বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব:১২০

বিশ্বামিত্র ও মেনকা।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গের জন্য মেনকার যৌনআবেদনময় নৃত্যের ভূমিকা যেমন ছিল , তেমন সেই ভূমিকার ফল তো শকুন্তলার জন্ম। সেই সন্তানের দায় না নিলেন বিশ্বামিত্র n, না নিলেন অপ্সরা মেনকা। বিশ্বামিত্র তো আবার অপ্সরা রম্ভার ফাঁদে পড়েন।রম্ভা এমন একজন অপ্সরা যাঁকে একমাত্র পছন্দ করেছিলেন লঙ্কার রাজা রাবণ। কিন্তু বিশ্বামিত্র অপ্সবাদের সম্পর্কে সজাগ হয়ে যান। রম্ভাকে হাজার বছর পাথর হয়ে থাকার অভিশাপ দেন। পরে ইন্দ্রদেব রম্ভাকে নিয়োগ করেন ব্রহ্মর্ষি জাবালির তপস্যা ভঙ্গ করতে।এক্ষেত্রে অবশ্য যে কন্যার জন্ম হয় তার ভরণপোষণের ভার নেন জাবালি।

সেরা সুন্দরী অপ্সরা উর্বশী

বৈদিক সংহিতার পুরূরবা উর্বশী সংবাদে দুজনের প্রেমের উপাখ্যান রচিত হয়েছে । বেদের দুই দেবতা মিত্র ও বরুণ এঁদের বন্ধুত্ব এমন গাঢ় তাঁদের নাম উচ্চারিত হত মিত্রাবরুণ নামে। ফলে দুজনেই একসঙ্গে কামতাড়িত হন উর্বশীকে দেখে। ফলে বীর্য্যপাত। সেই বীর্য যেই পৃথিবীতে পড়ল মিত্রের বীর্য থেকে বশিষ্ঠ মুনি ও বরুণের বীর্য থেকে অগস্ত্য মুনির জন্ম। পৃথিবীর রাজা পুরূরবা যখন শুধু ক্ষণকালের যৌন সুখের জন্য নয়, স্থায়ীভাবে উর্বশীকে পেতে বিয়ে করতে চান উর্বশী অদ্ভুত কিছু শর্ত দেন। প্রথমত দৈনিক তিনবারের বেশি ,,,,,,,,, নয়। দ্বিতীয়ত উর্বশীর সামনে তিনি নগ্ন হতে পারবেন না। একবার এই দ্বিতীয় শর্ত রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় উর্বশী ফুড়ুৎ।
পুরূরবাযখন শর্ত ব্যর্থ হলেও উর্বশীকে ত্যাগ করতে চাইছিলেন না উর্বশী স্বান্তনা দিয়ে রাজাকে বোঝান, নারী হৃদয় নেকড়ের মত নিষ্ঠুর। তার জন্য অনুতাপ বীরের শোভা পায় না। শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রের আদেশে উর্বশী স্বর্গে ফিরে যান। রাজাকে দিয়ে যান এক পুত্র সন্তান। সেই সন্তানের নাম আয়ু।

অপ্সরাদের স্বামী স্বর্গের বাদ্যযন্ত্রশিল্পী, গায়ক ও নৃত্যশিল্পী গন্ধর্বরা।

শুধু হিন্দু পুরাণে নয়, বৌদ্ধ পুরাণেও অপ্সরাদের কথা আছে। পুরাণ অনুযায়ী অপ্সরাদের সংখ্যা ৬০ কোটি। দেবতার ৩৩ কোটি। অর্থাৎ প্রতি দেবতা পিছুর প্রায় তিনজন অপ্সরা। ঋগ্বেদে অপ্সরাদের বলা হয়েছে গন্ধর্বের স্ত্রী। গন্ধর্ব আসলে সুপুরুষ স্বর্গের ইন্দ্রের সভার গায়ক, যন্ত্রশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী। সুরা অর্থাৎ সোমরস তৈরিতে গন্ধর্বরা পটু। সেই গন্ধর্ব ও অপ্সরাদের বিয়ের রীতিকে বলা হয় গন্ধর্ব বিবাহ। অপ্সরা সমুদ্র মন্থনে মেলে। আর গন্ধর্বদের জন্ম বলা হয় ব্রহ্মার ক্লেদ থেকে। সমুদ্র মন্থনে যা কিছু মেলে দেবাসূত্র ভাগ করে নিলেও সুন্দরী অপ্সরাদের ভাগ নিতে রাজি হলেন না বোঝা যায় না। পৌরাণিক এক মতে ইন্দ্রের ছিল ২৬ অপ্সরা। উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচি, অলম্বুষা, মিশ্রকেশী , জানপদী, বিদ্যুৎপর্ণা, অদ্রিকা, পঞ্চচূড়া, সোমা, মরীচি, শুচিকা, অম্বিকা, ক্ষেমা, অসিতা, সুবাহু, সুপ্রিয়া, সুগন্ধা, সুরসা, বিশ্বাচী, পূর্বচিত্তি, প্রম্লচা, বর্গা, প্রমথিনী, কাম্যা, শারদ্বতী, গুণবরা, ঋতুস্থলা, বুদ্ধুদা, সৌরভেয়ী, ইরা, চিত্রাসেনা , সমীচি, চারুনেত্রা, পুঞ্জিকাস্থলা , শুচিস্মিতা, বিশালনয়না প্রমুখ। (চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ১৩ জুন,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *