পর্ব : ১৩৮

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: সাধারণ গণিকাদের ওপর বলাৎকার করলে বৈদিক যুগে ও পরবর্তী সময়ে কি শাস্তি ছিল গত পর্বে আলোচনা করেছি। এবার বলব যে গণিকারা রাজার সহচরী হিসেবে ছাতা ধরত মাথায়, কিম্বা রাজার প্রয়োজনীয় বস্তু বহন করত তাদের হত্যা করলে অপরাধে দণ্ডের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি নিস্ক্রয় মূল্য। অর্থাৎ সাত খুন মাফ টাকার বিনিময়ে। গণিকা, তাদের বৃদ্ধা মা, কুমারী কন্যা বা রূপদাসী অর্থাৎ যারা রাজা বা রাণীর অঙ্গ সজ্জার কাজ করত তাদের হত্যা করলেও ছিল বহু অর্থ দণ্ড। বারবার একই অপরাধে চারবার পর্যন্ত ছিল ডিজিনিয়ার দ্বিগুণ অর্থ দণ্ড। তারপর নির্বাসন।

বৈদিক যুগে গণিকা যদি গ্রাহক সন্তুষ্টিতে অবহেলা করলে অর্থ দণ্ড দিতে হতর চুক্তির আটগুণ অর্থ।
রাজার আদেশে কোনো গণিকা যদি সেই পুরুষের সঙ্গে সঙ্গত না করলে গণিকাকে দণ্ড দিতে হতো একহাজারকষাঘাত বা পাঁচ হাজার পণ জরিমানা। কারো কাছে টাকা নিয়ে দেহদান করতে অস্বীকৃত হলে দণ্ড ছিল ১০ হাজার পণ। অর্থাৎ ছলে বলে রাজকোষ পূর্ণ করা। আরও আছে। কোনো গণিকা যদি সারা রাত্রি কোনো গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তি করে সেক্ষেত্রে যদি গণিকা কথাবার্তায় সময় নষ্ট করে , গ্রাহক যদি অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে জরিমানা ছিল যে টাকায় চুক্তি তার আটগুণ দণ্ড দিতে হতো। অবশ্য গ্রাহক যদি কুষ্ঠ আক্রান্ত হতো বা নপুংসক হতো কিম্বা যৌনতার নামে বিকৃত যৌনতার জন্য গণিকাকে বাধ্য করত সেক্ষেত্রে পণ দিতে হতো না।

বৈদিক যুগে গণিকা যদি কোনো কারণে গ্রাহককে হত্যা করত সেক্ষেত্রে তাকে মৃত গ্রাহকের সঙ্গে সহমরণে যেতে হতো।
কোনও গ্রাহকের সঙ্গে গণিকার যদি ঝগড়া হতো , গণিকা যদি সেই গ্রাহককে হত্যা করে বস্তু সেক্ষেত্রে মৃত গ্রাহকের সঙ্গে গণিকাকে চিতায় সহমরণে যেতে হতো। কিংবা গলায় গামছা দিয়ে পাথর বেঁধে ডুবিয়ে মারা হতো। আবার কোনো গ্রাহক যদি গণিকার অলঙ্কার, অর্থ চুরি করত কিংবা গণিকাকে অপহরণ করত তাহলে গ্রাহককে লুণ্ঠিত অর্থের আটগুণ অর্থ দণ্ড দিতে হতো। সেক্ষেত্রে অবশ্যই গণিকাকে সেই অভিযোগ জানাতে হতো গণিকাধ্যক্ষকে। (চলবে )
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ১৫ আগস্ট,২০২৫
