রবীন্দ্রনাথকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল?

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : জাপানের সংস্কৃতির পাশাপাশি সেখানকার মানুষদেরও শ্রদ্ধা করতেন রবীন্দ্রনাথ।সেকথা বার বার স্বীকার করেছেন জাপান ভ্রমণ করে আসার পর। কিন্তু চিন আক্রমন করে সেখানকার তিন লাখ মানুষকে হত্যা করার জন্য জাপানের শাসকদের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ বলে নিন্দাও করেছেন। ফলে ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসীদের একাংশ রবীন্দ্রনাথকে নাকি আমেরিকায় হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।এমন এক তথ্য আছে। কি সেই ঘটনা?

আমেরিকায় কবি যান ১৯১৬সালে ১৮সেপ্টেম্বর।আমেরিকায় শিখ পাঞ্জাবীদের গদর পার্টির নেতৃত্বে একদল স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ সংগঠন গড়ে তুলছেন।আমেরিকার সানফ্রানসিসকোতে গদর পার্টির সংগঠন কাজ করছিল বিশ্ব রাজনীতিতে তখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধ লেগে গেছে। এই বিপ্লবীরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছিলেন।জাপানের সাহায্য নিয়ে ইংরেজ খতমের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।রবীন্দ্রনাথ সবার আগে ছিলেন মানবতাবাদী। এমনই বিশ্বাস অনেকের। যদিও তাই নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। সেকথায় পরে আসছি।রাজনীতির মারপ্যাঁচে অতটা অভ্যস্ত ছিলেন না।স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকাতেও জাপানের হিংস্রতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। রবীন্দ্রনাথ ভারতে তুল্যমূল্য বিচারে মোঘল সহ অন্য শাসক গোষ্ঠীর চেয়ে বৃটিশ শাসনকে উন্নত বলায় বেজায় চটে গদর পার্টি। স্থানীয় এক পত্রিকায় গদর দলের নেতা রামচন্দ্র লেখেন, রবীন্দ্রনাথ আমেরিকায় নান্দনিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসেননি।এসেছেন বিপ্লবীদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে। ৫ অক্টোবর অধ্যাপক বিষেন সিং মাটটু ও তাঁর দুই সঙ্গী উমরাও সিং এবং পরদিন সিং রবীন্দ্রনাথকে এক সভায় ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানতে কবির প্যালেস হোটেলে আসেন।হোটেলের গেটে তাঁদের বাধা দেয় গদর পার্টির দুই সদস্য একহাত কাটা জীবন সিং ও এইচ সিং হাতেশি।হয় কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি। উমরাও সিংয়ের পাগড়ী ফেলে দেওয়া হয়।অনুমান,এঁরা এই জঙ্গি গদর পার্টির আক্রমণ কারীদের না আটকালে এরা হয়তো কবিকে আক্রমণ করতে পারতো। পুলিস দুজনকে গ্রেপ্তার করে । গদর পার্টির নেতা রামচন্দ্র যদিও জানিয়েছিলেন,কবিকে আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি যে সামান্য নয় তা প্রকাশ্যে আসে নিউ ইয়র্ক ট্রিবিউন এর প্রতিবেদন।সেখানে বলা হয় কবির হোটেলে আক্রমণকারীদের মধ্যে ছিলেন একজন ।যার নাম চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী।যিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন রামচন্দ্রের সঙ্গে।আমেরিকার পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে চিনের সহযোগিতায় ভারত জুড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ দখলের পরিকল্পনা চলছে। সেই পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে যেমন আছেন গদর পার্টির রামচন্দ্র,তেমন আছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি,প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কাউন্ট ওকামা।বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ আছে রবীন্দ্রনাথের।

ইতিমধ্যে শোনা যায়, এই মামলায় রবীন্দ্রনাথকে জড়িয়ে দেন সেই চন্দ্রকান্ত। পরের বছর হলো এই মামলার রায়ের দিন।সেদিন আদালতের বাইরে পায়চারি করছিলেন রামচন্দ্র । তখন জনৈক রাম সিং গুলি করে মারে রামচন্দ্রকে।পরবর্তী সময়ে বৃটিশ রাজের সবুজ সঙ্কেতে আমেরিকা কবিকে সব অভিযোগ থেকে মুক্ত করেন। এরপর কবি আমেরিকা যান ১৯২০সালে ।

আমেরিকার প্যালেস হোটেলে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এখানেই তাঁর ওপর আক্রমণ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *