মতুয়া সমাজে বিদ্রোহ, নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করে অভিযোগ, শান্তনু ঠাকুর ও মমতাবালা দালাল

মতুয়াদের তিন প্রার্থী। বারাসত, বনগাঁ ও বসিরহাট কেন্দ্রে। বিজেপি , তৃণমূলের ভোট কতটা কাটবেন এঁরা?

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: মতুয়া ঠাকুর পরিবারের দুই সদস্য ব্যক্তি স্বার্থে মতুয়াদের ব্যবহার করে বিজেপি ও তৃনমূলের দালালি করছে। আমরা আর এই পথভ্রষ্ট দালাল পরিবারের প্রতি অনুগত নই। আমরা নিজেদের দাবি আদায়ে ও অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেরাই লড়ব। তাই প্রতীকী হিসেবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ , বারাসত ও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তিন প্রার্থী দিয়েছি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সন্মেলনে একথা জানান শ্রী শ্রী শান্তি হরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সুকেশ চৌধুরী।

তিনি বলেন , ভোটের সময় আমাদের ভালো ভালো কথা শুনিয়ে মন ভোলানোর প্রক্রিয়া দীর্ঘ ৭৭ বছর ধরে চলে আসছে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের গুরুর পরিবারের দুই দালাল দিয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছিল। ঠাকুর পরিবারের দুই সদস্য শান্তুনু ঠাকুর ও মমতাবালা ঠাকুর বিজেপি ও তৃণমূলের দলদাস হয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের বুকে ছুরি বসাচ্ছেন।আমরা ভোট দিয়ে এঁদের ভরসা করে নির্বাচিত করেছিলাম। ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমরা তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া প্রভাবিত অঞ্চলগুলির অন্যতম তিন কেন্দ্র বনগাঁয় আমাদের নেত্রী সুমিতা পোদ্দার, বারাসত কেন্দ্রে সাইফুদ্দিন মণ্ডল ও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে সঞ্জিত বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছি। আরও কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া হবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া, আদিবাসী ও ওবিসি অঞ্চলে প্রার্থী দেওয়া হবে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনেও ৪২ টি কেন্দ্রেই আমরা প্রার্থী দেব।

সংগঠনের আরেক নেতা প্রভাষ বিশ্বাস বলেন, সশোধিত নাগরিক আইন সি এ এ ও নাগরিকত্বের গাজর ঝুলিয়ে এতদিন রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু কথার মারপ্যাঁচে বলা হচ্ছে প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চাই। আসলে আমাদের ঠাকুর পরিবারের সদস্যকে মন্ত্রী করে দালাল তৈরি করা হয়েছে। আমরা আর ফাঁদে পা দিচ্ছি না। সমগ্র মতুয়া সমাজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা নিজেরাই করবে। প্রয়োজন নেই গুরু পরিবারের বিকিয়ে যাওয়া সদস্যদের। আমরা নিজেদের ভুল সংশোধন করে নিজেদের মধ্য থেকে নেতা ও প্রার্থী মনোনয়ন করে বাংলায় বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা করব। শুধু মতুয়া নয়, সংখ্যালঘু, আদিবাসী , ওবিসি সমাজকে জোটবদ্ধ করে বাংলার বুকে দালালরাজ নির্মূল করব। আমাদের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুর নির্দেশিত বেদ বিরুদ্ধ পথেই বাংলার ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব।

বিজ্ঞাপন

বস্তুত রাজ্য ও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এই সংগঠন যে বার্তা পৌঁছে দিতে চান তা হল স্বাধীনতার পরবর্তী ৭৭ বছরে আমরা বিভিন্ন সংসদীয় রাজনৈতিক দলকে শাসকের ভূমিকায় পেয়েছি। পেয়েছি সীমাহীন দুর্নীতি। সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত। উৎপাদক শ্রেণী শ্রমিক কৃষক গরিব থেকে ভিখারিতে পরিণত হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ ফেল প্রথা তুলে দিয়ে গ্রাম বাংলার কৃষক শ্রমজীবী খেটে খাওয়া দেশভাগের ছিন্নমূল বাস্তু নমঃ শুদ্র, আদিবাসী মতুয়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের মুর্খ বানিয়ে গোলামে পরিণত করতে চাইছে। নাগরিকত্ব দেওয়ার টোপ দিয়ে সমাজের বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে শাসক দল। গ্রামীণ ভারতে থাকে ৮০ শতাংশ মানুষ। সেখানে শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল। শিক্ষা ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা না করে ভাতা প্রকল্পের নামে ভিক্ষা দিয়ে মানুষকে কর্ম বিমুখ করে রাখতে চাইছে। দেশ জুড়ে চলছে নারী নির্যাতন, গণতন্ত্রের নামে প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে। দেশভাগের বলি ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে মতুয়া ও সামগ্রিক সমাজের উন্নয়নে শ্রী শ্রী শান্তি হরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউন্ডেশন ও মতুয়া সমাজ আপাতত তিন প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মতুয়া সমাজ আর দালাল প্রার্থীদের ফাঁদে পড়বে না। নিজেদের প্রার্থী নিজেরাই বেছে নেবে। আগামী নির্বাচনগুলিতে আমরা নিজেদের রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছি।

বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *