বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব : ১৫১

সভ্যতার শুরুতে দলবদ্ধ যৌনতা ছিল স্বাভাবিক।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: লোকেশচন্দ্র বিশ্বাস স্বদেশচর্চা লোক শারদ ২০১৬ সংখ্যায় ৪৩০ পৃষ্ঠায় লোকসংস্কৃতি ও যৌন ক্ষুধা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন লিখেছেন নারী পুরুষের সম্পর্ক ও যৌনতা নিয়ে গবেষণাধর্মী লেখা। লেখক লিখেছেন, কৃষিকেন্দ্রিক অর্থনীতি গড়ে ওঠার ফলে মানুষের প্রজনন শক্তি ও প্রক্রিয়া আর যৌনক্রিয়াযর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটির উর্বরতা বাড়ানোর কল্পনা।। অর্থাৎ উর্বরতাতন্ত্র। যৌন চিত্র আর মন্ত্র দিয়ে তৈরি হল তন্ত্র। বিশ্বজোড়া কৃষি আচার, পূজা, বিয়ের অনুষ্ঠান ইত্যাদি জড়িয়ে আছে যৌন, যৌন ক্রিয়ার সঙ্গে। অর্থাৎ যৌন প্রতীক অনেক পূজার সঙ্গে যুক্ত। দুর্গা পুজোয় যে তন্ত্র আঁকা হয়, তার মধ্যে পদ্মের পাপড়িগুলো যোনির প্রতীক। জলে ভর্তি ঘট নারীদেহের গর্ভভাণ্ড।

মার্কণ্ডেয় পুরাণে শাকম্ভরী দেবী কৃষি ব্যবস্থার প্রতীক।

লেখক লিখেছেন, মার্কণ্ডেয় পুরাণে দেবী মাহাত্ম্য অংশে উল্লেখ আছে , আমি জীবনদায়ী শাকসবজি দিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করব। এই শাকসবজি আমার শরীর থেকে উৎপন্ন হবে বর্ষা সমাগমে। আমার পরিচয় হবে শাকম্ভরী নামে। নারী দেহের সঙ্গে শস্য -উদ্ভিদের সম্পর্ক অতি প্রাচীনকাল থেকে।

বেশ্যাদ্বারের মাটি তত্ত্ব সম্পর্কে শাস্ত্রকাররা একমত নন।

পাশাপাশি নব পত্রিকা আরাধনা যখন দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গীভূত হয় , তখন বেশ্যাগমন বাঙালি বাবু কালচারে একটি প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। বেশ্যাগৃহে গমনের একটি রীতি শাস্ত্রেও বর্ণিত আছে। হিন্দু শাস্ত্রে লিঙ্গপুরাণে দুর্গাপূজাকে চতুষ্কর্মময়ী বলা হয়েছে। অর্থাৎ ১) মহাস্নান ২) ষোড়শপচার পুজো ৩) বলিদান ৪) হোম । অন্যতম উপাচার ১২ মাটি।১) রাজবাড়ীর মাটি,২) চার রাস্তার মোড়ের মাটি,৩) গঙ্গামাটি ৪) ষাঁড়ের শৃঙ্গের মাটি ৫) নদীর দুকূলের মাটি ৬) সর্ব তীর্থের মাটি ৭) উই ঢিপির মাটি ৮) সাগরের মাটি ৯) গরুড় চড়ে যে মাঠে , সেই মাঠের মাটি ১০) বুনো শুয়োরেরদাঁতে লেগে থাকা মাটি ১১) মন্দিরের দরজার মাটি ১২) বেশ্যাদ্বারের মাটি। শাস্ত্রকারদের কেউ কেউ বলেন , কোনো পুরুষ যখন বেশ্যাঘরে যান তখন ঘরের দরজা পুরুষের সেই পূণ্য শোষণ করে নেয়। তাই সেই বেশ্যাদ্বারে পূণ্য সঞ্চিত হয়। সুতরাং সেই দ্বারের মাটি পূণ্য। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব , আগামী সোমবার,২৯ সেপ্টেম্বর,২০২৫

********

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *