কাব্যচর্চা । পিতা রাসবিহারী নাথ ছিলেন ইংরেজির জনপ্রিয় শিক্ষক। জিনগত সাহচর্য স্বপন কুমার নাথকে ইংরেজি কাব্যচর্চায় বাড়তি ইন্ধন হয়ত যুগিয়েছে। এই মুহুর্তে তিনটি কাব্যগ্রন্থ তিনি নির্মাণ করেছেন। ইতিমধ্যেই যা দেশবিদেশে সমাদৃত হয়েছে।

সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ফায়ার অ্যান্ড অ্যাসপিরেশন। বাংলায় অনুবাদ করলে হয় , আগুন এবং আকাঙ্খা। কবি দ্বিভাষিক কবিতায় সিদ্ধহস্ত। বাংলাতেও আছে তাঁর দুটি কবিতার বই। আছে একটি বাংলা গল্পের বই। শিল্পের জন্য শিল্প এই অতীন্দ্রিয় চেতনার সাহিত্য বা কাব্যচর্চায় স্বপন কুমার নাথ বিশ্বাসী নন। পেশাগত ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যেমন তিনি নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করেন, তেমন হাতের কলমে শব্দ চয়ন ও বপন করে সাহিত্যের জগতে বাস্তববাদী চর্চা তাঁকে তাড়িত করে ।আর্থ সামাজিক পরিমণ্ডলের ছোট ছোট ঘটনাগুলি দিয়ে স্বপন কুমার নাথ অক্ষরের কোলাজ সাজান মনের মাধুরী মিশিয়ে। তাই হয়ত বিদেশে শিক্ষাক্রমে স্বপন কুমার নাথের দুটি কবিতা পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড বুকস অফ লন্ডন স্বীকৃতি দিয়েছে কবির সৃষ্টিকে। অরেঞ্জ বুকস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত ৮৬ টি কবিতার সংকলন ফায়ার অ্যান্ড অ্যাসপিরেশন বিদেশের মত এদেশেও কবিতাপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *