*
দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: নোবেল পুরষ্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ইউরোপিয়ান লবির প্রভাবশালীদের আগ্রাসনে এশীয় বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিক বিজ্ঞানীরা যোগ্যতা সত্ত্বেও ব্রাত্য থাকেন। যে তালিকায় রাখা যায় বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্রকে তেমনই রাখা যায় অধ্যাপক মৃণাল ঠাকুরের ক্ষেত্রে।প্রবাসী ভারতীয় বিজ্ঞানী অধ্যাপক মৃণাল ঠাকুর বিশ্বের সেরা স্বীকৃতি নোবেল পুরস্কারের আয়োজকদের বিরুদ্ধে অনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দুযুগ থেকে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নোবেল কমিটির দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরতে সাংবাদিক সন্মেলনের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন।
বঙ্গসন্তান রবীন্দ্রভারতী থেকে স্নাতক হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যান চেন্নাই।সেখানে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই মূহূর্তে তিনি মার্কিন দেশের অবার্ন ইউনিভার্সিটির ফটোনিক ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর পদে আসীন। তাঁর অভিযোগ,১৯৮৮ সালেই পরিবাহী পলিমার আবিষ্কারের জন্য রসায়নে ২০০০ সালের পুরষ্কার দেওয়া হয় সংযোজিত পরিবাহী পলিমার আবিষ্কারের ভিত্তিতে। অথচ অত্যাধুনিক নন কনজুগেটেড পলিমার আবিষ্কারের মত বৈপ্লবিক কাজের জন্য পুরষ্কার প্রাপ্য ছিল মৃণাল ঠাকুরের। এই আবিষ্কার স্বীকৃত হলে অন্যান্য বিষয়ের বাইরে থাইরয়েড ক্যান্সার মুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক দিশা দেখাতে পারত।
মৃণাল ঠাকুরের অভিযোগ, নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁদের ওয়েবসাইটে ২০০০ সালের রসায়নে নোবেলের জন্য পুরস্কারের যে নথি সংরক্ষিত করেছে তা মৌলিকত্ত্বের ভিত্তিতে ভুল। সেই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র সংযোজিত পলিমারগুলি বৈদ্যুতিক ভাবে পরিবাহী হতে পারে। ফলে নোবেল কমিটি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অধ্যাপক মৃণাল ঠাকুর তাঁর প্রতিবাদপত্র পাঠান। তিনি আসার করেছিলেন ভারতীয় বৈদেশিক দফতর তাঁর পক্ষে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু আশ্চর্যের সঙ্গে তিনি লক্ষ্য করেন নোবেল কমিটি ও ভারতীয় বিভাগীয় দফতর উদাসীন। বাধ্য হয় আইনের আশ্রয় নিয়ে তিনি মার্কিন আদালতে সপক্ষে রায় পান। আদালতের রায়ে বলা হয় নোবেল প্রাপকরা স্বীকার করেছেন অধ্যাপক ঠাকুরের পরীক্ষালব্ধ কাজ ওর তত্ত্ব মৌলিকভাবে সঠিক এবং তাঁদের তত্ত্ব মৌলিকভাবে ভুল।
কিন্তু ২০০০ সালের নোবেল পুরষ্কার প্রদানের পর অসংলগ্ন পরিবাহী পলিমার তত্ত্ব আবিষ্কারকহিসেবে যে স্বীকৃতি নোবেল কমিটির দেওয়া উচিত ছিল সেটির উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি নোবেল ওয়েবসাইটে যে ভুল তত্ত্ব ২০০০ সালে সংযোজিত হয়েছে অনড় সেই ভুল তথ্য রয়ে গেছের। এই ভুলটির তুলে ধরার জন্য গত ২০০৩ থেকে তাঁর গবেষণার জন্য নির্ধারিত আর্থিক মূল্য বন্ধ করা হয়েছে।
অধ্যপক ঠাকুরের দাবি ,তাঁর অত্যাধুনিক সুত্রগুলি ২০১৪ এর নোবেল প্রাপকদের থেকে দশ বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক ঠাকুরের আরও দাবি, তাঁর অরৈখিক অপটিক্সের অন্তর্নিহিত মৌলিক পরীক্ষামূলক তত্ত্বের কৃতিত্ব প্রদান করলে ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।অধ্যপক ঠাকুর তাঁর তত্ত্ব চুরির অভিযোগ জানিয়ে মার্কিন আদালতে মামলা করলে বিচারক তাঁর রায়ে বলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিযোগ প্রমাণিত হলেও চুরির বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই।
ফলে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অগ্রগতিকে লবি রাজনীতির বলি দেওয়া হলো।অধ্যপক ঠাকুর ভারতের প্রধানমন্ত্রী,এমআরকিন্ট রাষ্ট্রপতি ও সুইডেনের প্রধামন্ত্রীর কাছে সুবিচারের আশায় পত্র লিখলেও কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া মেলেনি। প্রথমে ২০০০ সালে পরে ২০১৪ সালে দুবার তাঁকে বঞ্চিতকরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তো বিশ্বগুরুত হয়ে মার্কিন দেশে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে দাবি করেন, কিন্তু অধ্যাপক ঠাকুরের বঞ্চনার কথা কি সেখানে তুলেছেন?