*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ: রবীন্দ্রনাথ শেষের কবিতায় বলেছেন, ফ্যাশন হলো মুখোশ, স্টাইলট মুখশ্রী। যৌবনের একটা সময়ে স্যুট পড়তেন । বয়স বাড়ার সঙ্গে এই পোশাকে বৈরাগ্য। শান্তিনিকেতনে পোশাক ছিল সূতির লুঙ্গি আর ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি। জন্মদিনের পোশাক ছিল কোঁচানো ধুতি আর গিলে করা পাঞ্জাবি। বাটিকের উত্তরীয়। পায়ে কটকি চটি নয়ত আগ্রার নাগরা জুতো। উপাসনায় গরদের পাঞ্জাবি। ঋতু বদলের সঙ্গে পাল্টাতো তাঁর পোশাকের রংও। বিভিন্ন রঙের জোব্বাতে আমরা তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত। সেটিও ছিল আজকের ফিউশন। বাউলদের জোব্বা আর রবীন্দ্রনাথের কল্পনার আলখাল্লা মিলে এক নব রূপ।এতো গেল পুরুষদের কথা। মেয়েদের পোশাকেও ছিল অভিনবত্ব। শাড়ি শব্দের উৎস শাটি শব্দ থেকে। শাটি পালি ভাষার। অর্থাৎ কাপড়ের টুকরো। একসময় যখন মেয়েদের বক্ষ আবরণী এল সেই পোশাকের নাম হয় স্তনপট্ট। সেখান থেকে চোলি। আর চোলিকে পিছে ক্যায়া হ্যায় প্রশ্নের উৎপত্তি। চণ্ডীদাস লিখেছিলেন নীল শাড়ি মোহন করি উচ্ছলিতে দেখি পাশ। কি আর পরানে সপিনু চরণে দাস করি মনে আশ। রবীন্দ্রনাথের বড় বৌদি জ্ঞানদানন্দিনী দেবী স্বামী সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে মুম্বাই গিয়ে নতুন এক সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ করলেন। সিন্ধি নারীর শাড়ি পড়ার ধরণ পছন্দ হল। সেকালের ব্রাহ্ম সমাজের শিক্ষিত মেয়েদের ফ্যাশন ও স্টাইল হয়ে ওঠে নতুন ধরণের শাড়ি পড়া। নাম ছিল ব্রাহ্মীকা শাড়ি। এস ওয়াজেদ আলীর কথা ধার করে বলা যায় সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ১৯৬০ থেকে হিন্দি সিনেমার নায়ক নায়িকার হাত ধরে ফ্যাশন ও স্টাইল মানুষ রপ্ত করতে শুরু করে। পোশাক থেকে চুল। চুল থেকে অলঙ্কার। তবে সংখ্যাধিক্য ছিল মেয়েদেরই। এরপর পাশ্চাত্যের প্রভাব কাটিয়ে মানুষ এখন সনাতনী ও আধুনিকতার ফিউশনে মজেছে।পোশাকের পাশে নিজেকে জরা হাটকে প্রমাণ করে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মধ্যে মেলে অস্তিত্বের নিরাপত্তা। তাই পোশাক শিল্পীর কদর বাড়ছে দেশজুড়ে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথাই ধরা যাক। চায়েওলা প্রধানমন্ত্রী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কতবার কি কি পোশাক পরিবর্তন করেন সেদিকেও নজর রাখেন তাঁর গুণমুগ্ধরা। এই মুহুর্তে তো এক নারী পোশাক শিল্পী রাজনীতির ময়দানে দাপটে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছেন। বাঙালি এখন রুটি রুজির তাগিদে ফ্যাশন ডিজাইনারের কোর্স করছে লক্ষাধিক ব্যয়ে। গত ২৪ বছর ধরে পোশাক শিল্পী শান্তনু গুহ ঠাকুরতা কাজ করছেন তাঁর নান্দনিক নির্মাণ যজ্ঞে। পুরুষদের পাঞ্জাবি, ধুতি, চাদর, উত্তরীয় সঙ্গে মেয়েদের শাড়ি সহ বিভিন্ন পোশাক। আদ্যপান্ত নিপাট ভদ্রলোক। পোশাকে কোনো ডিসকাউন্টে তিনি বিশ্বাসী নন। তাঁর মতে ডিসকাউন্ট মানে গ্রাহক ঠকানো। দাম বাড়িয়ে দাম কমানো। আমার কাজটা রুটি রুজির সন্দেহ নেই, কিন্তু শৈল্পিক সত্ত্বাকে আমি আগে রাখি। পোশাকের গুণমান বজায় রাখতে গেলে অন লাইনের সস্তা জিনিস আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবেসব ধরণের আর্থিক ক্ষমতার মানুষের কথা ভেবেই আমার নির্মাণ। এমন কোনো উপাদান আমার পোশাক বা কস্টিউম জুয়েলারিতে নেই যা পরিবেশ দূষণ করে।স্বাস্থ্যেরও কোনো ক্ষতি হয় না।
এতসব কথা সাংবাদিকদের জানালেন শান্তনু গুহ ঠাকুরতা সোমবার বিকেলে তাঁর সল্টলেকের বাসভবনের স্টুডিওতে। তাঁর ব্র্যান্ডের নাম লেবেল শান্তনু ব্র্যান্ড। এদিন তিনি নবতম সংযোজন করলেন কলকাতানামা ব্রান্ড। কলকাতা মোটিভকে সামনে রেখে সহযোগী উপেন্দ্র বিনকে নিয়ে নতুন নির্মাণের বোধন । উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা ব্যানার্জি ও অন্যান্য কলকাতার পরিচিত মডেলরা। খুব শিগগির ফেসবুকে তাঁর নির্মাণ নিয়ে আসতে চলেছেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর নান্দনিক বোধ তাঁকে পরিণত করেছে গত ২৪ বছর ধরে।শুধু এদেশে নয়, বিদেশেও শান্তুনু
গুহ ঠাকুরতার সৃষ্টি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।