পর্ব:১৩২

মধ্যযুগে বাৎস্যায়নের আদর্শ নায়ক- নায়িকা।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: নায়িকারা যদি সুবর্ণকার , মণিকার, কাংস্যকারাদির নিকট কিছু প্রয়োজন বোধ করে, তাহলে নায়ক নিজের বিশ্বস্ত ঐরূপ লোকদের আনিয়ে নায়িকার অভিলাষ পূরণার্থে স্বয়ং চেষ্টা করবেন এতে দীর্ঘকাল নায়িকাকে দেখার সুযোগ মিলবে।দেখার সুযোগ পেরিয়ে গেলে নায়ক নায়িকার অন্য কার্য সম্পাদনের চেষ্টা করবে। নায়িকা যে কর্ম , দ্রব্য ও কৌশল প্রার্থী হবেন , তা সবই নায়ক নিজের আয়ত্তাহীন বলবে। সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থে ১২৬ নম্বর পৃষ্ঠায় এমনই উল্লেখ করেছেন।

বাৎস্যায়ন কামসূত্র গ্রন্থে নায়ক নায়িকার প্রতি কর্তব্যের ১০ টি নির্দেশ লিপিবদ্ধ করেছেন।
পরদার গ্রহণে ১০ টি নীতি পালনের নির্দেশ কামসূত্রে উল্লেখ আছে। প্রথমত পরদারি গমনের আগে নায়ককে দেখতে হবে নায়িকা যৌন সাধনীর যোগ্য কি না। তার সঙ্গে মিলনে ভবিষ্যতে শুভ হবে কি না। বাৎস্যায়ন কামার্ত ব্যক্তির দশটি অবস্থার কথা লিখেছেন।১) চক্ষপ্রীতি অর্থাৎ দেখেই ভালো লাগা ২) মন:সঙ্গ অর্থাৎ মানসিক আকর্ষণ,৩) সঙ্কlল্পোৎপত্তি অর্থাৎ মিলনীর ইচ্ছা ৪) নিদ্রাচ্ছেদ অর্থাৎ অনিদ্রা ৫) তনুতা অর্থাৎ শরীরের কৃশতা ৬) বিষয় থেকে ব্যাবৃত্তি অর্থাৎ কিছুই ভালো নয় লাগা, ৭)১০লজ্জাপ্রণাস অর্থাৎ গুরুজনের সামনেও লজ্জাহীনতা ৮) উন্মাদ ৯) মূর্ছা ১০) মরণ।

রাজা দুষ্মন্ত ।
এই সম্পর্কে লেখকদ্বয় কালিদাসের শকুন্তলা নাটকের উল্লেখ করে লিখেছেন শকুন্তলার স্মৃতি রাজার মনে উদ্রিত হলে তাঁর শারীরিক ও মানসিক বর্ণনা প্রসঙ্গে কালিদাস লিখেছেন- তিনি সুন্দর দ্রব্য ঘৃণা করছেন , শয্যার নিদ্রাহীন অবস্থায় রয়েছেন, অন্ত:পুরিকাদের সঙ্গে পরিমিত কথা বলছেন, তাতেও তাঁদের নাম ভুলে যাচ্ছেন, রাজার অধর দীর্ঘশ্বাসে রক্তবর্ণ হচ্ছে, অনিদ্রা হেতু নেত্রযুগল ম্লান হয়েছে এবং তিনি রোগা হয়ে গেছেন। ব্যর্থ প্রেমিকের এই অবস্থা সম্পর্কেই বাৎস্যায়নের নির্দেশ শরীরের ক্ষতি বাঁচাতে পরদারগমন উচিত। (চলবে)
আগামী পর্ব ২৫ জুলাই,শুক্রবার,২০২৫
