বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৬৬


সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বৈদিক যুগে যে গণিকা বৃত্তি চলত সেতো হাজার তথ্য আছে। স্বউপার্জনের অধিকার যেমন ছিল, তেমন রাজকোষ থেকে গণিকাদের ১৫০০ থেকে ২০০০ পণ বার্ষিক বেতন দেওয়া হতো। এই প্রসঙ্গে বহু তথ্য দিয়েছেন গবেষক, শিক্ষিকা সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন,,,,, যদি কেউ কোনো গণিকার নিস্ক্রয় দিয়ে তাকে মুক্ত করতে চাইত বা বিবাহ করতে চাইত, তার রাজকোষে ২৪০০০ পণ নিস্ক্রয় মূল্য দিতে হতো। এ অনেক টাকা, কিন্তু গণিকার বেতনও অনেক টাকা। রাষ্ট্র কেন গণিকার শিক্ষার ভার নিত, তার একটা কারণ হল, রাজা এবং তাঁর সভাসদরা অনেক সময়ই বিনোদনের জন্য যুবতী ও সুন্দরী গণিকাদের ডাকতেন। আর একটা কারণ হল, গণিকারা সুকৌশলে তাদের খদ্দেরদের ডাকতেন। আর একটা কারণ হল, গণিকারা সুকৌশলে তাদের খদ্দেরদের যে সব রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক সংবাদ আদায় করত, সেগুলি সংগ্রহ করার জন্যই অধিকাংশ সময়ে গণিকাধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হত।( পৃষ্ঠা :৪৯)

গণিকাবৃত্তি সম্পর্কে সুকুমারী ভট্টাচার্য আরও লিখেছেন,,,,,,,কিন্তু গণিকারা প্রায় স্বাধীনভাবেই ধনী হতো; অধিকাংশ নগরে তাদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ তাদের নগরশোভিনী বলা হতো, এবং তার ধনী নাগরদের আকর্ষণ করতে পারত। ধম্মপদের টীকায় সালাবতীর কন্যা সিরিমার প্রতি রাত্রে ১০০০ পণ উপার্জন করার বিবরণ পাই। গণিকার তুলনায় সামাজিক ও পরিশীলনের দিক থেকে নিকৃষ্ট রূপা, যে সাধারণত রূপাজীবা , যে সাধারণত মদ মাংস ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসবাস করত, তার উপার্জন ছিল মাত্র ৪৮ পণ। কোনো পূরুষ গণিকার কন্যার উপরে বলাৎকার করলে তার ৫৪ পণ দণ্ড হতো এবং মায়ের প্রাপ্যের ১৬ গুণ দণ্ডও দিতে হতো, হয়তো তার বিবাহের সময়ে মুখবন্ধ করার উপায় হিসেবে। পুংশ্চলী এই উপজীবিকার শেষ ধাপে , তাঁর কোনো বাঁধা প্রাপ্য ছিল না । কৌটিল্য বলেছেন , বৃদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত বেশ্যাদের রাঁধুনী, ভান্ডারী পশম ও তসর বয়নকারিণীরূপে এবং অন্যান্য কায়িক শ্রমের কাজে নিয়োগ করতে হবে। (চলবে)

পরবর্তী পর্ব: আগামী ২ ডিসেম্বর , সোমবার ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *