পর্ব: ১৪১

সোনাগাছির সন্ধ্যা।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এই মুহূর্তে গণিকাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আলোচনায় করছি গট পর্ব থেকে।সাইট সম্পর্কে রতনতনু ঘাঁটি স্বদেশ লোক চর্চা শারদ ২০১৬ সংখ্যায় এক নিবন্ধে ৩৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,,,,,,,, যৌনকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মেয়েরা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে শুরু করেন। তিনি লিখেছেন, সে নিজের পয়সা নিজের হাতে রাখতে চায়। মাসির কাছে থেকে তার সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ জানতে চায়। মাসিরা তখন ঘরভাড়া , খাওয়া, আলো-বাতি, লোকডাকা, দালালি, সিনেমা, মাসির পারিশ্রমিক, পুলিশের ঝামেলা বাবদ একটা হিসেব দেখায়। সে হিসেবে দেখা যায় -পতিতাটির দেহবিক্রির সমূহ টাকাই প্রায় খরচ হয়ে গেছে। যেটুকু টাকা গচ্ছিত আছে তারও একটা আভাস পায়। এই সময় পতিতার সঙ্গেবিশেষ কোনও খদ্দেরকে বেশি মেলামেশার সুযোগ দেয় মাসিরা। পতিতাটি ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। দুজনে একদিন কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করে আসে। পতিতালয়ের ভাষায় এই ধরণের খদ্দেরকে ভেড়ুয়া বলে। এরপর থেকে লোকটি পতিতাকে নিজের স্ত্রীর মতো মনে করে। পতিতাও লোকটিকে স্বামীর মতো টাকা না নিয়ে দেহভোগের অবারিত সুযোগ দেয়। লোকটিও সুযোগ পেলে পতিতাটির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।

সোনাগাছির মেয়েদের স্বামীর স্থানীয় নাম ভেরুয়া।
লেখক লিখেছেন, অনেক সময়ই দেখা যায়,,’- ভেড়ুয়া’টি আসলে মাসিরই লোক। সে পতিতাটির টাকা হাতিয়ে নেয়, সেই টাকার অর্ধেকটা গোপনে মাসির কাছে চলে যায়। মাসি পতিতাদের ঘর বাঁধার ব্যাকুলতার সুযোগে এইভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়। আর ওই ‘ভেরুয়া’টি মিথ্যে বি বিয়ের খেলায় পতিতাটিকে মাতিয়ে রেখে একসময় উড়ে যায়। পতিতার ঘর বাঁধার স্বপ্ন খানখান হয়ে যায়। সে নিজেকে পঙ্কিল জীবনের স্রোতে আরও গভীরভাবে ছেড়ে দেয়।

সোনাগাছির মেয়েদের অভিভাবক মাসি নামে পরিচিত।
পতিতাদের সঙ্গে বিয়ের খেলা খেলতে খেলতে কোনও ‘ভেরুয়া ‘ সত্যিই হয়তো ফেঁসে যায়। তখন সে পতিতাটিকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে পতিতালয় থেকে দূরে গিয়ে সামাজিকভাবে সংসার সংসার বাঁধে। পতিতাবৃত্তি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় পতিতাটি তার গচ্ছিত টাকা চেয়ে বসে মাসির কাছে। চাওয়াই সার। সে টাকা আদায় করা অসম্ভব। পতিতাটির গচ্ছিত টাকার সবটাই মাসি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। কেউ হয়তো সাতে পাঁচে চোদ্দো হিসেব দেখিযে কিছু টাকা ফেরৎ দেয়। কিন্তু এরকম মাসির সংখ্যা নগণ্য। (চলবে)
পরবর্তী পর্ব ২৫ আগস্ট, সোমবার,২০২৫
