শ্রীজিৎ চট্টরাজ : বিনোদ ঘোষাল এখন বাংলা সাহিত্যে একজন চর্চিত ব্যাক্তিত্ব। তাঁর জীবনের গতি বহু পেশার অভিজ্ঞতা পেরিয়ে সাহিত্যেই থিতু হয়েছে। মাঝরাস্তায় কয়েকজন গল্পটি প্রথম দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পাঠক মহল বিনোদ ঘোষালের অস্তিত্ব অনুভব করেন।ছোট গল্প, উপন্যাস, ফিচার, নাটক , চলচ্চিত্র সমালোচনা তাঁর বিষয়। দমদম শব্দমুগ্ধ নাট্যকেন্দ্রের প্রাণপুরুষ রাকেশ ঘোষ তাঁর বিষয় বৈচিত্রের জন্য অপেশাদার নাট্য দুনিয়ায় এক বিশেষ ব্যাক্তিত্ব। তাঁর নাট্যরূপ,মঞ্চ পরিকল্পনা, কোরিওগ্রাফ ও পরিচালনায় সাম্প্রতিক প্রযোজনা বিনোদ ঘোষালের একটি ছোট গল্প অবলম্বনে স্তন্যপায়ী।
মুখ্য দুই চরিত্রে অভিনয়ে রঞ্জন বোস ও কৃষ্ণ রায়। রঞ্জন বোসের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সহযোগী শিল্পী সন্দীপ ঘোষ, কৃশানু চক্রবর্তী, অভিষেক মুখার্জি, সৌরদীপ ব্যানার্জি ও দেবব্রত টিকাদার। এক নপুংশক দুধ বিক্রেতা, এক মজদুর পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী ও এক বাঘিনীর গল্প। ডুয়ার্সের চা বাগানে দুধের কারবারী মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষী এক নপুংশক রাখী শ্রমিক ঘরণীর পুষ্টিহীনতার অভাবে সন্তানকে দুধ দিতে না পারায় নিজের গাই কালীর দুধ এনে দেয়। অন্যদিকে প্রকৃতিরআর এক সৃষ্টি জঙ্গলের চিতা খাদ্যের খোঁজে আসে শ্রমিক মহল্লায়। তার ঘরেও অভুক্ত সন্তান অপেক্ষায় চিতা মায়ের । তারও দরকার যে উদর পূর্তির জন্য বাঘের দুধ। মাতৃ স্বাদে বঞ্চিত মায়েরা যখন ক্লান্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক বিষ। মুসলিম ফতেমা বিবির সন্তানকে নিজের গাইয়ের দুধ দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত হয় হিন্দু রাখী।
কিন্তু মাতৃত্বের আকাঙ্খা কি জাত ধর্মের শিকলে বাঁধা যায়? সেই চিরাচরিত প্রশ্ন নিয়েই নাটক। উপস্থাপনায় একদিকে শৈল্পিকতা, অন্যদিকে অভিনয় নাটকের বড় সম্পদ। কিন্তু ছোট গল্প অবলম্বনে প্রতীকী নাটক পরিণত দর্শকদের যতটা চাহিদা পূরণ করে সাধারণ দর্শক বিষয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। নাটকের নামকরণের অলঙ্কার বেশ দুর্বোধ্য। এতটা চরম বৌদ্ধিকতা দিয়ে আত্মতৃপ্তি হতে পারে, কিন্তু সাধারণ নাট্যপ্রেমীরা দুর্বোধ্যতার কারণে একটু তফাতে চলে যান। নাট্য আন্দোলনের বিস্তৃতিরজন্য যা সহায়ক নয়। আর্থিক চাপ থাকে বলেই তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে মঞ্চস্থ করতে হয় এটা বাস্তব, কিন্তু বাস্তব এটাও সংবাদ মাধ্যমকে ডেকে পিছনের এমন এক জায়গায় বসানো হয়, যেখান থেকে নাটক দেখাটা একটা দুঃসাধ্য কাজ। তবু বলতে দ্বিধা নেই এই মুহূর্তে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছেয়ে গেছে দেশ জুড়ে সেখানে নাটকের বিষয় ভাবনায় পরিচালকের সিদ্ধান্ত এক সাহসী পদক্ষেপ।
বিজ্ঞাপন
বৈশাখের প্রথম সন্ধ্যায় নাটকের শুরুতে ছিল একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। বিষয় সাহিত্য থেকে নাটক। আলোচনা করেন অতনু সরকার ও দেবাশিস দত্ত। সঞ্চালক ছিলেন সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় যেটুকু উঠে এল, সেটি হল সাহিত্যের চরিত্র চিত্রণে সাহিত্যিক নিজের ভাবনায় চরিত্র গঠন করে জীবন দান করেন। প্রেক্ষিরচনাতেও তাঁর স্বাধীন গতি। কিন্তু সেই সাহিত্য অবলম্বনে যখন নাট্যকার নাট্যরূপ দেন তাঁর বাড়তি দায়িত্বথাকে তাঁর ভাবনা যেন দর্শকের ভাবনাকে ছুঁতে পারে। কেননা দর্শকের পরিণত সত্ত্বা আলাদা আলাদা। তাঁদের সঙ্গে ভাবনার সমান্তরাল রেখা বিন্যাস ও নির্মাণ দর্শক মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয় । দুই বক্তা তাঁদের বৌদ্ধিক উত্তরণের প্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। ধন্যবাদসঞ্চালককে ,তিনি হালকা ছন্দে আলোচনাটি সফল করার এক চেষ্টা চালিয়েছেন।