সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: নির্ধারিত সময় ছিল বেলা দুটো। কিন্তু কলকাতা প্রেস ক্লাবের মিট দ্য প্রেসে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এলেন প্রায় একঘন্টা পর। এসেই অবশ্য দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। সোজা দুর্গাপুরের অমিত শাহের জনসভা থেকে আসছেন। পথে ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা যান । যথারীতি প্রেস ক্লাব নেতাকে স্মারক ও পুষ্প স্তবক দিয়ে সম্বর্ধনা দেয়। প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর অনুষ্ঠানের সূচনা করে মাইক তুলে দেন সুকান্ত মজুমদারের হাতে। সুকান্ত বাবুও পাল্টা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তাঁকে আমন্ত্রণ করার জন্য। সুকান্ত বাবুর কয়েক বছরের রাজনৈতিক জীবন। কিন্তু প্রেস ক্লাবে উপস্থিত মিডিয়ার প্রতিনিধিদের প্রচুর সংখ্যায় উপস্থিতি প্রমাণ করে এরাজ্যে বিজেপি এখন গুরুত্বপূর্ণ দল হয়ে শুধু ওঠেনি দলের রাজ্য সভাপতি হিসেবে সুকান্ত মজুমদার স্টার রাজনীতিকদের একজন।
যথারীতি লোকসভা নির্বাচনে মানুষ কেন দলে দলে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে কেন মানুষ মোদীজির গ্যারেন্টিতে আস্থা রাখছেন তার ব্যাখ্যা করলেন। তবে জেলায় জেলায় দলের বিদ্রোহী নেতা কর্মীরা কেন মোদীজির গ্যারেন্টি তে আস্থা না রেখে গোঁজ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন সে কথা বলতেই সুকান্ত বাবু একটু যেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন। গলার স্বর চড়িয়ে বলেন আপনারা কেন ওই বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা স্থির নিশ্চিত দার্জিলিং আসনে শুধু নয় উত্তরবঙ্গের ভোট হয়ে যাওয়া ছটি আসনই জয় করছি।বাঁকুড়া কেন্দ্রে যিনি আমাদের দলের প্রার্থী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়িয়েছেন তিনি আগেই দলবিরোধী কাজের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিল।পড়ে দলে নেওয়া হয়। আসলে দল বড় হচ্ছে। বয়:সন্ধি কালে কিছু সমস্যা হয়। বাংলায় তো দল এখনও সাবালক হয়নি। এই গোঁজ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এঁরা গুরুত্ব পেয়ে যাবেন।
সুকান্তবাবু আরও বললেন , লোকসভা নির্বাচনে তৃনমূলের প্রাপ্ত আসনের চেয়ে যদি একটি আসনও বেশি বিজেপি পায় তাহলে ২০২৬ পর্যন্ত রাজ্য সরকার টিকবে না।সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল তাহলে কি রাজ্যের সরকার ভেঙে দেবেন। সুকান্ত মজুমদার এবার সামলে ব্যাট চালালেন। বললেন পিসি ভাইপোর যদি ঝগড়া বাঁধে দল যদি দু টুকরো হয়, আমরা কি করব? মহারাষ্ট্রে কাকা ভাইপোর লড়াই, সেখানে আমাদের কি করার আছে? বিজেপি রাজ্য সভাপতি যে শুধু তৃণমূলকে এদিন আক্রমণ করেছেন তা নয়। তিনি রাজ্যের বেহাল দশার জন্য সি পি এমকেও দায়ী করেছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন টাকা নিয়ে চাকরি না দিলেও দলের কর্মীদের বেআইনি ভাবে বাম সরকার চাকরি দিয়েছে? আমার জেলা ও বালুরঘাট শহরের অনেককে আমি চিনি। আমাদের মূল শত্রু সি পি এম। মতাদর্শের লড়াই। এদেশে কমিউনিস্টদের আদর্শ বাইরে থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসতে হয়। এদিন বিজেপি নেতা বিজেপির ম্যানিফেস্টো থেকে কয়েকটি উল্লেখ করে বলেন আয়ুষ্মান স্কিম এ কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ৬০ শতাংশ, রাজ্যের ৪০ শতাংশ। কিন্তু রাজ্য এই প্রকল্প কার্যকর করেনি। ফলে রাজ্যের মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। এবার তৃতীয়বারের সরকার গঠিত হতেই আয়ুষ্মান প্রকল্পে আমরা ৭০ বছরের উর্ধ্বে রাজ্যের প্রবীণ মানুষদের ৫ লক্ষ টাকার বিমা দেব। রাজ্য সরকারের ৪০ শতাংশ আমরাই দিয়ে দেব।কিন্তু প্রবীণদের রেলে জে ছাড় মিলত কোভিড অবস্থার পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হল কেন সে ব্যাপারে কিছু বললেন না। সন্দেশখালি ভিডিও নিয়ে বিশেষ কিছু বললেন না। শুধু জানালেন তদন্ত চলছে। সত্যি সামনে আসবে। মহিলা, শিশু, কৃষকদের জন্য মোদী সরকার আগামী দিনে কি কি উন্নয়ন করবে তার তালিকা দিলেন। আত্মনির্ভর ভারত গড়তে বিজেপি কি কি ব্যবস্থা নিচ্ছে তার ব্যাখ্যাও দিলেন। সবশেষে কিন্তু হাতে রইল পেন্সিল। গ্যারান্টির প্রতি মানুষের আস্থা কতটা তার প্রমাণ মিলবে ৪ জুন। ফল প্রকাশের পর।