বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৪১

বৌদ্ধযুগের গণিকা আম্রপালী।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গ্রিক মিশরের প্রাচীন যুগ ছেড়ে রামায়ণ মহাভারতের সময়ের আগে বৈদিক যুগের আবার ফিরে যাই।এটি আগেই জানিয়েছি বৈদিক যুগে গণিকাদের কিছু স্তর ছিল। রাজা, রাজন্যবর্গ, পুরোহিত বা উচ্চবর্ণের ও ধনীদের মনোরঞ্জনে ছিল নগরীর সেরা সুন্দরীরা।শুধু সৌন্দর্য নয়,গুন্ট ছিল অন্যতম বিষয়। এঁদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ছিল রাজার দায়িত্ব। নিজস্ব রাজকোষ থেকে অর্থ বরাদ্দ করতেন তাঁরা। বৌদ্ধগ্রন্থতে বলা আছে রাজগৃহে সালাবতী প্রতি রাত পিছু একশত কার্যাপণ দাবি করত। আম্রপালীর দক্ষিণা নিয়ে রাজগৃহ ও বৈশালীর মধ্যে বিবাদও হয়েছিল। এমনই তথ্য পাই সুকুমারী ভট্টাচার্যের প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ গ্রন্থের নারীর অর্থনৈতিক অধিকার শীর্ষক প্রবন্ধের ৪৯ পৃষ্ঠায়।

বৈদিক যুগে রাজার মনোরঞ্জনে গণিকা।

লেখিকা এই গ্রন্থে আরও লিখেছেন, রাজকোষ থেকে গণিকাদের ১৫০০ থেকে ২০০০ পণ বার্ষিক বেতন দেওয়া হত। যদি কেউ কোনো গণিকার নিস্ক্রয় দিয়ে মুক্ত করতে চাইত বা বিবাহ করতে চাইত তার রাজকোষে ২৪০০০ পণ নিষ্ক্রয় মূল্য দিতে হতো।,,,,,,, রাষ্ট্র কেন গণিকার শিক্ষার ভার নিত, তার একটা কারণ হল, রাজা এবং তাঁর সভাসদেরা অনেক সময়েই বিনোদনের জন্য যুবতী ও সুন্দরী গণিকাদের ডাকতেন। আর একটা কারণ হল গণিকাবা সুকৌশলে তাদের খদ্দেরদের কাছ থেকে যে সব রাজনৈতিক ভাবে প্রাসঙ্গিক সংবাদ আদায় করত, সেগুলি সংগ্রহ করার জন্যই অধিকাংশ সময়ে গণিকাধ্যক্ষ নিযুক্ত হতো।

চিত্রকূট পাহাড়ে রাম ভরতকে পাদুকা দান করে পরামর্শ দিলেন, ব্রাহ্মণদের সন্তুষ্ট রাখতে।না হলে ওঁরা প্রজাদের উস্কে বিদ্রোহ করাতে পারেন।

বিষয়টা একটু খোলসা করা প্রয়োজন। সেযুগেও রাজারা বিরোধী ও বিদ্রোহীদের সম্পর্কে সজাগ থাকতেন। রামায়ণের পাতায় উল্লেখ আছে রাম বনবাসে, ভরত রামেরপাদুকা বসিয়ে রাজ্য শাসন করেন। সেই সময়ে চিত্রকূট পাহাড়ের বসে রামচন্দ্রের নির্দেশে দেন আমার অবর্তমানে ব্রাহ্মণ সমাজে যেন বিদ্রোহ না দেখা দেয়। প্রজাদের যেন ক্ষেপিয়ে তোলা না হয়। উৎকোচ দিয়ে তাঁদের বশীভূত করে রাখবে। এই রজত সিংহাসন হারানোর ভয় সবযুগেই ছিল। গণিকারা যেহেতু সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সান্নিধ্যে আসতেন তাঁরই সঠিক খবর দিতে পারতেন বিদ্রোহের কেউ সামিল কি না।

ঋগবেদে দশম মণ্ডলে এক নারী সরমার উল্লেখ আছে। গণিকাবৃত্তি তথা গুপ্তচরবৃত্তি ছিল তাঁদের জীবিকা।

প্রমাণ হিসেবে ঋগ্বেদের ১০ ম মণ্ডলের একটি পূর্ণ সূক্ত , কথোপকথনের ঢং – এ আর্যদের ভারত আগমনের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বর্ণনা করেছে সুন্দরভাবে। স্বপন কুমার বিশ্বাসের ভারতবর্ষের মূল নিবাসী ও আর্য আক্রমণ গ্রন্থের ( প্রকাশক : অনগ্রসর সমাজকল্যাণ সমিতি) তৃতীয় পরিচ্ছদের প্রাচ্যের পরাজয় নিবন্ধে ৮১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন,,,,, পণিগণ: হে সরমা ! তুমি কি বাহানায় ( অজুহাতে) এ স্থানে এসেছ? এ অতি দূরের পথ । এপথে আসতে গেলে পশ্চাৎ দিকে ( home sick) দৃষ্টি করলে আসা যায় না। আমাদের নিকট কি এমন বস্তু আছে যে জন্য এসেছ? ক রাত্রি ধরে এসেছ? নদীর জল পার হলে কি করে? ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব , আগামী ৬ সেপ্টেম্বর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *