ভূতের রাজা দিল বর এখন হাতিবাগানে নটী বিনোদিনীর পাড়ায়

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বাঙালির খাদ্য প্রীতি আর খাদ্য নির্মাণ রীতিমত গবেষণার বিষয়। রবীন্দ্রনাথের জ্যাঠামশায় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁঠার হাড়ের অম্বল পছন্দ করতেন। তাঁর গুম্ফ আক্রমণ কন্যা লিখেছেন, বৃহৎ রূপার থালে পাচক ব্রাহ্মণ ঢালে, মাংস পোলাও গাদা গাদা, কি গুণ পাঁঠার হাড়ে অম্বলে তার বাড়ে , কে বুঝিবে ইহার মর্যাদা। খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথের খাদ্য সমালোচনা সম্পর্কে রজতকান্তি রায় এক মোক্ষম শব্দ চ্য়ন করে লিখেছেন, চোখ ,জিব, নাক ও মস্তিষ্কের যৌথক্রিয়া সমানুপাতিক হারে না হলে এভাবে বলতে পারা যায় না । খাবারের বেলায় বাঙালিদের বেশিরভাগই চলে চোখ আর জিব। নাক আর মস্তিষ্ক চলে খুব কম মানুষের। তারও চেয়ে কম মানুষের এই চারটি অঙ্গ একই সঙ্গে চলে। কবি নজরুলের পছন্দ ছিল কই পোস্ত, ঝিঙে শুক্তো ঘন মসুর ডাল ও কষা মুরগি। দারিদ্র্য ছিল নজরুলের নিত্য সঙ্গী। আসানসোলে এক রুটিরদোকানে কাজ করতেন। রুটি বানাতেসঙ্গী ছিল ছড়া। মাখতে মাখতে গমের আটা ঘামে ভিজল আমার গা – টা । রবীন্দ্রনাথের গানের কথা আর সুরের সম্পর্ক নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কথার সঙ্গে সুরের সম্পর্ক মাছ আর মাছের ঝোলের মত।

এহেন বাঙালি নববর্ষে সাবেকি বাংলা খাবারে একটু বেশিমাত্রায় ঝুঁকবে তাতে সন্দেহ কী। কিন্তু গতির যুগে তাল মিলিয়ে সাবেকি রান্না করার সময় কই? সেই রন্ধনশিল্পীই বা কই? তাই বিশ্ব জুড়ে বাঙালি খাদ্যের রেস্তোরাঁ আজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কোলকাতায় এই রেস্তোরাঁর তালিকায় শীর্ষে ভূতের রাজা দিল বর। উত্তর কোলকাতার বাসিন্দাদের কাছে এই বছরের নতুন সুখবর। স্টার থিয়েটারের পাশে স্টার লেনে নটী বিনোদিনীর ঐতিহাসিক বাড়ির পাশে গড়ে উঠেছে এক রেস্তোরাঁ তিনতলা বাড়ি জুড়ে। অভ্যন্তরীণ সজ্জায়, প্রাচীন শহরের বাড়ির আদল। সদর দরজার পাশে মন্দির। মিচেল ক্যামেরা নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি। মূর্তি ভূতের রাজার।ভিতরে রাজকীয় পরিবেশে ভূতের রাজা, শুন্ডি আর হুন্ডি এবং হীরক রাজার সহবস্থান। সঞ্চালকের গলায় গুপি বাঘার গান। কাঁসার থালা বাটি গ্লাস ও কাঁটা চামচ সহযোগে পদের সমারোহ। শুক্তো, মোচার ঘন্ট, মাছের চপ, ডিমের চপ, ভেটকি পাতুরি, চিংড়ি মালাই , কষা মাংস, মুরগি মনোহর অতিক্রম করে রসগোল্লা আর পায়েস। থাকছে থালি। বৈশাখি থালি, হল্লা রাজার কাঁকড়া থালি , মেছো ভূতের পঞ্চ প্রীতি , গুপির থালি, বাঘার থালি। নিরামিষ থালিরও আয়োজন লোভনীয়। বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতিতে রেস্তোরাঁর শুভ উদ্ভোধনে বাজল ঢাক।

পরিচালক সুমন মৈত্র হাজির হলেন তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি আবার অরণ্যে দিন রাত্রির শিল্পীদের নিয়ে। পায়েল সরকার, অলিভিয়া সরকার, রূপসা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। ছিলেন অভিনেতা অম্বরিশ ভট্টাচার্য, মির আফসার আলি। ছিলেন বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের গবেষক হরিপদ ভৌমিক। হাজার পদের আয়োজন নিয়ে ১ লা বৈশাখ খাদ্য রসিকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ভূতের রাজা দিল বর। বাংলা নববর্ষে উত্তর কলকাতা আর উত্তর শহরতলীর মানুষের গন্তব্য এবার ভূতের রাজার আস্তানায়।দুই শিল্পী শুন্ডির রাজা ও ভূতের রাজার বাস্তব উপস্থিতি নস্টালজিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল সন্দেহ নেই। তবে চোখ খুঁজছিল গুপি বাঘাকে। পেলাম না। হয়ত দুয়ারে ভোট। হয়ত হিংসার আবহ রুখতে তাঁরা জেলায় জেলায় ঘুরে গাইছেন তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল? কিংবা ও মন্ত্রীমশাই , ষড়যন্ত্রী মশাই থেমে থাক।

বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *