বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৩১

চানক্য শ্লোকে বেশ্যা বর্ণনা আছে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্বেই জানিয়েছিলাম , স্বদেশচর্চা লোক আদিরস সেকাল _ একাল শারদ ২০১৬ পত্রিকায় সঙ্গীতা চৌধুরী তাঁর গণিকাবৃত্তি: প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে নিবন্ধে চানক্যের অর্থশাস্ত্রে দেবদাসী নামক গণিকা প্রসঙ্গে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রেখেছেন, সেসম্পর্কে আলোচনা করব। লেখিকা লিখেছেন, অর্থশাস্ত্রে প্রতিগণিকা নাম এক ধরণের গণিকার উল্লেখ পাওয যায়। স্ট্রার্ণবার্কের মতে এরা গণিকাদের কিছু সময়ের অবর্তমানে তাদের পরিপূরক হিসাবে কাজ করত। কৌটিল্য অন্যান্য গ্রিক লেখকদের মতোই বলেছেন যে, গণিকারা রাজাকে প্রাসাদে , যুদ্ধক্ষেত্রে এবং শিকারে সঙ্গ দিয়ে থাকে। মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে , রাজার অতিথি সেবার ও দেখাশুনার ভার থাকত মহিলাদের উপর যাদেরকে এই কাজের জন্য তাদের মাতাপিতার কাছ থেকে নিয়ে আসা হত। তাঁর বর্ণনানুজায়ী রাজা যখন শিকারে বের হতেন তখন ব্বাক্কানেলিয়ান ধরণের মহিলারা তাঁকে ঘিরে থাকতএবং যখন রাজারা একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিকার করতেন তখন তাঁর পাশে দু – তিনজন সশস্ত্র মহিলা উপস্থিত থাকতেন।

মৃচ্ছকটিক অবলম্বনে উৎসব ছবিতে গণিকা বসন্তসেনার চরিত্রে অভিনেত্রী রেখা ও জনৈকা অভিনেত্রী।

অর্থশাস্ত্রে গণিকাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছে। সেখান থেকে জানা যায় যে গণিকাদের নিজস্ব পরিবার ছিল – মা বোন, মেয়ে ও ছেলে নিয়ে। অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী একজন গণিকাকে তার পেশা থেকে অব্যাহতি দেবার জন্য সরকারকে মুক্তিপণ হিসাবে ২৪০০০ পণ দিতে হত। শুধুমাত্র গণিকা নয় কৌটিল্য অন্যান্শ্রেণীর বারবণিতা সম্পর্কেও সুবিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন রূপজীবী যারা সুন্দরী ছিল কিন্তু কলায় পারদর্শিনী ছিল না এবং নিজস্ব পেশা অবলম্বনকারিনী ছিল। রূপজীবী যারা সুন্দরী ছিল কিন্তু কলায় পারদর্শিনী ছিল না এবং নিজস্ব অবলম্বনকারী । গণিকাদাসী এরাও ছিল গণিকাদের দাসী। জাতকে এদের উল্লেখ পাওয়া যায়, সেখানে বলা হয়েছে যে বেনারসে সামা নামেএক গণিকার এরূপ পাঁচশত দাসী ছিল ,। মাতৃকারা ছিলেন গণিকাদের অভিভাবক ও তাদের দেখাশুনার ভার মাতৃকাদের উপর ছিল।

সেযুগে ব্রাহ্মণের গণিকাগমন।

কুমারী ও দুহিত্রিকারা ছিল গণিকাদের মধ্যে নাবালিকা বেশ্যা , যারা সম্পূর্ণ আইনগতভাবে রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। কোনও ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে এদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ স্থাপন করতেন, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হত। এছাড়া চিত্রশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী এবং নৃত্যশিল্পী এদের স্ত্রীগণ তাদের গুপ্ত ব্যবসা করতেন। ফিরে আসা যাক দেবদাসী প্রসঙ্গে। পুরোহিত তন্ত্রে দেবদাসীদের জনগণের আড়ালে রাখা হত। যে কোন আড়ালের বিষয় সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল জিনগত। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন মানুষের গোপন বস্তুর ওপর কৌতূহলের কারণ ডোপামিন নামে এক হরমোন।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব ২ই আগস্ট, শুক্রবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *