পর্ব:১৫৫

রামায়ণ ও মহাভারতে গণিকাগমন ছিল স্বাভাবিক প্রথা।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : রামায়ণ , মহাভারত সহ বিভিন্ন পুরাণে অবাধ যৌনতা যেমন স্বীকৃত ছিল তেমন ছিল গণিকা গমন। সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্ত বাসিনী গ্রন্থে ১৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,,,,, এই বৃত্তির প্রাচীনত্ব সন্দেহাতীত। কবে কোন সুদূর অতীতে লজ্জাভূষণা শুদ্ধান্তচারিণী নারী যাঁকে মহাভারতে বলা হয়েছে হ্রিং, ধী ও শ্রী, যাঁরা ছিলেন পতিগৃহে সম্রাজ্ঞী স্বরূপা, যাঁরা পূজিত হলে দেবতা প্রীত হতেন বলে বিশ্বাস ছিল ( অনু ৪৬/১৪), তাঁরা তাঁদের পবিত্র জীবন বর্জন করে পতিতাবৃত্তি সর্বপ্রথম অবলম্বন করলেন তা অজ্ঞাত, সম্ভবত অজ্ঞেয়। ভারতের কোন অঞ্চলে এই বৃত্তির সূত্রপাত , তাও জানা জি না। কিন্তু কিছু অনুমানে করা যায়।

মহাভারতের মাদ্রী ছিলেন মদ্রবাসী। যে দেশে যৌনতা ছিল অবাধ।
এই প্রসঙ্গে লেখকদ্বয় লিখেছেন , বেদ থেকে আরম্ভ করে অনেক গ্রন্থেই গণিকার উল্লেখ থাকলেও প্রাচীন গ্রন্থাবলীর মধ্যে মহাভারতেই এই সম্পর্কে তথ্য সমধিক। লেখকদ্বয় সেই তথ্যের বিবরণ ডিটের গিয়ে লিখেছেন, মদ্রবাসীগণ একসময়ে বাহলীক অঞ্চলে বসতিস্থাপন করেছিল। সুখাসক্ত এই জাতির লোকেরা নানাপ্রকার মদ্যপান করত , গোমাংস ভক্ষণ করত, নাচগান , হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকত, যদিও তাদের গান ছিল রাসভ ও উষ্ট্রবিনিন্দিত। ভি এস অগ্রবাল মহাশয় মনে করেন ( গৌহাটির দ্বাবিংশ অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সে সভাপতির ভাষণ _ পৃষ্ঠা ২০ ) যে হাহতে শব্দটি গ্রীক হেটিরা ( গণিকা) শব্দ থেকে উদ্ভুত।

মদ্রদেশে কৃষ্ণা চতুর্দশীতে মদ্যপান ও নৃত্যগীত হতো বিভিন্ন মাংস ভক্ষণের মধ্য দিয়ে।
কুরাঙ্গল অঞ্চলের জনৈক ব্রাহ্মণ -মদ্রদের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন ( মহাভারত ৮/৩০/২৭- ৩৩) যে, প্রতি কৃষ্ণার চতুর্দশীতে তারা ঢাক বাজিয়ে ঘোষিকা গাঁথা গেয়ে শূকর, মুরগী, গাধা ও উটের মাংস খেত এবং বিবস্ত্রা নর্তকীগণ সমভিব্যাহারে মদ্যপান করত। (চলবে)
আগামী পর্ব সোমবার ,১৩ অক্টোবর,২০২৫
