**
দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : ৮ মে, আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস।থ্যালাসেমিয়া রোগটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের অল্পতা। একে রক্তের ক্যান্সারও বলা যায়। থ্যালা শব্দের গ্রিক অর্থ সমুদ্র। হাইমা অর্থ রক্ত।j জন্ম থেকেই শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। বলা হয় বিশ্বে প্রথম গ্রিসের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে এই রোগেরপ্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছিল। মাত্র ৯৯ বছর আগে আমেরিকার বিজ্ঞানী টমাস কুলি ও প্যারোল লি প্রথমএই রোগ চিহ্নিত করেন। জিনগত সমস্যা থেকেই এই রোগের উৎপত্তি। সারাজীবন রোগীকে অন্য রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হয়। জীবন হয় ক্ষণস্থায়ী । বাবা মায়ের রক্তের ত্রুটি থেকেই সন্তান আক্রান্ত হয়। রোগটি কোনো সংক্রামক নয়। তবু মানুষের একাংশের কুসংস্কার রয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত এই রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই দরকার সচেতনতা। বিশ্বে প্রায় নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা ২৭ কোট। ভারতে এই রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ।প্রতি বছর দেশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার শিশু এইরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেহেতু সচেতনতা এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় তাই জেনেটিক রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্বজুড়ে ৮ মে তারিখ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়।
এই দিনটিকে স্মরণে রেখে হাওড়া শহরের নারায়ণা হাসপাতাল দুই সমাজসেবী সংস্থা ধাত্রী ও কলকাতা হেমাটোলজি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ( খেরি) র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল বিনামূল্যে থ্যালাসেমিয়া বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট নিরীক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে মঙ্গলবার ৭ মে। এদিন ৩০ এর বেশি শিশু ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এইচ এল এ একটি পরীক্ষা যেখানে থ্যালাসেমিয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র চিকিৎসা সুস্থ মানুষের স্টেম সেল রোগীর দেহে সঞ্চালন করে সম্পুর্ণ সুস্থ করে তোলা। এদিন প্রায় স্টেমসেল দানে ইচ্ছুক প্রায় ১০০ জনের সওয়াব নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করার ব্যবস্থা হয়।অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে একটি প্রিভিলেজ কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রতি তিনমাস অন্তর বিনামূল্যে চিকিৎসকের পরামর্শ , হেমাটোলজি প্রোফাইলিং , ফেরিটিন পরীক্ষা , সেরোলোজি পরীক্ষা, লিভার টেস্ট করা হবে।
এই হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক রাজীব দে বলেন,যেহেতু থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো ওষুধ নেই তাই সুস্থ লোকের স্টেমসেল সংগ্রহ করে রোগীর দেহে স্থাপন করলে রোগী সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে । তবে সেই স্টেম সেল হতে হবে রোগীর ভাই বা বোনের। ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক চিকিৎসক ও খেরির সভাপতি উৎপল চৌধুরী বলেন, দেশের এই ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্ত করতে আমরা শিবিরের আয়োজন করে ভবিষ্যতের মা বাবাকে সচেতন করি। নারায়ণা হাসপাতালের ঐকান্তিক এই ইচ্ছায় আমরা সহযোগী হয়েছি। স্টেমসেল প্রতিস্থাপন খুবই খরচাসাপেক্ষ। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ও বেসরকারি উদ্যোগে আজ বিনামূল্যে রোগ নির্মূলের চিকিৎসা আর্থিক দুর্বলদের কাছে পৌঁছে গেছে। এদিনের শিবিরেরঅন্যতম সহযোগী ধাত্রী ব্লাড স্টেম সেল ডোনারস্ রেজিস্ট্রির আঞ্চলিক প্রধান ( উত্তর) বিন্দিয়া সাহনি বলেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পাশে মানবিক শর্তে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। সচেতন নাগরিকদের বেশি করেস্টেমসেল দানে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের স্থির বিশ্বাস দেশ থেকে একদিন আমরা থ্যালাসেমিয়ার মত মারণ রোগ নির্মূল করতে পারবো। এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল সংবাদপত্রে পাত্রপাত্রী বিজ্ঞাপনে গোত্র, বর্ণ ধর্মের বিবরণ দিতে যতটা উৎসাহী ততটা থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা সে ব্যাপারে উদাসীন । এই ব্যাপারে চিকিৎসকদের প্রতিক্রিয়া কি? জবাবে চিকিৎসক রাজীব দে বলেন আমরা বাহকদের বিয়েতে আপত্তি করি না। করা যায় না। আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইন তাই বলে। তবে বলি বিয়ের আগে তাঁরা যেন সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।