টলিউডের বড় পর্দায় অভিষেক হতে চলেছে নবাগতা তামান্না সুলতানার

শ্রীজিৎ চট্টরাজ: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জহরলাল নেহেরুর আমলে নতুন ভারত নির্মাণের প্রথম স্বপ্নে দেশজ সৌন্দর্য রক্ষার পণ্য উৎপাদনে ভারত তৈরি হয়। নেহেরুর অনুরোধের জামসেদজি টাটা সৌন্দর্য্যের দেবী লক্ষ্মীর নামে প্রসাধনী ব্যবসা শুরু করেন।১৯৬৬ তে টাটার লক্ষ্মী হিন্দুস্থান লিভারের হাতে পড়ে ল্যাকমে হয়। নামে নাকি অনেক কিছু এসে যায়। তাই সাবেকি লক্ষ্মী যখন ল্যাকমে হলো জনপ্রিয়তা বেড়েছে বই কমেনি।

ভারতীয় ফিল্মি ইতিহাসে ইউসুফ খান নাম গোপন করে দিলীপকুমার নামে খ্যাতির কুড়োলেন।সিনেপ্রেমিডওয়েট কাছে শিল্পী সত্ত্বা গুরুত্ব পেয়েছে। ধর্ম নয়। ৬০/৭০ এর দশকে মুম্বাই ছিল ইন্দ্রের । জিতেন্দ্র ধর্মেন্দ্র,রাজেন্দ্র। এখন তো খানের যুগ। শাহরুখ, সালমান আমির।কিন্তু পশ্চিমবাংলায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংকীর্ণতা না থাকলেও মুসলিম অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের দেখা মেলেনি। পশ্চিমবাংলার সিনে দুনিয়া প্রথম মুসলিম নারী বনানী চৌধুরীকে পেয়েছে প্রথম ১৯৪৬ সালে। যদিও তিনিও তখন তাঁর মুসলিম নাম বেগম আনোয়ারা নাহার চৌধুরী ব্যবহার করেননি। পাশাপশি মুসলিম সমাজের রক্ষনশীলতাকে জয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা কম সাহসের ছিল না। আজ কিন্তু সময় পাল্টেছে। এপার বাংলায় বিখ্যাত হয়েছেন নুসরত জাহান। প্রাক্তন সাংসদও বটে। কিন্তু অভিনয়ে তাঁকে কত নম্বর দেওয়া যায় সেটা দর্শকেদের বিচারের বিষয়।

মুম্বাই দুনিয়ায় ব্রাহ্মণ পরিবারের শর্মিলা ঠাকুর পতৌদি নবাবকে বিয়ের সূত্রে মুসলিম হয়েছেন বেগম আয়েশা সুলতানা নামে। এই মুহূর্তে কলকাতাও পেতে চলেছে নবাগতা এক অভিনেত্রী তামান্না সুলতানাকে। পারিবারিক ঐতিহ্য, আইনি পেশায়। কিন্তু ছোট থেকেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচ , অভিনয়ের চেষ্টা, দেব -কোয়েলের পাগলু দেখে পাগলা হওয়া। তারপর ? তার আর পর নেই। সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা বঙ্গকন্যা তামান্না সুলতানার। বাড়ির পরিবেশ যেহেতু আইনি পেশার সঙ্গে যুক্ত, স্বাভাবিকভাবেই প্রচ্ছন্ন একটা চাপ ছিল জাজ হতে হবে। কৈশোর পেরিয়ে হেরিটেজ স্কুল। সেখানে প্যাশন হয়ে উঠল ফ্যাশন, মডেলিং, বার্ষিক অনুষ্ঠানে নাচ,অভিনয়। সে অর্থে তাম্মানার কোনো গুরু নেই। তামান্নার তামান্না ছিল শুধু নিজেকে গড়ে তোলা । এভাবেই একদিন যোগাযোগ। মডেলিংয়ের র‍্যাম্পে নামা। খ্যাতি যশ আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বি এ, এল এল বি স্তর পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য দুবাই যাওয়া। কিন্তু মন চল নিজ নিকেতনে। শরীরের তন্তুতে তন্তুতে, শিরা উপশিরায় যখন নাচ, অভিনয়, মডেলিং তখন আইনি প্যাঁচে মন কি ধরা দেয়?

একান্ত সাক্ষাৎকারে তামান্না জানালেন, দুবাইতে পড়াশোনার জন্য গেলেও লোভনীয় চাকরি পেয়ে যাই এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায়। সেখানে ইভেন্টের কাছে ইতি উতি ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু বিদেশে বেশিদিন থাকা হলো না। ফিরেই এলাম নিজের শহর কলকাতায়। তবে বাড়ির ঐতিহ্যের বিপরীত স্রোতে ভাসতে যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছেন তিনি আমার ঠাকুমা। যাঁকে আমি মাম্মি বলে ডাকি। প্রথাগত পথের বাইরে পথ চলার ক্ষেত্রে মা,বাবা ও বিখ্যাত আইনবিদ পিসেমশাইকে রাজি করানোর ভার নেন ঠাকুমা।এখন অবশ্য পারিবারিক সমর্থন পাচ্ছি পুরোটাই।

তামান্না জানালেন , কাজের সূত্রে মুম্বাই গিয়ে যেমন কাজ করেছি -তেমন একটা অনলাইন নাটকের অভিনয় কোর্স করেছি। অনুপম খেরের একটা এক মাসের অভিনয় কোর্সও করেছি। অভিনয়ে অভিব্যক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে আমি সাহায্য নিচ্ছি নিভিন্ন সিনেমার বিখ্যাত শিল্পীদের অভিনয় দেখে।বিশেষত বাংলা ছবি। আমার ঠাকুমা তো গ্রেট ফ্যান উত্তমকুমারের। ঠাকুমার সঙ্গে বসে উত্তমকুমারকে চেনার চেষ্টা করি। ইদানিংকালের চর্চার বিষয় “মি টু “সম্পর্কে সাংবাদিকদের উত্তরে তাম্মানা জানান , পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় সবক্ষেত্রেই নারী শোষণের একটা ব্যাপার আছে। বিনোদন জগৎ বলে মানুষের কাছে বিষয়টা বেশি আলোচিত হয়। কোন ক্ষেত্রে নারী শোষণ হচ্ছে না? তবে এখন মেয়েরা আগের চেয়ে একদিকে যেমন নিজেদের যোগ্যতাকে বাড়িয়ে তুলত পেরেছে, তেমনই রুখে দাঁড়াতেও সাহসী হয়েছে। আসলে দুনিয়ায় যেমন কিছু খারাপ লোক আছে, তেমন ভালো লোকও তো আছে । নিজের বৌদ্ধিক চেতনা দিয়ে বুঝে নিতে হবে।জানেন তো, মেয়েদের অনুভূতি খুবই প্রখর। আমরা বুঝতে পারি সাদা কালোর পার্থক্য।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মানুষকে বিশ্বাস করে অনেক ঠকেছি তাই আমার পরিচিতি বাড়লেও কিন্তু বন্ধু বলতে তিনজন। এঁদের একজন পুরুষ। আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট বলতে পারেন। কাজের সময়টুকু ছাড়া বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে আমি বিশ্বকে খুঁজে পাই। অভিনয়, নাচ অনুশীলনে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাই। অনেকে সিরিয়ালে আসব কি না বলেন। আসলে আমি খুব চঞ্চল। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। তাই দিনের পর দিন একটি কাজে সময় ধরে চলা বোধহয় আমার জন্য নয়। তামান্নার কাজে প্রশ্ন ছিল , ইদানিং বেশি কিছু বছর ধরে একদল শিল্পী বাংলা উচ্চারণে রফলার ব্যবহার করেন না। স, শ ষ উচ্চারণ করতে পারেন না , ফলে সোশাল মিডিয়ায় ট্রোল হন। অনেক বিখ্যাত শিল্পীও আছেন এই দলে এক নম্বর দিদি তোর টিভির পর্দায় বলেন চায়াচুর। এসব ব্যাপারে কতটা সতর্ক তামান্ন? একগাল এসের তামান্নার জবাব, ঠিকই। আমি জানি , ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনার জন্য বাংলা উচ্চারণে কিছুটা দুর্বলতা থাকতে পারে। তাই খুব সতর্ক, ট্রোলের শিকার যাতে না হতে হয়। ত্রুটি শুধরে নিচ্ছি।
অবসর বলতে তামান্নার কি? তামান্নার জবাব, খেতে বড্ড ভালবাসি। রান্নাও করতে পারি সবরকম। তবে বাড়ির সবাই আমার চাইনিজ খাবারের স্বীকৃতি দেয় বেশি। তবে খেতে ভালবাসি যেমন, তেমন ব্যালেন্স করি দিনে কম পক্ষে চারঘণ্টা নাচের প্র্যাকটিস করে। সঙ্গে ওয়ার্কআউট তো কিছু আছেই। এবার পুজোয় একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজে করেছি। আজই সেটা রিলিজ করেছে। “বলো দুগ্গা মা”। ওসিয়ান পিকচার্স এর এই মিউজিক ভিডিওর সঙ্গে আমার মনে হয় মানুষ একাত্ম হতে পারবেন। কয়েকটা দিন সময় দিন। খুব শিগগির আপনাদের কাছে জানাবো কয়েকটি বড় পর্দার ছবির কথা। এসেছি যখন , প্রমাণ করে ছাড়ব হাম কিসিসে কম নেহি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *