বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ২০

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গণিকা শব্দটির উৎপত্তি গণ শব্দটি থেকে। গণিকা বলতে মূলত বারোয়ারি ( public woman ) কে বোঝানো হয়, যিনি অর্থের বিনিময়ে পুরুষের কামনা – বাসনা চরিতার্থ করে থাকেন । এমনটাই লিখেছেন শুভ্রদীপ দে এবং সুস্মিতা দে ( ভৌমিক)। তাঁদের কাশ্মীর : তিন কবি ও বারঙ্গনাবৃত্তি শীর্ষক প্রবন্ধ স্বদেশ চর্চা লোক শারদ ২০১৬ সংখ্যায়। তাঁরা লিখেছেন, গণিকাবৃত্তির সঙ্গে যৌনতা এবং এবং ভোগবাদ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং এর উৎপত্তি হয়েছিল অতি সুপ্রাচীনকাল থেকেই। হরপ্পা সভ্যতার সময়কালে প্রাপ্ত একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত নর্তকী মূর্তি থেকে মনে হয় হয়তো সেই যুগেই এই পেশার উপস্থিতি ছিল। হরপ্পার পাশাপশি পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতাতেও এই আদিম পেশার সন্ধান পাওয়া যায়।প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মিশরে গণিকাদের সামাজিক স্বীকৃতি ছিল এবং ৪০০ খ্রিস্টপুর্বাব্দে দেখা যায় তারা পুরুষের কামনা -বাসনা চরিতার্থ করতে অত্যন্ত দক্ষ ছিল। প্রাচীন মহাভারতের গণিকাদেরঅবস্থান নির্ণয় করতে গিয়ে বলা যায় যে ঋকবৈদিক যুগে ধর্ম ও ঈশ্বরের প্রতি দেহ সমর্পণের ধারণা পরবর্তী বৈদিক যুগে তা আরও দৃঢ় হয়েছিল। বৈদিক যুগে গণিকাদের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋকবেদে। এছাড়াও অথর্ববেদ ও অন্যান্য বৈদিক সংহিতাগুলিতেও গণিকাবাচক কিছু শব্দ যেমন পুংশ্চলী, সাধারণী, সামান্যা ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।

বাৎস্যায়নের মা ও মাসি দুজনেই ছিলেন পরমা সুন্দরী গণিকা।এমনটাই নিজের উপন্যাসে লিখেছেন সুধীর কক্কর।

যে যৌনতা ও কাম কলা নিয়ে কামশাস্ত্র রচনা করেন বাৎস্যায়ন তাঁর জন্মও কোশাম্বী নগরের এক গণিকাপল্লীতে। বাৎস্যায়ন নিজে এই সম্পর্কে কিছু না লিখলেও অন্যান্য বহু গ্রন্থ ঘেঁটে মনো বিজ্ঞানী সুধীর কক্কর এক উপন্যাস লেখেন দ্য অ্যাসেটিক অব ডিজায়ার। সেখানে তিনি লিখেছেন বাৎস্যায়নের মা অবন্তিকা ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী গণিকা। মাসি চন্দ্রিকাও ছিলেন পরমা সুন্দরী গণিকা। কক্কর তাঁর উপন্যাসে বাৎস্যায়নের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, মা কী কষ্টটাই না পেয়েছেন সেরার সম্মান যখন ধীরে ধীরে সরে গেছে মাসি চন্দ্রিকার দিকে। পথে বের হলেই মা সেটা ধরতে পারতেন। বাড়িতে যখন সঙ্গকামীদের ভিড় লাগত চন্দ্রিকার জন্য , তখন তা আরও প্রকট হত। ঘরে মাসি চন্দ্রিকা। মায়ের চোখ খুঁজত পুরুষের সেই চোখের আগুন, যা ক্রমশঠিকরে বেরতো তাঁর বোনের প্রতি। এই প্রসঙ্গে স্বদেশ চর্চা লোক পত্রিকার শারদ ২০১৬ সংখ্যায় মনন মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ও সমাজে যৌনতা প্রবন্ধে লিখেছেন , পুরুষের গণিকা উপভোগের যেমন তথ্য আছে তেমন যৌনতা উপভোগে নারীদের সুযোগ বেশি ছিল না। পুরুষ গণিকাও কি সে যুগে ছিল ? এই প্রসঙ্গে পরে আসব। লেখক মনন মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, মহাভারতে নারীর যৌনতা নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে। একটি পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়, কামুক প্রকৃতির নারীর ক্ষুধা মেটানো। সর্বদা পাহারা না রাখলে নারী নতুন পুরুষ পেলেই তার সঙ্গে মিলন ইচ্ছা করবে, সে ব্যক্তি কুঁজো বা বামন বা পঙ্গু হলেও। আর শেষ অস্ত্র হিসেবে সমকামী ঘনিষ্ঠতায় লিপ্ত হবে অপর নারীর সঙ্গে। অনুশাসন পর্বে সামান্য অংশ উদ্ধৃত হল: উহারা ( নারীরা) পুরুষ প্রাপ্ত না হইলে কৃত্রিম পুংলিঙ্গ প্রস্তুত করিয়া পরস্পর পরস্পরের নিকৃষ্ট প্রবৃত্তি চরিতার্থ করে।( মহাভারত_ অনুশাসন পর্ব) আগামী পর্বে নারী সমকাম সম্পর্কে আলোচনা করব।

পরবর্তী পর্ব: ২১ , সোমবার ২৪ জুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *