বেশ্যার বারোমাস্যা

*

পর্ব ৯

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়,: এই পর্বে একটু পিছিয়ে যাই পুরাণের যুগে। পুরাণে বেশ্যা বলা হয়েছে অপ্সরাদের । বেশ একটু সাজিয়ে গুছিয়ে বলা হয় স্বর্বেশ্যা। আগেও বলেছি বেশ্যা শব্দের অর্থ আজ যতটা ঘৃণার সঙ্গে ব্যবহার হয় পুরাণের যুগে তেমনটা ছিল না। তবে এঁদের শুধু ভোগ্যবস্তু হিসেবে দেখা হলেও সমাজে মান্যতা ছিল। কবি ঘনরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যে বলা হয়েছে মৃতদেহে যে ফুল অর্পণ হয়,সে ফুলের মতই বর্জনীয়। অর্থাৎ বেশ্যা বিছানার সঙ্গী হলেও স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না। তাই অপ্সরা শব্দের এক অর্থ যেমন সুন্দরী তেমন আর একঅর্থে যৌনতার গন্ধ। কাব্যের শ্লোকটি শ্মশানকুসুমসম বর্জনীয়া। এক অপ্সরার নাম রম্ভা। অর্থাৎ যে অপ্সরার উরু কলাগাছের কান্ডের মত। স্বয়ং বিষ্ণুর উরু থেকে যার জন্ম। উর্বশীর জন্মও নাকি বিষ্ণুর উরু থেকে। উরু শব্দের আরেক অর্থ মহাপুরুষ। মহাপুরুষদের বশে রাখার কাজ যিনি করেন তিনিই উর্বশী। যেমন নারীকে শরীরের গঠন নিয়ে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। পদ্মিনী। অর্থ যে যে নারীর চোখ পদ্মের পাপড়ির মত । এঁরা মিষ্টি কথা বলেন। অতি যৌনতা এঁরা পছন্দ করেন না। শরীর সুললিত। নাচে গানে পারদর্শী। রমণীদের মধ্যে এঁরা সেরা। আরেক স্তরের নারীকে চিত্রিণী নামে ভূষিত করা হয়েছে। এই গোত্রের মেয়েরা না মোটা, না রোগা। এঁদের নাভি সুন্দর। বুঝুন নারীর নাভি নিয়েও হিন্দু পুরাণে গবেষণা হয়েছে। এঁদের মুখে হাসি থাকে সর্বক্ষণ। ধীরগতি সম্পন্না। শরীর নরম। মানে ছুঁলেই তুলতুলে। বেশি খায় না। বেশি ঘুমোয় না। এক পুরুষে বিশ্বাসী। আর এক শ্রেণীর নারী শঙ্খিনী। এঁদের চোখ কান, হাত পা বড় হয়। চঞ্চল প্রকৃতির সর্বশেষ হস্তিনী। এই গোত্রের নারীরা ভারী শরীরের অধিকারিণী। গলার আওয়াজ তীব্র। প্রচুর খেতে ঘুমোতে ভালোবাসে। ধম্মে কম্মে মতি হয় না। পরকীয়াতে আসক্তি থাকা অস্বাভাবিক নয়। নারীকে যেমন ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলা হয়েছে তেমন সেরা ভোগের বস্তু বলেই নারী নিয়ে এত গবেষণা।

পদ্মিনী নারী

স্কন্দ পুরাণে নজর দেওয়া যাক। স্কন্দ অর্থাৎ কার্তিক। অনেক পুরাণে যাঁকে পুরুষ বেশ্যা ইংরেজিতে যাকে গে বলে। স্কন্দ পুরাণে নারীর আটটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ হয়েছে।১) ভাপুস ( অঙ্গ), আবর্ত ( কুঁচকানো),৩) শরীরের গন্ধ,৪) ছায়া ( জাঁকজমক) , ৫)সত্ত্বা ( মানসিকতা), ৬)স্বর ( কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা) , ৭)চলন ও ৮) বর্ণ। পায়ের তল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত বর্ণনা দেখা যাক। নারীর শরীর ৬৬ টি অংশে ভাগ করা হয়েছে।১) পায়ের তল,২) পায়ের ওপরের রেখা ৩) বুড়ো আঙ্গুল,৪) অন্যান্য পায়ের আঙ্গুল,৫) পায়ের নখ ৬) পায়ের উপরের অংশ ৭) দুটি হিল,৮) গোড়ালি, ৯)বাছুর ( পায়ের পশ্চাৎ ভাগ),১০) চুল,১১) হাঁটু,১২) উরু,১৩) ঠোঁট,১৪) নিতম্ব ,১৫) কটি দেশের সামনের অংশ,১৬), যোনিপথ ১৭) নাভির নিচের অংশ,১৮) নাভি,১৯) পেটের দুই ধার ২০) পেটের মধ্যবর্তী অংশ,২১) হৃদপিন্ড ২২) বুক ২৩) দুই স্তন,২৪) স্তন বৃন্ত ২৫) যক্রু ( কাঁধের যুক্তস্থল) ২৬) কাঁধ ২৭) বাহুর মূল,২৮) হাত ২৯) দুই কব্জি ৩০) হাতের পিছনের অংশ ও কনুই ৩১) তালু ৩২) তালুতে রেখা ৩৩) হাতের বুড়ো আঙ্গুলের নিচের ভাগ ৩৪) হাতের আঙ্গুল ৩৫) হাতের আঙ্গুলের নখ ৩৫) পিঠ ৩৬) ঘাড়ের মাপ ৩৭) চিবুক ৩৮) ঠোঁটের নিচের অংশ,৩৯) চিবুকের দুটি অংশ,৩৯) গাল ৪০) মুখ ৪১) নিচের ঠোঁট ৪৪) উপরের ঠোঁট ৪৫) দাঁত ৪৬) জিহ্বা ৪৭) জিহ্বার নিচের অংশ ৪৮) হাতের তালুর উপরিভাগ ৪৯) হাসি ৫০) নাক ৫১) নাকের পাটা ৫২) হাঁচি,৫৩) চোখ ৫৪) চোখের পাতা ৫৫) ভ্রু ৫৬) কান ৫৭) কপাল,৫৮) মাথা ৫৯) মাথার মাঝখানের অংশ ৬০) চুলের ঘনত্ব ৬১) চুলের গোছা ৬২) চুলের মসৃণতা ৬৩) সারি চুল,৬৪) কোঁকড়ানো চুল ৬৫) কপালের মধ্যভাগ ৬৬) কানের লতি।

খাদ্যদ্রব্যের মত নারীর গুণগত মানও নির্ধারিত আছে। সেরা জাতের নারীর পায়ের তল হবে চকচকে। মাংসল শরীর কিন্তু তন্ন্বী। ঘামবে না, কিন্তু উষ্ণ। রং গোলাপি পায়ের আঙ্গুল লম্বা হলে সে লজ্জাহীনা। ছোট হলে অল্পায়ু। পায়ের আঙ্গুল চ্যাপ্টা হলে সেরা দাসী। আঙ্গুলে ফাঁক বেশি হলে দরিদ্র। পায়ের আঙ্গুল যদি একটির ওপর একটি ওঠে সে স্বামীঘাতক । হাঁটার সময় বেশি পায়ে ধুলো উড়লে সেই নারীর বেশ্যা হওয়ার সম্ভাবনা। অর্থাৎ শারীরিক কিছু লক্ষণ যেমন নারীর বেশ্যা হওয়ার পক্ষে তেমন কিছু কিছু আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন সারা বেশ্যার তকমা মেলার জন্য সহায়ক। যত বেশি সহায়ক তত বেশি কদর। পাঠকের নিশ্চয়ই মৃচ্ছকটিক গল্পে বসন্তসেনার কথা মনে আছে সেক্ষেত্রে রেখা অভিনীত উৎসব ছবিটি দেখতে পারেন। ( চলবে)

পর্ব: ১০, আগামী সোমবার ৬ই মে

*

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *