বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৬২

মহাভারত রচনাকার কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস নারী সৃষ্টির কল্পনা ছিল পুরুষতান্ত্রিকতার ছাপ।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আগের দুটি পর্বে কথা হচ্ছিল রামায়ণ -মহাভারত প্রসঙ্গে। ধর্মজ্ঞ ভীষ্মের নারী সম্পর্কে ধারণা ও মন্তব্য কিছু পেয়েছি । বারবণিতা প্রবন্ধে ভীষ্মের আগমনের আরও কিছু কারণ আছে। শুধু ভীষ্ম কেন , মহাভারত রচনাকার হিসেবে যাঁর নাম সর্বজন স্বীকৃত সেই কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের নারী চরিত্র সৃষ্টিতেও মেলে অস্বাভাবিকতা। এই প্রসঙ্গে কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী , প্রাচীন সমাজ গ্রন্থে লিখেছেন,,,,,,,,, মহাভারতের প্রধান সব নারী চরিত্র নিয়ে মহাকবির ভাবনাতেই যেন ছিল অস্বাভাবিকতা। সত্যবতীর জন্ম মৎসীর গর্ভে। তাঁকে যেন শুধু উচ্চবর্ণের জন্ম পরিচয় দেওয়ার জন্য মৎসীকে পান করানো হল রাজা উপরিচর বসুর বীর্য। সেই মৎসী আবার শাপভ্রষ্ঠা অপ্সরা-স্বর্গ বারাঙ্গনা। রাজা উপরিচর তাঁকে ত্যাগ করে দান করেন দাস রাজকে। সহজ কথায় এক ধীবর সর্দারকে। যে কন্যার রাজগৃহে রাজকন্যারূপে পালিতা হওয়ার কথা, তাকে বেছে নিতে হয় খেয়া পারাপারের কাজ। যে কাজ মহাভারতের যুগেও ছিল শূদ্রকর্ম। সত্যবতীর জন্মবৃত্তান্ত যাই হোক আসলে তিনি তো এক জেলেনি। অম্বিকা অম্বালিকাকে হরণ করে এনে সত্যবতীর পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নাহলে তাদের সত্যবতীর পুত্রবধূ হওয়ার কথা নয়। অপুত্রক অবস্থায় তাঁরা বিধবা হলে বংশধারা রক্ষার নামে সত্যবতী তাদের বাধ্য করেছিলেন বিকটদর্শন ব্যাসদেবের সঙ্গে মিলিত হতে। নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে সঙ্গম তাকে তো ধর্ষণই বলা হয়। অম্বিকা অম্বালিকা ধর্ষিতাই হয়েছিলেন। ( পৃষ্ঠা ১২৩)

মহাভারত রচনাকার কুন্তী চরিত্র নির্মাণেও বিতর্ক সৃষ্টি করেন।

লেখক মহাভারতের আরেক চরিত্র কুন্তী সম্পর্কেও লিখেছেন। কুন্তীকে তুলে দেওয়া হয়েছিল যৌন অক্ষম এক রাজপুত্রের হাতে। রামায়ণ মহাভারতে রামচন্দ্র বা ভাইদের কিম্বত মহাভারতের পাণ্ডবদের কোনো কন্যাসন্তানের উল্লেখ নেই। অর্থাৎ যুগযুগ ধরেই সমাজে নারীর আলাদা অস্তিত্ব বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়নি। নারী যৌন ক্রীড়ার বস্তু ও সন্তান ধারণের যন্ত্র হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছে। সেযুগে শুধু অর্থের বিনিময়ে পেশাদার গণিকা নয়, গৃহস্থের ঘরের পতি গৃহে অতিথি এলে তার সেবায় নিজের স্ত্রীকে তুলে দিতেন। মহাভারতের অনুশাসন পর্বের উল্লেখ করে লেখক কঙ্কর সিংহ তাঁর প্রবন্ধ নারী নিন্দায় মহাভারতে লিখেছেন,,,,,, মহাভারতে হুতাশনের পুত্র সুদর্শন তাঁর গৃহে আগত অতিথিকে বলছেন , ব্রাহ্মণ, আপনি পরম সুখে আমার ভার্যাকে নিয়ে সম্ভোগ করুন।e ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র অসন্তোষ নেই। অতিথিসৎকার করা গৃহস্থের পরম ধর্ম।(১৩/২) পতি নামক দেবতা চাইলে তার পত্নীকে অপর যেকোনও পুরুষের উপভোগের জন্যে নিযুক্ত করতে পারতেন। সেখানে পত্নীর মতামতের কোনও প্রশ্ন নেই। পতি যা ইচ্ছা করবে, পত্নীকে তাই করতে হবে। সেটাই হল নারীর ধর্ম। এতে তার শুচিতা নষ্ট হত না। ,,,,,, মহাভারতে রাজধর্ম আলোচনায় কাদের বাদ দিতে হবে সেই তালিকায় ছিল বামন ( বেঁটে), কুব্জ, অন্ধ, খঞ্জ, ক্ষীণকায় ব্যক্তি, নপুংসক, বুদ্ধিহীন ব্যক্তি ও অবশ্যই স্ত্রীলোক। এই অসুস্থ তালিকায় সুস্থ স্ত্রীকেও রাখা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহল অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র রাজা হলেন কি করে? উত্তর টা আগামী পর্বে দেব।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব , সোমবার ১৮ নভেম্বর ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *