বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব: ১৭৬

পুরুষ বেশ্যবৃত্তিতে যুক্ত থাকলে রাষ্ট্র মৃত্যুদণ্ড দিত।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গ্রীসে বালক প্রেম সমাজে স্বীকৃত থাকলেও রাষ্ট্রশক্তি বিষয়টি আইনত স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে বালক প্রেমের যুক্ত থাকলে নির্বাচিত গণতন্ত্রের প্রতিনিধি যেমন হতে পারা সম্ভব ছিল না, তেমনই রাষ্ট্রের আইনজীবী হতে পারা যেত না। কখনো কোনো সরকারি পদলাভের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়াও যেত না। তা সে দেশের ভিতরেই হোক বা বাইরে। ফলে রাজদূত হিসেবেও তাকে নিয়োগ করা যাবে না। এই ছিল রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। প্রকাশ্য পূজার স্থানে উৎসর্গ পর্বেও তার উপস্থিতি ছিল নিষিদ্ধ। গণতান্ত্রিক অনুষ্ঠানে যেখানে নাগরিকদের গলায় মালা পরিয়ে সংবর্ধনার দেওয়া হতো, সেখানেও প্রবেশের অধিকার থাকত না। বেশ্যাবৃত্তির অভিযোগে প্রমাণিত অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হতো।

বেশ্যাবৃত্তির সাজানো অভিযোগে রাষ্ট্র তিমারচাসকে দোষী সাব্যস্ত করায় অপমানে আত্মঘাতী হন তিনি।

অনুবাদক আনোয়ার হোসেনই মঞ্জু তাঁর প্রাচীন গ্রীসে প্রেম ও যৌন জীবন গ্রন্থে ৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন , এই আইন কতটা কঠোর ছিল এবং আইনটির আদৌ প্রয়োগ করা হতো কিনা তা প্রমাণ করতে উপরোক্ত আইনকে সমুন্নত রাখার জন্য অ্যাশ্চিনেস তাঁর বক্তৃতায় যার বিরুদ্ধে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছিলেন আমরা সেই তিমারচাস এর মামলাটি উল্লেখ করতে চাই। তিমারচাস ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন এক নাগরিক। রাজনৈতিকভাবেও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে বেশ্যাবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল।

অভিযুক্ত তিমারচাসের দুই সাবেকি প্রেমিক দাবি করে, যে তারা তরুণ বয়স তিমারচাসের পিছনে বহু অর্থ ব্যয় করেছে।শুধু এতটুকু বক্তব্যই কারো বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু বিচারকরা কোনভাবে অভিযোগের মাঝে সত্যতা খুঁজে পান এবং তিমারচাসকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অভিযোগে শিলমোহর দেওয়া হলো এই যুক্তিতে যে ব্যক্তি তার নিজের দেহের লজ্জাকে ফেরি করেছে, তারপক্ষে নগরীর সাধারণ স্বার্থ বিক্রি করে দেওয়াও সহজ হবে। এহেন অমর্যাদায় শেষ পর্যন্ত তিমারচাস আত্মহত্যা করেন। (চলবে)

পরবর্তী পর্ব ২৯ ডিসেম্বর, সোমবার,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *