পর্ব: ১৯
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বেশ্যা শব্দের মোটামুটি ৫০ টি প্রতিশব্দ মেলে। সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ গ্রন্থে প্রাচীন ভারতে গণিকা শীর্ষক পর্বে লিখেছেন,,,, বলা বাহুল্য এই প্রায় পঞ্চাশটি প্রতিশব্দের উদ্ভব একসময়ে হয়নি, এক স্থানেও হয়নি। ধীরে ধীরে আঞ্চলিক ও কালিক বিকল্পের মধ্যেই নামগুলি সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন করা যেতে পারে, ভারতবর্ষে গণিকাবৃত্তি কত প্রাচীন? এর উত্তরে বলা যায়, ভারতবর্ষে শুধু নয়, সর্বত্রই গোষ্ঠী ও কৌম ভেঙে পরিবারের পত্তন হচ্ছিল তখন থেকে, অর্থাৎ নারীর উপর যখন পুরুষের স্বত্বাধিকার সমাজ মেনে নিতে শুরু করেছে তখন থেকেই আছে গণিকাবৃত্তি । তখন থেকেই পরিবারের নির্দিষ্ট সীমার বাইরে কোনো নারী যখন অন্য পুরুষকে অর্থ বা বস্তুর প্রাপ্তির বিনিময়ে দেহদান করে তখনই সে গণিকা বলে চিহ্নিত হয়। এরমধ্যেও প্রথম পর্যায়ে নিশ্চয়ই নানা স্তর ছিল; দুজনের সম্মতিক্রমে বিবাহগণ্ডির বাইরে পুরুষ বা নারীর এমন সম্বন্ধ ঘটলে তারা জার বা জারিণী বলে অভিহিতহতো। এ শব্দ দুটি ঋগবেদে বহু বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে।( পৃষ্ঠা -৫৮)
আরবের নারী নির্যাতনের খেলা তাহাররুশ জামাই এখন ইউরোপেও জনপ্রিয়।
নারী যে পুরুষের বিলাস সামগ্রী ও সন্তান উৎপাদনের হাতিয়ার, এই ধারণা আজও ২১শতাব্দীতেও। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। উদাহরণ হিসেবে আরবের কথা বলি। সেখানে প্রতি বছর এক উৎসব হয়। নাম তাহাররুশ জামাই। অর্থ গণ ধর্ষণ খেলা। প্রস্তর যুগের খেলা আধুনিকীকরণ হয়েছে। শুনলে বিশ্বাস হবে না খেলাটি এখন ইউরোপেও জনপ্রিয় হচ্ছে।২০২০ তে আরবের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের গদিচ্যুত হওয়ার খবর সংগ্রহ করতে এক মহিলা সাংবাদিক এই খেলার নামে নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিলেন। এই খেলার নিয়ম কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের ভিড়ে কিছু মদ্যপ যুবক একটি মেয়েকে লক্ষ্য রাখবে। ভিড়ের মধ্যে তার জামাকাপড় টানবে। একসময় ছিঁড়ে দেবে । মেয়েটি কাতর হয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় যত করুণা ভিক্ষা করবে তত আনন্দ বাড়তে থাকবে ওই সব বিকৃত মনের যুবকদের। এরপর শুরু হবে যৌথভাবে মেয়েটির বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করা। কয়েকজন মিলে ঘিরে রাখে। যাতে মেয়েট p পালাতে না পারে।২০২১ এ জার্মানিতে বর্ষবরণের রাতে বেশ কয়েক জায়গায় এই খেলায় মাতেন জার্মানির যুবকেরা। মেয়েটি পোশাক হারিয়ে যখন নগ্নপ্রায় তখন সেই মেয়েটির সঙ্গে সেলফি তোলা। সমীক্ষা বলছে ,বিগত বছরে ইউরোপের অস্ট্রিয়া , সুইডেনও ফিনল্যান্ডের মত দেশেও এই খেলার নামে অপরাধ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মনু সংহিতায় নারী ভোগ্য ও সন্তান উৎপাদনের সামগ্রী।
নারীর ওপর পূরুষের অধিকার এমন ধারণার থেকে গণিকা সম্ভোগ সমাজে স্বীকৃতি পেয়ে আসে বিশ্বজুড়েই। ভারতে বাৎস্যায়ন গণিকাবৃত্তির সাংগঠনিক রূপ দিয়ে গেছেন। কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী প্রাচীন ভারত গ্রন্থে প্রাচীন ভারতে গণিকা শীর্ষক অধ্যায়ে যা লিখেছেন , তা উল্লেখ আছে মনু সংহিতায় ৯/৩ শ্লোকে। যার নির্যাস প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় সমর্থনে ও অনুশাসনে যে বারাঙ্গনাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল তাতে রাজা, অভিজাত ধনী সম্প্রদায়, বণিক , বেতনভূক কর্মচারী, কৃষিজীবী এবং সন্ন্যাসী সবই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এখানে ধনী -নির্ধন ব্রাহ্মণ – চন্ডাল , বিদ্বান ও মূর্খের কোন পার্থক্য ছিল না। ধর্ম শাস্ত্রগণ কোন বর্ণের পুরুষের জন্যই বারাঙ্গনা সম্ভোগের কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি। প্রাচীন ভারতের ধর্মাশ্রয়ী সমাজজীবনের ব্যবহারিক বুদ্ধিও বলে, বারাঙ্গনা ভোগের দ্বারা অর্থ ও ধর্ম দুই উদ্দেশ্যই সাধিত হয়। পূর্ণ হয় পৌরুষের অভিমান,,, সমস্ত কলাবিদ্যাতে নিপুণতা জন্মায়। বুদ্ধিতে ও বাক্যে পটুত্ব অর্জিত হয়।,, লোকের সম্মান পাওয়া যায়। বন্ধুদের ভালোবাসা , ভৃত্যাদির পরিজনের শ্রদ্ধা অর্জন সম্ভব হয়। ভাষণে সুমিষ্টতা, ব্যবহারে দাক্ষিণ্য , বীর্যের আধিক্য সব কিচুই পাওয়া যায় নারী সম্ভোগে।( চলবে)
পর্ব : ২০, আগামী শনিবার ২২ জুন।