হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পথে ভোটের আগে আর একধাপ সি এ এ কার্যকর কতটা অশনি সংকেত?

পর্ব : ৪

বাংলা ভাগের প্রধান নায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

প্রত্যেক বিজেপি নেতা ও অন্য দলের নেতারা বলেন, বাংলা ভাগ হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। কেউ বলেন বুঝে। কেউ বলে না বুঝে। বিশেষ করে বিজেপি নেতারা বলেন হিন্দু বাঙালিদের বাংলা ভাগ করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ। নাহলে মুসলমানদের অধীনে থাকতে হত। আসলে যা নির্জলা মিথ্যে। বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু উচ্চবর্ণের চক্রান্তে। কেননা বাম ডান সব দলেরই উচ্চবর্ণের নেতারা বুঝেছিলেন অখণ্ড বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিম্নবর্ণের ও মুসলমান সম্প্রদায়। স্বাধীনতার পর বঙ্গভাগ না করলে ক্ষমতা হাতছাড়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকতেন ফজলুল হক, যোগেন মণ্ডল, বীরেন শাসমল বা শক্তি ঠাকুর। হতে পারতেন উত্তরবঙ্গের রাজবংশী নেতা রায় বাহাদুঠাকুর পঞ্চানন। এই প্রসঙ্গে দেখব বাঙালি ও বাংলা ভাষা গবেষক নীতীশ বিশ্বাস তাঁর ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু অথবা উই পোকার উপাখ্যান বইয়ে তিনি কি লিখেছেন। বাঙালি বাঙালি বলে আজ কলকাতার ভোট ভিক্ষুক বর্ণ হিন্দু নেতাদের কুম্ভীরাশ্রুর তলায় তাই কোনো সার পদার্থ নেই। বহুদিন আগেই হীনস্বার্থে মনুবাদের কাছে তারা নত হয়েছিল। যেমন নুব্জ হয়ে গিয়েছিল ইংরেজ দাসত্বের কাছে সে মেরুদন্ড আর সোজা হয়নি। বিধান রায়কে যতই পশ্চিমবাংলার রূপকার বলা হোক, আসলে তিনি বাঙালি উদ্বাস্তুদের নানামুখী সর্বনাশের নেপয্য নায়ক। ভারতীয সমাজের শ্রেণী বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে বাংলার ভাষাচিন্তা সংস্কৃতি চিন্তা দেশভাগ রবীন্দ্রপ্রেম এই বর্ণ স্বার্য শেষ পর্যন্ত জয়যুক্ত হয়ছে তাই নেতাজির দাদা শরৎ বোসদের বাংলাভাগেরবিরোধিতা ধোপে টেকেনি, জয়ী হয়েছে বাংলা ভাগ পন্থী সামন্ততান্ত্রিক কংগ্রেস মুসলিম লীগ , হিন্দু মহাসভার বাঙালি নেতৃত্বই। অন্য রাজনৈতিক দলেরও তাতে ছিল সহযোগ। অন্তত দৃঢ় বিরোধিতার তথ্য পাই না।

বাংলা ভাগ না করলে ক্ষমতা উচ্চবর্ণের বাঙ্গালির হাতছাড়া হয়ে চলে যাবে ফজলুল হক, যোগেন মণ্ডল, বীরেন শাসমল কিংবা রাজবংশী নেতা পঞ্চানন ঠাকুরের হাতে। তাই ডান বাম সব দলই বাংলা ভাগ করে।

নীতীশ বিশ্বাস লিখছেন, আর একটি তথ্য জানাই , উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর তথা উধমনগরের দীনেশপুর নগর পালিকার প্রাক্তন সভাপতি কংগ্রেস নেতা প্রয়াত চিত্তরঞ্জন রাহা ও তাঁর দাদা সুধা রঞ্জন রাহার দেওয়া তথ্য থেকে: ১৯৫২ সাল নদীয়ায় ক্যাম্প থেকে ওদের তুলে এনে ফেলে দেওয়া হল নৈনিতালের গভীর জঙ্গলে। খাদ্য বাসস্থান কিছু নেই। নেই লোক বসতি পর্যন্ত। পরে দিনে দিনে ধীরে ধীরে মানুষ সেখানে বসবাস করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তারা জীবন যুদ্ধে আজ জয়ীও হয়েছেন। আজ তাঁরা নতুনভাবে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন। এই যে যাদের বাংলার বাইরে এক ভয়ানক মৃত্যু যাত্রায় পাঠানো হয়েছিল তারা ৯০ শতাংশ শ্রমজীবী। আর বর্ণ হিন্দু জায়গা পেল কলকাতা ও তার বৃহত্তর পরিধির মধ্যে। তারাই আজ রাজ্যের ভাগ্য বিধাতা। আর নানা রাজ্যে উদ্বাস্তুরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আজও দেওয়া হয়নি জমির পাট্টাসহ তাদের নাগরিক পত্র এবং জাতিপত্র ।( পৃষ্ঠা ১০)।

এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে রাজনৈতিক লালসার শিকার হলেন ওপার বাংলার বাঙালি।

দামাল বাংলা সংগঠনের পক্ষে মানিক ফকির যখন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে শর্ত সাপেক্ষে তৃণমূল দলকে সমর্থনের কথা বলছেন তখন নীতীশ বিশ্বাস লিখেছেন তখন বাজপেয়ীজীর নেতৃত্বে এন ডি এ সরকার। উপ প্রধানমন্ত্রী আদবানিজী, (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও ) এবং সে মন্ত্রী সভার বাংলার প্রতিনিধি , অগ্নিকন্যা মমতা দেবী। তাদের মমতাহীন পদক্ষেপে বাঙালি উদ্বাস্তুরা সেদিন অস্তিত্ব হীনতার চরম আঘাতের মুখোমুখি। আমরা রাজনৈতিক দল, সরকারের নানা নেতা নেত্রীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি, আমাদের বন্ধুরা সব দলের নেতাদেরও বলেছেন। কিন্তু এ দাবা খেলার বোড়ে হল দলিতেরা। মনুবাদী রাজা উজিররা তা কানে দেননি। তাই আমাদের সেদিনের আশঙ্কা আজ ভয়ানক বিপদ হিসেবে নেমে এসেছে, আসছে, আরওআসবে যদি না প্রতিরোধ করতে পারা যায়। যা মোদি সরকারের আমলে এন আর সি র নামে মস্তকে দংশন করছে। ( পৃষ্ঠা ১১)

বিজ্ঞাপন

গবেষক নীতিশ বিশ্বাস তাঁর ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু বইতে লিখেছেন,১৯৪৭ সাল থেকে আজকের দূরত্ব সাত দশকের। অর্থাৎ তিন চারপ্রজন্মের ব্যবধান। তখন যে সংসারে ৫ জন লোক ছিল আজ তা ২৫/৩০ থেকে ৪০ জন। তাই তখন যে উদ্বাস্তুরা ভারতে এসেছিলেন তার সংখ্যা যদি ৫০ লক্ষ হয়ে থাকে তা আজ তিন কোটির কম নয়। আর তখন অবিচার যা ছিল ১০০ গুণ আজ তা লক্ষ গুণ। কে সেই পুরানো পাপের পরিমাপ করতে পারবে? কিন্তু যে সমস্যাটির সৃষ্টি রাজনৈতিক কারণে তা যদি দূর করতে হয় তাও করতে হবে রাজনৈতিক ভাবে। কেবল সামাজিক সংগঠণের ক্ষমতার সীমায় তার সমাধান নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগ পর্বে যে উদ্বাস্তু সমিতিগুলি গড়ে উঠেছিল তার প্রধান সংগঠনের নাম কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ( ইউসিআরসি ১৯৫০ আগস্ট ১৩)। তাঁরা যেসব সমীক্ষা করেছেন তা থেকে কিছু তথ্য উদ্ধৃতি করি।১৯৭১ সালে যা ছিল ৭৭লক্ষের মতো ১৯৮১ সালে তাকে ৮০ লক্ষধরলে বর্তমানে সে হিসেবে সংখ্যা ১ কোটির বেশী তো হবেই। অন্যদিকে ১৯৫১ র হিসাবে পূর্ব বাংলায় হিন্দু জনসংখ্যা ২২ শতাংশ ছিল যা ২০১১ সালে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। উদ্বাস্তু আগমনের প্রথম পর্বে বামপন্থী সংগঠনগুলি দাবি করতো, বাংলায় সব উদ্বাস্তু রাখতে হবে, তখন কংগ্রেস তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তা করেনি, বিশেষ করে যখনশ্রমজীবীবাঙালি হিন্দুরা দেশ ছেড়ে এখানে এসেছেন, তাদের নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে সারা ভারতে।

বাজপেয়ী আমলে উদ্বাস্তু বিরোধী ভূমিকাকে সমর্থন করেন মমতা বন্দোপাধ্যায় ।অভিযোগ গবেষক নীতীশ বিশ্বাসের।

বিজ্ঞাপন

কলকাতার উচ্চবর্ণের বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে লেখকের বিস্ফোরক তথ্য আগামী শনিবার ও রবিবার। মতুয়া সমাজের একাংশ সি এ এ লাগু হওয়ায় খুব খুশি। কি বুঝেছেন তাঁরা? সব আলোচনায় থাকবে আগামী সপ্তাহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *