বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব ৭০

বৌদ্ধযুগে লিখিত শুদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকে সেযুগের গণিকাদের বিবরণ মেলে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গত পর্বে বৌদ্ধ যুগের গণিকা সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছি।সট সময়ের বিখ্যাত সাহিত্য মৃচ্ছকটিক নাটক।সুকুমরি ভট্টাচার্য তাঁর প্রাচীন ভারতে নাফিট ও সমাজ গ্রন্থে প্রাচীন ভারতে গণিকা প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,, কিন্তু মানুষ হিসেবে সমাজের কাছে টার্ট পাওনা ছিল অবিমিশ্র অবজ্ঞা ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য। ধরা যাক মৃচ্ছকটিকের নায়িকা বসন্তসেনার কথাই ( একমাত্র তারই পূর্ণাবয়ব চিত্র আমরা পাই সাহিত্যে) রূপে যৌবনে সে অতুলনীয়, শিক্ষাদীক্ষায়, রুচিতে চরিত্রে মহানুভবতায় সে অনন্যা; উজ্জয়িনীর নগরলক্ষ্মী। কিন্তু তার নিজের অনুচর বিটই বারে বারে তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সে শ্মশানের জুঁই গাছের ফুলের মতোইট, তার পছন্দ -অপছন্দ ভাললাগা- মন্দলাগা থাকতে প্রের না। এই তাচ্ছিল্য যদি গণিকাশ্রেষ্ঠা বসন্তসেনার প্রাপ্য হয় তবে অন্যদের কথা না বলাই ভাল। যার নাম নগরশোভনা, নগরমন্ডনা, জনপদকল্যাণী তার অন্যান্য নামগুলির মধ্যে প্রগাঢ় অবজ্ঞা ঘৃণা প্রকাশ পায়। গণিকা সম্বন্ধে সমাজের এ দ্বৈধমনস্কতা একটা লক্ষ্যণীয় ব্যাপার।( পৃষ্ঠা ৭১)

বৌদ্ধযুগেও নারী ছিল পুরুষের ভোগের বস্তু।

এবার উল্লেখ করব সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্তে বাসিনী গ্রন্থে বৌদ্ধ ও জৈন যুগের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন,,,, বৌদ্ধদের আদর্শ কুলবধু হিন্দুদের মোট তবে, যেমন হিন্দু সমাজে তেমনই বৌদ্ধদের মধ্যে, সর্বক্ষেত্রে যে গৃহিণীর প্রতি স্বামী সুবিচার করতেন, তা মনে হয়ত না।বৌদ্ধসাহিত্য থেকে জন্য যায় যে, ধনীদের কাছে স্ত্রী ভোগের সামগ্রী বাসস্থান এসবের একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। হিন্দুদের শাক্ত সাহিত্য থেকেও এই কোথায় মনে হয় যে, বৈদিক যুগে নারীর ধর্মচর্চায় পুরুষের সমান অধিকার থাকলেও, তিনি গৃহে সম্রাজ্ঞীরূপে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীকালে পুরুষের তুলনায় তাঁর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ স্পষ্ট।

জৈন ভিক্ষুদের কাছেও নারী ছিল ব্রাত্য।

লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন, জৈন সম্প্রদায়ের নৈতিক নিয়মাবলীর কঠোরতা সুবিদিত। নারীদের সংসর্গ এড়াবার জন্য ভিক্ষুদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু নীতি ও আচরণে তফাৎ ছিল অনেক। জৈনদের ছেদসূত্রে ভিক্ষুদের যৌন স্খলনের বিশ্লেষণ আছে, আছে ফাঁদ এড়াবার উপদেশাবলীও। বাস্তবক্ষেত্রে অধিকাংশ ভিক্ষুই স্ত্রী বিমুখ ছিলেন; কিন্তু কতক জৈনকূলকলঙ্ক দুরাচার ভিক্ষু কাঞ্চন না হউক কামিনীতে আসক্তি ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে পানি এবং বিলাস ক্রীড়ায় লিপ্ত হতেন। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব , আগামী সোমবার ১৬ ডিসেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *