পর্ব: ১৩৪

বাৎস্যায়নের কামসূত্র গ্রন্থে সেযুগের বিভিন্ন দেশের গণিকাও রক্ষিতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছেন।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বাৎস্যায়নের কামসূত্র গ্রন্থে গৌড় অর্থাৎ বঙ্গভূমি সম্পর্কে কি নির্দেশ সেটা দেখা যাক। বাৎস্যায়ন লিখেছেন গৌড়ে অন্তঃপুরের নারীরা ব্রাহ্মণ, মিত্র, ভৃত্য , দাসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা বিধিসম্মত। সিন্ধু প্রদেশ সম্পর্কে নির্দেশ প্রতিহার ও কর্মকরদের এবং সম পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন অন্তঃপুরের নারীরা। অঙ্গ বঙ্গ ও কলিঙ্গের অন্তঃপুরবাসিনীরা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন সেই সব ব্রাহ্মণদের সঙ্গে যাঁরা পুষ্প দান করতে অন্তঃপুরে যান। অঙ্গ বলতে আজ বোঝায় বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের অঞ্চল। কলিঙ্গ বলতে বোঝায় ওড়িশার দক্ষিণাঞ্চল এবং বঙ্গ আজকের পূর্ব অর্থাৎ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।

বৈদিক যুগে ভারতে অন্তঃপুরবাসিনী।
এবার আসা যাক প্রাচ্য দেশে। এই দেশ বিহার, বঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশারপূর্বপ্রান্ত। এই দেশটি সম্পর্কে বাৎস্যায়নের বিধান অন্তঃপুরের নারীরা নয়দশটি যুবককে প্রাথমিক পছন্দ করে সেরা যুবকটিকে কামক্রীড়ায় আমন্ত্রণ করতে পারে। বাৎস্যায়নের নির্দেশে এও বলা আছে পরদার গমনের আগে লক্ষ্য রাখতে হবে তার নিজের স্ত্রী পরপুরুষাক্ত কিনা। বাৎস্যায়নের মতে, ধর্ম ও ভয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং শুদ্ধ বলে জ্ঞাত ব্যক্তিকে অন্তঃপুর রক্ষী নিযুক্ত করা উচিত। স্বামী গোপনে স্ত্রীর চরিত্র পরীক্ষা করবেন।

নারী যে যে কারণে বিপদগামিনী হয়, তাদের মধ্যে আছে অতিমাত্রায় গোষ্ঠীতে নৃত্য, নিয়ন্ত্রণের অভাব, স্বাধীন বা যথেচ্ছভাবে স্বামীর সঙ্গে ব্যবহার, পরপুরুষের সঙ্গে অবাধ মিলন, প্রবাসে অবস্থান, বিদেশে বাস, শরীর রক্ষায় উপযোগী বৃত্তির উপাঘাত, স্বৈরিণীর সংসর্গ, পতির প্রতি ঈর্ষা ইত্যাদি। বাৎস্যায়ন আরও বলেছেন,(৫/৬/১৭) যে পারদারিক প্রকরণে অভিজ্ঞ ব্যক্তি নিজভার্যার কাছে ছলনাপ্রাপ্ত হয় না। ধর্ম ও অর্থের প্রতিকূল বলে পারদারিকের আচরণ নিষিদ্ধ। এই অধিকরণ মানুষের মঙ্গলের জন্য ও দায়রক্ষার জন্যই লিখিত হ’ল, লোককে পরদারাভিগমনে প্রবৃত্ত করার জন্য নয়। এই বিষয়গুলি সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থের ১৩১/১৩২ নং পৃষ্ঠায লিখেছেন।( চলবে)
পরবর্তী পর্ব ১ আগস্ট, শুক্রবার,২০২৫
